নায়ক থেকে হয়ে গিয়েছিলেন খলনায়ক। বলিউডে প্রথম সারির নায়ক হওয়ার দৌড়ে থেকেও নানা বিতর্কের জেরে সেই দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন। আবার নায়কোচিত প্রত্যাবর্তন করে দেখিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর কব্জির জোর। ১৯৮১ সালে ‘রকি’ ছবির হাত ধরে যে নায়ককে পেয়েছিল বি-টাউন, নানা ঝড়ঝাপটার পর ২০০৩ সালে সেই নায়কই ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’-এর হাত ধরে রুপোলি পর্দা কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন।
অমিতাভ জমানার পর পর বলিউডে যে কয়েক জন অ্যাকশন হিরোকে পাওয়া গিয়েছিল, তাঁদের মধ্যে অন্যতম সঞ্জয় দত্ত। সঞ্জয়ের অ্যাকশন অবতারে সেই সময় মজেছিলেন তাঁর ভক্তরা।
পর্দার এই অ্যাকশন হিরোই এক বার শুটিংয়ের সেটে তরোয়াল হাতে এমন ভেল্কি দেখিয়েছিলেন যে, সেই সময় সামনে থাকা সকলে ভয়ে সিঁটিয়ে গিয়েছিলেন। সঞ্জয়ের সেই অবতার দেখে মনে হয়েছিল যেন তিনি বাস্তবে ‘অ্যাকশন হিরো’।
১৯৯০ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘জিনে দো’ ছবি। এই ছবির শুটিং করতে গিয়েই বিপাকে পড়েছিলেন সঞ্জয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় শেষমেশ তরোয়াল হাতে তেড়ে যেতে হয়েছিল নায়ককে। কী ঘটেছিল সে দিন?
মহারাষ্ট্রের নাসিকে ‘জিনে দো’ ছবির শুটিং করছিলেন সঞ্জয়। ছবির অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশের শুটিং হয়েছিল ওই শহরের ঘিঞ্জি এলাকায়। ছবির শুটিংয়ের সময় জনতার ভিড় সামলানো একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় ছবি নির্মাতাদের। আর সেই শুটিং যদি সঞ্জয়ের মতো বড় তারকার হয়, তা বলে তো ভিড়ের চেহারাটা আরও বড় হয়।
কিন্তু সে দিন নাসিকে ছবির শুটিংয়ে যাঁরা ভিড় জমিয়েছিলেন, তাঁরা সঞ্জয়ের খুব একটা ভক্ত ছিলেন না। শুটিং ভন্ডুল করাই যেন তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল। যখনই শট দিতেন, তখনই সঞ্জয়কে দেখে জনতা টিটকিরি কাটত।
এমনকি, সঞ্জয়ের অভিনয়ের গুণমান নিয়েও তাঁরা টিপ্পনী কাটতেন। শুধু তাই নয়, সঞ্জয়ের ব্যক্তিগত জীবন, পরিবার নিয়েও প্রকাশ্যে কটাক্ষ করতেন। এমনকি, অভিনেত্রীরাও ওই জনতার ভিড়ের থেকে রেহাই পেতেন না।
ওই দলটি সঞ্জয়কে নিয়ম করে বিরক্ত করত। অভিনেতাকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ জানাত যে,পর্দায় মস্তানি না করে বাস্তবে তাদের সঙ্গে লড়াই করুন সঞ্জয়।
শুটিংয়ের সেটে রোজ রোজ এই ধরনের কথা শোনার কারণে কিছুতেই অভিনয়ে মন দিতে পারছিলেন না সঞ্জয়। শুটিং সেরে হোটেলে যাওয়ার পরও ওই যুবকদের কথা তাঁর কানে বাজত।
বেশ কয়েক দিন ধরে ওই এলাকায় শুটিং চলছিল। প্রথম দিনের তুলনায় সঞ্জয় দেখলেন শুটিংয়ের দ্বিতীয় দিনে জনতার ওই ভিড়টা আরও বাড়তে থাকে। যার ফলে শুটিং করা রীতিমতো মুশকিল হয়ে গিয়েছিল সঞ্জয়ের পক্ষে।
এই পরিস্থিতির মধ্যে কোনওরকমে এক দিন শুটিং শেষ করেন সঞ্জয়। কিন্তু টিটকিরি, কুমন্তব্য কিছুতেই ভুলতে পারছিলেন না অভিনেতা। হোটেলে ফিরে স্থির করেন, এ সব বন্ধ করতে তাঁকে কিছু একটা করতেই হবে।
এর পরের দিন শুটিংয়ে নির্ধারিত সময়ের কিছুটা আগে সেটে পৌঁছে যান সঞ্জয়। ওই দলের ৩ যুবকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি।
কিছু ক্ষণ পরেই ওই ৩ যুবক গত কয়েক দিনের মতো একই রকম ভাবে টিটিকরি করতে থাকলেন। তাঁদের সঙ্গে লড়াই করার জন্য সঞ্জয়কে চ্যালেঞ্জ ছোড়েন তাঁরা।
যুবকদের এই চ্যালেঞ্জের জন্য তৈরি ছিলেন সঞ্জয়। এ বার আর যুবকদের কথা উপেক্ষা করেননি। চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে শুটিং সেটের বাইরে পা রাখেন সঞ্জয়।
ওই যুবকরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তরোয়াল বার করে তা হাতে নেন সঞ্জয়। তার পর পর্দার সেই নায়কোচিত কায়দায় নিজের জামা খুলে ওই যুবকদের দিকে হুঙ্কার ছাড়েন অভিনেতা। তরোয়াল হাতে তখন পর্দা ছেড়ে যেন বাস্তবে ‘অ্যাকশন হিরো’ হিসাবে অবতীর্ণ সঞ্জয়।
যুবকদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারির সুরে সঞ্জয় বলেন যে, হিম্মত থাকলে ওই যুবকরা তাঁর সামনে এসে দাঁড়াক। কাউকে তিনি রেয়াত করবেন না।
সঞ্জয়ের এ হেন অবতার দেখে কয়েক মুহূর্তে নীরব হয়ে যায় চারদিক। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে দৌড়ে পালান ওই যুবকরা। তার পর ধীরেসুস্থে শুটিং শুরু করেন সঞ্জয়। আর এ ভাবেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছিলেন পর্দার নায়ক।