হার্ট অ্যাটাক, এমন এক সমস্যা যা যে কোনও সময়ে মানুষের প্রাণ পর্যন্ত কেড়ে নিতে পারে। তাই এর থেকে বাঁচতে সবার আগে প্রয়োজন একটি স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের। তবে তার পরেও অনেক সময় আমাদের প্রিয়জন আক্রান্ত হন হার্ট অ্যাটাকে। একটি কথা মাথায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ, হার্ট অ্যাটাকে সবসময় দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন।
পরিবারের কারও হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হলে অনেকেরই মাথা কাজ করে না। অথচ এই সময়েই মাথা ঠান্ডা রাখা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। ঠান্ডা মাথায় রোগীকে যত দ্রুত ‘ফার্স্ট এড’ দিতে পারবেন, ঝুঁকি তত কমবে। এই সময় ঘাবড়ে গিয়ে দেরি করে ফেললে কিন্তু বিপদ আরও বাড়বে। তাই জেনে নিন, কী করবেন জরুরি সময়ে।
কেবল বুকে ব্যাথা মানেই কিন্তু হার্ট অ্যাটাক নয়। আদৌ হার্ট অ্যাটাক হয়েছে কি না তা বুঝতে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলি ভাল করে জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ— বুকে ক্রমাগত ব্যথা, যা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে চোয়াল, কাঁধ, দাঁত, গলা, হাতে। হঠাৎ হৃদ্স্পন্দন খুব বেড়ে যাওয়া বা একেবারে কমে যাওয়া। অতিরিক্ত ঘাম হওয়া এই সবই হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে।
বুকের মাঝখানে অস্বস্তিকর চাপ অনুভব করা, ভারী ভারী ভাব। শ্বাস ছোট হয়ে আসা। মাথা ঘোরা, জ্ঞান হারিয়ে ফেলা যেমন রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার বা কমে যাওয়ার লক্ষণ তেমনই হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে বমি বমি ভাব।
এই অবস্থায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া জরুরি। অবিলম্বে অ্যাম্বু্ল্যান্স ডাকুন এবং রোগীকে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যান বা চিকিৎসককে ফোন করুন।
বাড়িতে নিজের গাড়ি থাকলে নিজেরাও নিয়ে যেতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন, যেন রোগীর সঙ্গে সারা ক্ষণ কেউ থাকেন।
অ্যাম্বুল্যান্স বা চিকিৎসক আসার আগে কী ভাবে প্রাথমিক পর্যায় শুশ্রুষা করবেন, তা জানালেন চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী। চিকিৎসকের মতে, ‘‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ক্ষেত্রে প্রথম এক ঘণ্টা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। তার পর যত সময় যাবে, রোগীর মস্তিষ্কে প্রভাব পড়বে। এই গোল্ডেন আওয়ারের মধ্যে মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছনো সম্ভব না-ও হতে পারে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে কিছু ব্যবস্থা নিলেই রোগীকে বাঁচানো সম্ভব।’’
এই সময় রোগী শক পেতে পারেন। জীবনের ঝুঁকি রয়েছে, বুঝতে পারলে শক পাওয়া খুব স্বাভাবিক। প্রথমেই রোগীকে শান্ত অবস্থায় নিয়ে আসুন।
রোগীর যদি অ্যাসপিরিনে অ্যালার্জি না থাকে, তবে অ্যাসপিরিন দিন। এই সময় অ্যাসপিরিন ওষুধ চিবিয়ে খেতে পারলে ধাক্কা অনেকটাই সামলানো যাবে। রোগীর ওষুধ খাওয়ার মতো পরিস্থিতি না থাকলে তাঁর জিভের তলায় একটি সর্বিট্রেট রেখে দিতে পারেন।
ক্রমাগত শ্বাস, পালস রেট ও রোগী কেমন সাড়া দিচ্ছেন, সে দিকে লক্ষ রাখুন। জিভটাও খেয়াল করে দেখুন, কোনও ভাবে উল্টে আছে কি না। তেমন হলে কফ বা লালা আঙুল দিয়ে বার করে শ্বাস চলাচলের পথ মসৃণ করতে হবে। জিভও সোজা করে দিতে হবে। প্রয়োজনে মুখে চামচ ঢুকিয়ে দিতে পারেন।
রোগীকে বাঁ পাশ ফিরিয়ে শুইয়ে রাখুন। বাঁ হাতের উপর মাথা দিয়ে ডান হাতটি স্বাভাবিক রাখুন। ডান দিকের পা মুড়ে বুকের কাছে ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করুন।
এই সময় রোগী যাতে ঠিক মতো শ্বাস নিতে পারেন, তা দেখা ভীষণ জরুরি। রোগীর ঘরের জানলা-দরজা খোলা রাখুন, রোগীর চারপাশে খুব বেশি ভিড় করবেন না।