অফিসের বসের কড়া নির্দেশ কিংবা হঠাৎই উপহার পাওয়ার হাতছানি— ফোনে এমন মেসেজ পেলেই চমকে উঠবেন না, বা আনন্দে আহ্লাদিত হবেন না। কারণ, আপনি জানেনও না যে, আদৌ কে বা কারা ওই মেসেজ আপনার ফোনে পাঠিয়েছে।
অবাক হচ্ছেন? বিস্ময়ের ঘোর কাটলে জানবেন যে, গোটা বিশ্বেই বিভিন্ন নামজাদা সংস্থা, নামজাদা ব্যক্তির নাম ভাঁড়িয়ে এমন অজস্র মেসেজ পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন জনকে।
মেসেজগুলির বৈশিষ্ট্য এই যে, এর সবগুলিতেই ফোন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন- প্যান কার্ড নম্বর, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর, আধার নম্বর চাওয়া হয়। এগুলি যে ফাঁদ, তা অনেক সময়ে টেরই পান না ফোনের এ প্রান্তে থাকা মানুষেরা।
সাইবার প্রতাড়নার এই ছককে হাল আমলে বলা হচ্ছে ‘স্মিশিং’। অন্য সাইবার জালিয়াতির সঙ্গে এর মূলগত প্রভেদ এই যে, এ ক্ষেত্রে কেবল মেসেজ পাঠিয়েই প্রতারণার ফাঁদ পাতে ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তিরা।
কিন্তু কী ভাবে আলাদা করবেন এমন ফাঁদ পাতা মেসেজগুলিকে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত মেসেজগুলির বয়ান দেখে। প্রতিটি বিষয়েই বার্তা প্রেরকের ‘তাড়াহুড়ো’ এখানে প্রণিধানযোগ্য বলছেন বিশেষজ্ঞেরা।
কখনও মেসেজ পাঠিয়ে বলা হয়, “আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সমস্যা দেখা দিয়েছে, দ্রুত আপনার ব্যক্তিগত কিছু তথ্য আমাদের জানান”, কখনও বলা হয়, “আপনার কর বা ইলেকট্রিক বিল বকেয়া রয়েছে। যদি শাস্তির কোপে পড়তে না চান, তবে মেসেজে থাকা লিঙ্কে ক্লিক করে দ্রুত অনলাইনে বকেয়া টাকা মিটিয়ে দিন।”
কখনও বা আরও ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করে বলা হয়, “আপনার সন্তান বাইরে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। তাঁর চিকিৎসার জন্য দ্রুত অনলাইনে টাকা পাঠান।” এই সব ক্ষেত্রে যাঁকে ফাঁদে ফেলা হচ্ছে, তাঁর সন্তান যে বাইরে থাকেন, তেমন খবর রাখেন প্রতারকেরা।
কখনও কখনও ফোনের এ পারে থাকা ব্যক্তিদের প্রলোভন দেখিয়ে বলা হয়, “আপনি একটু উপহার পেয়েছেন। উপহারটি পেতে হলে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন।”
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই ধরনের লিঙ্কে ক্লিক করলেই সর্বস্বান্ত হতে পারেন যে কেউ। কারণ, ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে মুহূর্তের মধ্যে টাকাপয়সা নিজেদের কব্জায় নিয়ে নিতে পারে প্রতারণাকারীরা। পাচার করতে পারে ব্যক্তিগত তথ্যও।
কিন্তু কী ভাবে এই ফাঁদ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে? বিশেষজ্ঞেরা অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহারকারীদের জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন যে, ফোনের মেসেজিং অ্যাপে গিয়ে ‘স্প্যাম প্রোটেকশন’ বা এই ধরনের মেসেজ বন্ধ করার জন্য যে অপশন দেওয়া হয়, তা চালু করে দিন।
আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, ফোনের ফিল্টার অপশনটি চালু রাখুন। যদি কোনও ফোনে ফিল্টার না থাকে, সে ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্য কয়েকটি অ্যাপ দিয়ে এই কাজ করা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা।
তবে প্রযুক্তিগত সমাধানসূত্র ছাড়াও নিজেদের বিচারবুদ্ধির উপর ভরসা রাখার উপর বেশি জোর দিতে চাইছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা বলছেন, সন্দেহজনক মেসেজ পেয়ে তড়িঘড়ি তাতে সাড়া দেবেন না। প্রয়োজনে সময় নিন, যাচাই করুন, কিন্তু অন্ধকারে ঢিল ছুড়বেন না।
যদিও ভুল করে এই ধরনের মেসেজের সঙ্গে থাকা লিঙ্কে ক্লিক করেও ফেলেন, তবে তড়িঘড়ি সমস্ত পাসওয়ার্ড বদলে ফেলুন। যে সংস্থার ফোন, সেই সংস্থাকে বিষয়টি জানান। যে ব্যাঙ্কে আপনার অ্যাকাউন্ট এবং ক্রেডিট কার্ড, সেই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলুন।
এখন প্রশ্ন হল, কেন এই ‘স্মিশিং’-এর ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, অনলাইনে বিকিকিনি বেড়েছে। সমাজমাধ্যম থেকে সম্ভাব্য ‘নিশানা’ যে ব্যক্তি হবেন, তাঁকে খুঁজে নিচ্ছে প্রতারকেরা।
তা ছাড়া কাউকে আপৎকালীন বার্তা বলে মেসেজ পাঠালে সচরাচর দ্রুত উত্তর মেলে। পরিসংখ্যান বলছে, ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই মেসেজের উত্তর তিন মাসের মধ্যে পাওয়া যায়। উল্টোদিকে ওই সময়ের মধ্যে মেলের উত্তর পাওয়া যায় মাত্র ২০ শতাংশ।