কেন্দ্রীয় বাজেটে নতুন কাঠামো অনুযায়ী আয়করে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছাড়ের কথা ঘোষণা করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। অন্য দিকে সুদের হার হ্রাস করেছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া বা আরবিআই। এই দু’য়ের প্রভাব ভারতীয় শেয়ার বাজারের উপর পড়বে বলে মনে করছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা।
ভারতে দু’টি প্রধান শেয়ার বাজার রয়েছে। একটির নাম বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ (বিএসই)। অপরটিকে সকলে চেনে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (এনএসই) হিসাবে। দু’টি বাজারের আলাদা আলাদা সূচক রয়েছে। সেগুলি হল সেনসেক্স এবং নিফটি।
দু’টি বাজারের মধ্যে এনএসইর সূচক হল নিফটি। ১৯৯৬ সালের ২১ এপ্রিল এর জন্ম। ইংরেজিতে ৫০-এর প্রতিশব্দ হল ফিফ্টি। ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে একে মিশিয়ে নিফটি শব্দটি তৈরি করা হয়ছে।
এনএসইতে লেনদেন হওয়া ১,৬০০টি স্টকের মধ্যে প্রথম ৫০টি ইক্যুইটিকে যে সূচকের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়, তাঁকেই বলে নিফটি। সংশ্লিষ্ট শেয়ারগুলি ভারতীয় অর্থনীতির ১২টি ক্ষেত্রে বিস্তৃত। সেগুলি হল, তথ্যপ্রযুক্তি, আর্থিক পরিষেবা, ভোগ্যপণ্য, বিনোদন ও গণমাধ্যম, ধাতু, ওষুধ, টেলি যোগাযোগ, সিমেন্ট, গাড়ি নির্মাণ, সার, শক্তি এবং অন্যান্য পরিষেবা।
অন্য দিকে বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ বা বিএসইর সূচক হল সেনসেক্স। এই শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ইন্ডিয়া ইনডেক্স সার্ভিসেস অ্যান্ড প্রোডাক্টসে (আইআইএসএল)। এটি প্রকৃতপক্ষে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ স্ট্র্যাটেজিক ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডের একটি সহায়ক সংস্থা।
নিফটির আবার বেশ কয়েকটি আলাদা আলাদা সূচক রয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে, নিফটি ৫০, নিফটি আইটি, নিফটি ব্যাঙ্ক এবং নিফটি নেক্সট ৫০। ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের ফিউচার্স অ্যান্ড অপশন (এফ অ্যান্ড ও) বিভাগের একটি অংশ হল নিফটি। এটি মূলত ডেরিভেটিস নিয়ে কাজ করে।
শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত হতে চাওয়া যে কোনও সংস্থাই যে নিফটিতে জায়গা পাবে, এমনটা নয়। এর জন্য নির্দিষ্ট কয়েকটি নিয়ম রয়েছে। প্রথমত, সংশ্লিষ্ট সংস্থাটিকে অবশ্যই ভারতীয় হতে হবে। দ্বিতীয়ত, এনএসইর তালিকায় থাকতে হবে তার নাম।
নিফটিতে নাম তুলতে চাওয়া সংস্থার স্টকের উচ্চ তরলতা থাকতে হবে। গড় প্রভাব খরচ দ্বারা এটিকে পরিমাণ করা হবে। বাজার মূলধনের সঙ্গে ওই অঙ্ক সম্পর্কযুক্ত। ছ’মাসের নিরিখে এটি ০.৫ শতাংশ বা তার কম হতে হবে। ১০ কোটি টাকার পোর্টফোলিয়োর ক্ষেত্রে এতে পর্যবেক্ষণের শতাংশের পরিমাণ দাঁড়াবে ৯০।
এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট সংস্থাটির পূর্ববর্তী ছ’মাসের লেনদেনের ফ্রিকোয়েন্সি ১০০ শতাংশ হতে হবে। পাশাপাশি ওই কোম্পানির ফ্রি-ফ্লোটিং বাজার মূলধন সূচকের ক্ষুদ্রতম উপাদানের চেয়ে দেড় গুণ বেশি হতে হবে। যে সব শেয়ারের ডিফারেনশিয়াল ভোটিং রাইটস বা ডিভিআর রয়েছে তারাও নিফটিতে নাম তোলার যোগ্য।
প্রতি ছ’মাস অন্তর নিফটির সূচক পুনর্গঠিত হয়। এই সময়সীমার মধ্যে এটি একটি স্টকের কর্মদক্ষতা বিবেচনা করতে পারে। শেয়ারের কর্মদক্ষতার মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে নতুন এবং পুরনো স্টক অন্তর্ভুক্ত বা বাদ দিয়ে থাকে নিফটি। শেয়ার সংযোজন বা বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে চার সপ্তাহ আগে নোটিস দেয় এনএসই।
২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারি বিশেষ একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘সিকিউরিটিজ় অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া’ বা সেবি। সেই নির্দেশিকা মেনে নিফটিতে প্রতি তিন মাস অন্তর এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডের পোর্টফোলিয়োগুলি যাচাই করা হয়।
নিফটির সূচক পরিচালনা করে এনএসই ইন্ডিসেস লিমিটেড নামের একটি পেশাদার দল। সূচকটিকে সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করতে তারা একটি উপদেষ্টা কমিটি তৈরি করেছেন। ইক্যুইটি সূচকের সঙ্গে সম্পর্কিত বৃহৎ আকারের বিষয়গুলির দক্ষতা এবং দিকনির্দেশের দায়িত্ব রয়েছে ওই কমিটির কাঁধে।
নিফটির সূচকগুলি একটি ফ্লোট-অ্যাডজাস্টেড এবং মার্কেট ক্যাপিটালাইজ়েশন ওয়েটেড পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে গণনা করা হয়। এই পদ্ধতিতে সূচকের স্তর একটি নির্দিষ্ট বেস পিরিয়ডে সূচকে উপস্থিত স্টকের সামগ্রিক বাজারমূল্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
নিফটির মূল্য সূচক গণনার সূত্রটি হল, সূচকমূল্য= বর্তমান এমভি বা বাজারমূল্য/(বেস মার্কেট ক্যাপিটাল x ১০০০)। সূচক গণনার সঙ্গে জড়িত পদ্ধতিটি কর্পোরেট ক্রিয়াকলাপের পরিবর্তনগুলিও বিবেচনা করে। এর মধ্যে রয়েছে অধিকার প্রদান এবং স্টক বিভাজনের মতো বিষয়।
নিফটি হল সূচকের এমন একটি মানদণ্ড যাতে ভারতের সমস্ত ইক্যুইটি বাজার পরিমাপ করা হয়। আর তাই এনএসই নিয়মিত এই সূচক রক্ষণাবেক্ষণ করে।
১৯৯৬ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে নিফটিতে অনেকগুলি পরিবর্তন এসেছিল। তার মধ্যে রয়েছে নিফটি ৫০-এর সূচনা। এ ছাড়া এই সময়সীমার মধ্যে সিঙ্গাপুর এক্সচেঞ্জেও তালিকাভুক্ত হয় এই সূচক। ভারতে শুরু হয় ইন্টারনেটে শেয়ার লেনদেন।
২০০১ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে নিফটি ব্যাঙ্ক সূচকটি চালু করে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ। ইটিএফের তালিকাভুক্তি এই সময়েই হয়েছিল।
২০১৯ সালের অগস্ট মাসে বাণিজ্যিক লেনদেনের ব্যাপারে আমেরিকা এবং চিনের মধ্যে আলোচনা শুরু হলে তার প্রভাব পড়েছিল ভারতীয় শেয়ার বাজারে। ওই সময়ে সর্বোচ্চ সীমায় উঠেছিল নিফটি। একই ভাবে ২০২১ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটের দিনেও ঊর্ধ্বমুখী ছিল এনএসইর সূচক।