ইরানের প্রেসিডিন্ট ইব্রাহিম রইসির ভেঙে পড়া কপ্টার খুঁজতে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর কাছে। তার পর থেকেই চর্চায় উঠে এসেছে ইউরোপের কোপারনিকাস প্রোগ্রাম।
কোপারনিকাস প্রোগ্রাম কী, তা নিয়ে আলোচনা চলছে সর্বত্র। তবে কেন এই আলোচনা শুরু হল তা জানার প্রয়োজন। গত ১৯ মে রাতে পূর্ব আজারবাইজানে পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে ভেঙে পড়ে রইসির চপার। তাতে ছিলেন ইরানের বিদেশমন্ত্রী হোসেন আমিরাবদোল্লাহিয়ানও। দুর্ঘটনায় দু’জনেরই মৃত্যু হয়।
আজারবাইজানের যে এলাকায় রইসির চপার ভেঙে পড়েছিল, তা এতই দুর্গম যে সেখানে মানুষের নজরদারি চালানো প্রায় অসম্ভব ছিল। সেই দুর্গম এলাকায় কোথায় চপার ভেঙে পড়েছে, তা খুঁজে বার করা সম্ভব ছিল না ইরানের সেনাবাহিনীর।
এমন পরিস্থিতিতে রইসির কপ্টার খুঁজতে ইইউ-এর সাহায্য চায় ইরান। তেহরানের তরফে অনুরোধ করা হয়, ইইউ যেন তাদের মহাকাশ প্রোগ্রাম কোপারনিকাসকে চালু করে দেয়। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমেই রইসির কপ্টার খুঁজতে চায় ইরান।
এই কোপারনিকাস প্রোগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল ‘ইমার্জেন্সি ম্যাপিং সিস্টেম (ইএমএস)’। তার সাহায্যে পৃথিবীর যে কোনও জায়গায়, যে কোনও জিনিসের সঠিক অবস্থান সম্পর্কে তথ্য পাওয়া সম্ভব। সেই সিস্টেম চালু করার অনুরোধ জানায় ইরান।
ইউরোপীয় কমিশনার জেনেজ় লেনারকিক ইরানের অনুরোধের কথা স্বীকার করে নেন। তিনি জানিয়েছিলেন, ইরানের অনুরোধেই তাঁরা কোপারনিকাসের ইএমএস চালু করেন। সেই সিস্টেমের মাধ্যমেই খোঁজ মেলে রইসির ভাঙা চপারের। জেনেজ় দাবি করেন, এর নেপথ্যে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। শুধুমাত্র মানবিকতার খাতিরেই ইরানের অনুরোধ রক্ষা করা হয়েছে।
রইসির চপার খোঁজায় কোপারনিকাসের ভূমিকা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই বিশ্বের নানা মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে, মহাকাশ থেকে সবার উপর নজর রাখছে ‘ইউরোপের চোখ’?
ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্পেস প্রোগ্রামের অন্তর্গত হল কোপারনিকাস। ইউরোপীয় কমিশন দ্বারা পরিচালিত হয় এটি। মূলত পৃথিবীর জলবায়ু সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে কোপারনিকাস প্রোগ্রামের ব্যবহার করে থাকে ইইউ। ১৯৯৮ সালে এটি কাজ শুরু করে।
এই প্রোগ্রাম চালু করার সময় ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছিল, পৃথিবীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে নজরদারি চালাতেই কোপারনিকাস ব্যবহার করা হবে। সেই ক্ষেত্রগুলি কী কী? বলা হয়েছে, বায়ুর গুণমান, ওজোন স্তর, জলবায়ু, সৌর বিকিরণ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করাই এর মূল কাজ।
এ ছাড়াও সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সামুদ্রিক সম্পদ, জলবায়ু পরিবর্তন, সীমান্তে নজরদারি চালানোর মতো কাজও চালায় কোপারনিকাস। পাশাপাশি জরুরি অবস্থা, যেমন, বন্যা, অগ্নিকাণ্ড, খরা ইত্যাদি বিষয়েও তথ্য দেয় কোপারনিকাস।
এখন প্রশ্ন উঠছে, এই সব ক্ষেত্র ছাড়া কি কোপারনিকাস প্রোগ্রামের ব্যবহার হয় না? কোপারনিকাস প্রোগ্রামে ছ’টি শক্তিশালী উপগ্রহ রয়েছে। যা পৃথিবীর যে কোনও জায়গায়, যে কোনও পরিস্থিতিতে, যে কোনও ব্যক্তির গতিবিধির উপর নজরদারি চালানোর ক্ষমতা রাখে।
কোপারনিকাসের মাধ্যমেই রইসির চপারের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে, তা নিশ্চিত করেছিল তেহরান। ২০ মে সকালের মধ্যে কোপারনিকাস জানিয়ে দেয়, ঠিক কোন জায়গায় রয়েছে ভাঙা চপার।
সেই তথ্যের ভিত্তিতেই উদ্ধারকাজে নামে সেনাবাহিনী। পৌঁছে যায় ঘটনাস্থলে। উদ্ধার করে আনে রইসি এবং আমিরাবদোল্লাহিয়ানের দেহ। তার পর থেকেই কোপারনিকাসের ক্ষমতা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
পোখরানে ভারতের পরমাণু পরীক্ষার সময় আমেরিকার উপগ্রহের নজরদারি চালানোর ঘটনা অনেকেরই জানা। জন আব্রাহাম অভিনীত ‘পরমাণু’ ছবিতে বিষয়টি আরও স্পষ্ট করা হয়েছে। কী ভাবে আমেরিকার উপগ্রহের নজরদারি এড়িয়ে ভারত পোখরানে পরীক্ষা সম্পন্ন করে।
আমেরিকা যে ‘বন্ধু’, ‘শত্রু’— সমস্ত দেশের উপর উপগ্রহের মাধ্যমে নজরদারি চালায়, তা সর্বজনবিদিত। তবে সরকারি ভাবে কেউই তা স্বীকার করে না। এখন প্রশ্ন, ইইউ-ও কি কোপারনিকাসের মাধ্যমে নজরদারি চালায়?