Ration Distribution Case

‘ভীষণ ভীষণ প্রভাবশালী’ বালুর বিরুদ্ধে আদালতে ১৩ দফা অভিযোগ ইডির! কী কী?

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আরও অভিযোগ, রেশন বণ্টন ‘দুর্নীতি’তে সরাসরি যুক্ত ছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। ২০১১ থেকে ২০২১ পর্যন্ত তিনিই ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী। পরে ২০২১-এ তাঁকে বনমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৩ ১৭:২১
Share:
০১ ২২
What ED says regarding Jyotipriya Mallick’s involvement in Ration Distribution Case

রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালু। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের পর গভীর রাতে তাঁকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি।

০২ ২২
What ED says regarding Jyotipriya Mallick’s involvement in Ration Distribution Case

বালুর বিরুদ্ধে ১৩ দফা অভিযোগ রয়েছে ইডির। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার অভিযোগ, রেশন ‘দুর্নীতি’ থেকে আর্থিক দিক দিয়ে ব্যাপক লাভবান হয়েছেন বালু। বালুর বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতি’র টাকা নয়ছয়ের অভিযোগও এনেছে ইডি।

Advertisement
০৩ ২২
What ED says regarding Jyotipriya Mallick’s involvement in Ration Distribution Case

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আরও অভিযোগ, রেশন বণ্টন ‘দুর্নীতি’তে সরাসরি যুক্ত ছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। ২০১১ থেকে ২০২১ পর্যন্ত তিনিই ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী। পরে ২০২১-এ তাঁকে বনমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। ইডির দাবি, খাদ্যমন্ত্রী থাকার সময় ইডির হাতে ধৃত ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানের ‘দুর্নীতি’র টাকার ভাগ পৌঁছেছিল তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রীর কাছে।

০৪ ২২

বালুকে রাজ্যের এক জন ‘ভীষণ ভীষণ প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব’ বলেও উল্লেখ করেছে ইডি। যখন রেশন নিয়ে দুর্নীতি হয়, তখন তিনি রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রীর পদে। বর্তমানে তিনি বনমন্ত্রীর পদে থাকলেও এখনও খাদ্য দফতরে তাঁর প্রভাব রয়েছে বলে দাবি করেছে ইডি।

০৫ ২২

সম্প্রতি রাজ্যের বুকে রেশন বণ্টন নিয়ে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ উঠেছে। গত ১৪ অক্টোবর ওই দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ব্যবসায়ী বাকিবুরকে গ্রেফতারের পরে উঠে আসে বালুর নাম। বাকিবুর বর্তমানে ইডি হেফাজতে রয়েছেন।

০৬ ২২

তদন্তকারীদের সূত্রের দাবি, হেফাজতে নিয়ে বাকিবুরকে জেরা করতেই তিনি বহু তথ্য দেন ইডির তদন্তকারী আধিকারিকদের। যার ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বালুকে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁকে গ্রেফতার করেন ইডির আধিকারিকেরা।

০৭ ২২

দু’দফায় রাজ্যের বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীকে মোট ৮০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন রেশন দুর্নীতি মামলায় ধৃত ব্যবসায়ী বাকিবুর! এমনটাই অভিযোগ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডির।

০৮ ২২

ইডির দাবি, বাকিবুরের সঙ্গে তাঁর কর্মীদের হোয়াট্‌সঅ্যাপ চ্যাটে এই টাকা লেনদেনের কথা উঠে এসেছে। তিনি যে তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রীকে টাকা দিয়েছিলেন, ইডির জিজ্ঞাসাবাদের সময় তেমনটা নাকি স্বীকারও করে নিয়েছেন বাকিবুর। ইডি জানিয়েছে, বাকিবুরকে গ্রেফতারির সময় যে মোবাইলগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল, তা ঘেঁটেই লেনদেনের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। প্রকাশ্যে এসেছে ‘এমআইসি’ নামক এক ব্যক্তিকে একাধিক বার টাকা দেওয়ার তথ্যও। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, এই ‘এমআইসি’-র অর্থ ‘মিনিস্টার ইন চার্জ’ এবং সেই মন্ত্রী আর কেউ নন, খোদ প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়।

০৯ ২২

ইডি আরও জানিয়েছে, তদন্তে বাকিবুর এবং এক ব্যক্তির হোয়াট্‌সঅ্যাপে কথাবার্তা প্রকাশ্যে এসেছে। সেখানেই মন্ত্রীকে টাকা দেওয়ার তথ্য উঠে এসেছে বলে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার দাবি। ইডির দাবি, ২০২০ সালে ‘এমআইসি’কে ৬৮ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আরও জানিয়েছে, বাজেয়াপ্ত করা ফোনের হোয়াট্‌সঅ্যাপ বার্তায় ‘এমআইসি’কে আরও ১২ লক্ষ টাকা দেওয়ার তথ্য উঠে এসেছে।

১০ ২২

যে ব্যক্তির ওই ফোন, তিনি ইডিকে জানিয়েছেন যে, বাকিবুরের নির্দেশেই মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়কে ১২ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল, এমনটাই দাবি করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে, ইডি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন জ্যোতিপ্রিয়কে ১২ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বাকিবুরও। তবে বাকিবুর জানিয়েছেন, তিনি জ্যোতিপ্রিয়কে ১২ লক্ষ টাকা ঋণ হিসাবে দিয়েছিলেন।

১১ ২২

রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় ধৃত বাকিবুরের সঙ্গে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়ের ‘পারিবারিক সম্পর্ক’-এরও হদিস পেয়েছে ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, দুই পরিবারের সদস্যেরা একযোগে একাধিক সংস্থা চালাতেন। ওই সব সংস্থা আবার বিভিন্ন ভুয়ো সংস্থায় কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগও করত বলেও অভিযোগ রয়েছে! কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে, আপাতত এ রকম তিন সংস্থার খোঁজ পেয়েছেন তদন্তকারীরা।

১২ ২২

ওই তিন সংস্থা হল— ‘শ্রী হনুমান রিয়েলকন প্রাইভেট লিমিটেড’, ‘গ্রেসিয়াস ইনোভেটিভ প্রাইভেট লিমিটেড’ এবং ‘গ্রেসিয়াস ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেড’। ইডির সূত্রের দাবি, তিন সংস্থার মারফত ভুয়ো কোম্পানির মাধ্যমে বিনিয়োগ করা হয়েছে অন্তত ১২ কোটি টাকা। ঘটনাচক্রে, প্রত্যেকটি সংস্থাতেই কোনও না কোনও ভাবে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় এবং বাকিবুরের পরিবারের যোগ রয়েছে। ইডি এ-ও দাবি করেছে, জ্যোতিপ্রিয়ের পরিবারের সদস্যদের সংস্থার সঙ্গে তাঁর আর্থিক লেনদেন হয়েছিল বলে জেরায় কবুল করেছেন বাকিবুর।

১৩ ২২

ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘দুর্নীতি’র সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকা যে তিন সংস্থার খোঁজ ইডি পেয়েছে, সেগুলির ডিরেক্টর পদে ছিলেন বালুর স্ত্রী মণিদীপা মল্লিক এবং কন্যা প্রিয়দর্শিনী মল্লিক। পাশাপাশি, এই সংস্থাতেই যুক্ত ছিলেন বাকিবুরের পরিবারের অন্য সদস্যেরাও। সংস্থাগুলির অ্যাকাউন্টে নিয়মিত বাকিবুরের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকার লেনদেন হত বলেও ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে। ওই তিন সংস্থা থেকে আরও দুই সংস্থায় টাকা লেনদেন হয়েছিল বলেও অভিযোগ ইডির।

১৪ ২২

ইডির দাবি, এই সংস্থাগুলিতে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়ের পরিবারের সদস্যেরা ডিরেক্টর পদে ছিলেন ২০১৬-২০১৭ সাল পর্যন্ত। তবে এখন আর তাঁরা ওই পদে নেই। উল্লেখ্য, জ্যোতিপ্রিয়ের পরিবারের সদস্যেরা যখন ওই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তখন তিনি রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী।

১৫ ২২

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, বৃহস্পতিবার মন্ত্রীর বাড়িতে তল্লাশির সময় তাঁর স্ত্রী এবং মেয়ের বয়ানও রেকর্ড করা হয়। ইডি জানিয়েছে, প্রথমে নাকি তাঁরা ওই তিন সংস্থার সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগ থাকার কথা মানতে চাননি। তবে পরে মন্ত্রীর বাড়ি থেকে ওই তিন সংস্থার স্ট্যাম্প উদ্ধার হলে তাঁরা জানান, বালুর প্রাক্তন আপ্তসহায়কের নির্দেশে ওই তিনটি সংস্থার নথিতে তাঁরা সই করেছিলেন।

১৬ ২২

ইডি দাবি করেছে, ওই সংস্থাগুলির মাধ্যমে ১২.০৬ কোটি কালো টাকা সাদা করা হয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি অনু‌যায়ী, বাকিবুর জেরায় নাকি জানিয়েছেন যে, ঋণের আকারে সেই টাকা বালুর কাছে গিয়েছিল। তবে সেই ঋণ পরে শোধ হয়নি।

১৭ ২২

ইডি এ-ও দাবি করেছে, ২০২২ সালে ওই সংস্থাগুলির সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে সেগুলি তুলে দেওয়া হয়। তিন সংস্থার সম্পত্তি বিক্রি করে ২০ কোটি ২৪ লক্ষ ১৬ হাজার ১৯৪ টাকা ওঠে। ইডির ওই সূত্রের দাবি, সেই টাকা যায় বাকিবুরের শ্যালক অভিষেক বিশ্বাসের নামে থাকা একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে।

১৮ ২২

প্রাথমিক ভাবে ইডির অভিযোগ, রেশন সামগ্রী খোলা বাজারে বিক্রি করতেন বাকিবুর। সেই বিক্রির টাকা নাকি পাঠানো হত বালুকে। ইডির দাবি, ২০১৬-২০১৭-র মধ্যে বালুর স্ত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৬.০৩ কোটি টাকা জমা হয়েছে। ২০১৬-র নভেম্বরে মন্ত্রীর কন্যা তথা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সচিব প্রিয়দর্শিনীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও জমা পড়েছে ৩.৭৯ কোটি টাকা।

১৯ ২২

বালুর স্ত্রীর সম্পত্তিতেও অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছেন ইডির তদন্তকারী আধিকারিকেরা। ২০১৬ সালে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের আগে জ্যোতিপ্রিয়কে যে হলফনামা জমা দিতে হয়েছিল, সেখানে তাঁর স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে মাত্র ৪৫ হাজার টাকা রয়েছে বলে উল্লেখ ছিল। ইডির দাবি, এক বছরের মধ্যে মন্ত্রীর স্ত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় ছ’কোটি জমা পড়েছে। এত কম সময়ে কী করে এত টাকা বালুর স্ত্রী অ্যাকাউন্টে এল, তার উত্তর খুঁজে বার করতে শুরু করেছেন তদন্তকারীরা।

২০ ২২

কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা জানিয়েছে, বাকিবুর এবং এক ব্যক্তির হোয়াট্‌সঅ্যাপ বার্তায় মল্লিক পরিবারের টিকিট বুকিং সংক্রান্ত তথ্যও উঠে এসেছে। সেই তথ্য অনুযায়ী, মন্ত্রী-পরিবারের উড়ানের টিকিট কেটেছিলেন বাকিবুর। পরে নাকি ওই টিকিট বাতিল হয়ে যায়। টিকিট বাতিল হয়ে যাওয়ার কারণে নাকি টিকিট বাতিলের টাকা বাকিবুরকেই গুনতে হয়েছিল বলে দাবি তদন্তকারী সংস্থাটির।

২১ ২২

ইডি দাবি করেছে, প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ‘সুপারিশ’-এ সরকারি চাকরি পেয়েছিলেন তাঁর বাড়ির পুরনো পরিচারক। এমনকি, ‘দুর্নীতি’-র টাকা লেনদেন হয়েছে এমন সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন ওই পরিচারকের মা এবং স্ত্রী। বৃহস্পতিবার জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়িতে তল্লাশি চালানোর সময় ইডি আধিকারিকদের হাতে এই তথ্য উঠে এসেছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার।

২২ ২২

প্রসঙ্গত, রেশন বণ্টন দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে নেমে বাকিবুরের বাড়িতে তল্লাশি চালানোর পরেই জ্যোতিপ্রিয়ের নাম ওঠে। এর পর বৃহস্পতিবার সকালে মন্ত্রীর বাড়িতে হাজির হন ইডির আধিকারিকেরা। প্রায় ২০ ঘণ্টা তল্লাশি শেষে রাত ২টো ৪০ মিনিট নাগাদ গ্রেফতার করা হয় জ্যোতিপ্রিয়কে। শুক্রবার দুপুরে নিজেদের হেফাজতে জ্যোতিপ্রিয়কে নিতে চেয়ে ব্যাঙ্কশাল আদালতে রাজ্যের মন্ত্রীকে হাজির করানো হয়। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়ায় বালু এখন এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

—ফাইল চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement