আবার চিনে থাবা বসিয়েছে কোভিড। করোনাভাইরাসের ওমিক্রন প্রজাতির বিএফ.৭ উপরূপই কারণ। সেই উপরূপ ইতিমধ্যে পৌঁছে গিয়েছে ভারতেও। আক্রান্তের সংখ্যা নেহাতই কম। কিন্তু প্রশাসন এখন থেকেই সতর্ক। সতর্ক করা হয়ে নাগরিকদেরও। করোনাভাইরাসের নতুন এই উপরূপের উপসর্গগুলি ঠিক কী? এই উপরূপে কেউ আক্রান্ত হলে কী ভাবে বোঝা যাবে?
বিএফ.৭ উপরূপের কারণে শ্বাসনালির উপরের অংশ আক্রান্ত হয়। এর ফলে বুকের উপরের দিক এবং কণ্ঠনালিতে কফ জমে।
এই উপরূপের সংক্রমণের ফলে জ্বর, গলাব্যথা, সর্দিকাশিও হতে পারে। যেমন সাধারণত কোভিডের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
কারও কারও বিএফ.৭ উপরূপে আক্রান্ত হলে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন পেট খারাপ, বমি, ডায়রিয়া হতে পারে। চিকিৎসকরা এই সমস্যাগুলি দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে কোভিড পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। নিভৃতাবাসে থাকার কথাও বলেছে। এতে সংক্রমণ কমবে।
শীতকালে এমনিতেই সর্দি, কাশি, জ্বর বেশি হয়। কমবেশি সকলেই এতে ভোগেন। ঠান্ডা লেগেছে মানেই যেমন কোভিড নয়, তেমনই ঠান্ডা লাগলেও তা এড়িয়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। সামান্য উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়াটা জরুরি।
গত বেশ কয়েক দিন ধরে দেশে দৈনিক কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ২০০-এর আশপাশে রয়েছে। জুলাই থেকে অক্টোবর দেশে চার জন বিএফ.৭ উপরূপে আক্রান্ত হয়েছেন। ৩ জনই গুজরাতের বাসিন্দা। ১ জন ওড়িশার। তাঁদের নিভৃতবাসে রাখা হয়েছিল। চিকিৎসার পর তাঁরা প্রত্যেকেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বিএফ.৭ উপরূপ ততটাও মারণাত্মক নয়। তবে আশঙ্কার বিষয় হল, এই উপরূপের সংক্রমণ ক্ষমতা। একসঙ্গে নিমেষে বহু মানুষকে সংক্রামিত করতে পারে ওমিক্রনের এই উপরূপ। সে ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় করে রোগীর দ্রুত নিভৃতাবাসে যাওয়াটা জরুরি। তা না হলে এই উপরূপ ওমিক্রন প্রজাতির থেকে বেশি দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। সে ক্ষেত্রে মৃত্যুর হারও বাড়বে। তবে স্বস্তির বিষয়, এই উপরূপের সংক্রমণের ক্ষেত্রে সুস্থতার হার অনেক বেশি।
চিনে এই বিএফ.৭ উপরূপের কারণেই আবারও মারণরূপ নিয়েছে অতিমারি। আক্রান্ত বা মৃত্যুর সঠিক পরিসংখ্যান আগের মতোই প্রকাশ করেনি চিন। তবে সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গের দাবি, চিনে নতুন করে আক্রাম্ত হয়েছেন প্রায় ১০ লক্ষ জন। দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার।
শুধু চিন নয়, আমেরিকা, ব্রিটেন, বেলজিয়াম, জার্মানি, ফ্রান্স, ডেনমার্কেও ছড়িয়ে পড়েছে এই বিএফ.৭। যদিও চিনের মতো সে সব জায়গার পরিস্থিতি এত মারাত্মক নয়। মৃত্যুর সংখ্যাও নেহাতই কম। ব্রিটেন দু’ মাস আগেই এই উপরূপ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে সতর্কতা জারি করেছিল।
পরিস্থিতি বিচার করে সতর্ক ভারতও। বৃহস্পতিবারই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে করোনা পরীক্ষা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। রাজ্যগুলিকে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে জোর দেওয়ার বার্তা দিয়েছেন মোদী। উৎসবের মরসুমে দূরত্ববিধি মেনে চলা, মাস্ক এবং স্যানিটাইজার ব্যবহারের কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার সংসদে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবীয় জানান যে, চিনের পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে দেশের করোনা পরিস্থিতিও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। রাজ্যগুলিকেও ইতিমধ্যে বেশ কিছু সতর্কতা মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চিনে যাতায়াতকারী বিমান ইতিমধ্যে নিষিদ্ধ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের হঠাৎ (র্যান্ডম) পরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিদেশফেরত যাত্রীদের মধ্যে অন্তত দুই শতাংশের কোভিড পরীক্ষা করা হচ্ছে।
বিএফ.৭ সংক্রমণ মোকাবিলায় ভারত বায়োটেকের নাকে নেওয়ার টিকা (ন্যাজ়াল ভ্যাকসিন)-কে ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই প্রতিষেধককে যুক্ত করা হয়েছে ‘কোউইন অ্যাপে।’ শুক্রবার এ কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবীয়।
১৮ বছরের বেশি বয়সিদের দেওয়া হবে এই টিকা। প্রতিষেধকের দাম শীঘ্রই ঠিক করা হবে।
কলকাতার চিকিৎসক শুভ্রজ্যোতি ভৌমিক বলেন, ‘‘করোনার অন্য টিকা নিলেও এই টিকা নেওয়া যাবে বুস্টার হিসাবে।’’ অর্থাৎ কেউ কোভিশিল্ড, কোভ্যাক্সিন প্রতিষেধক নিলে বুস্টার হিসাবে এই টিকা নিতে পারবেন।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি সারতে হাসপাতালগুলিতে ‘মক ড্রিল’-এর আয়োজন করা হবে আগামী মঙ্গলবার। এ কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী।