প্রকৃতি প্রতি মুহূর্তে বিশ্ববাসীকে বিস্মিত করে তোলে। সৌন্দর্য, ভয়াবহতার মাধ্যমে বহু অজানা ঘটনা চোখের সামনে তুলে ধরে প্রকৃতি। কখনও সে সব অজানা ঘটনার পর্দা ভেদ করে রহস্যের সমাধান হয়। কখনও বা রহস্য হয়েই থেকে যায় প্রকৃতির নানা রূপ।
কী ভাবে প্রকৃতি তার রহস্যময়ী রূপে ধরা দেবে, তা বলতে পারেন না কেউই। এমনই এক ঘটনা ঘটে ইউরোপে। নির্দিষ্ট একটি গাছ থেকে তীব্র গতিতে এমন ভাবে জল গড়িয়ে পড়তে থাকে, যা দেখে মনে হয় যেন ওই গাছই জলের উৎস। কিন্তু এই ঘটনার নেপথ্যকারণ কী?
ইউরোপের দক্ষিণ-পূর্বাংশে মন্টেনেগ্রো এলাকায় একটি নির্দিষ্ট গাছে বিরল ঘটনা ঘটে। সেই মালবেরি বা তুঁত গাছের বাকল থেকে জল গড়িয়ে মাটিতে পড়তে থাকে।
মন্টেনেগ্রোর রাজধানী পডগোরিকা। সেখানে রয়েছে ডিনোসা নামের একটি গ্রাম। ডিনোসা গ্রামের এক জায়গায় বেড়ে উঠেছে একটি তুঁত গাছ। দীর্ঘ কাল ধরে গাছটি সেখানে রয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, প্রায় তিন দশক আগে থেকে নাকি তুঁত গাছের বাকল থেকে জল গড়িয়ে পড়তে থাকে। ১৯৯০ সাল থেকেই নাকি এই ঘটনা স্বচক্ষে দেখছেন তাঁরা।
তবে সারা বছর নয়, বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়েই নাকি তুঁত গাছের বাকলের মধ্যে থেকে জোর গতিতে বাইরে জল বেরিয়ে যায়। টানা এক-দু’দিন গাছ থেকে জল পড়ার পর তা আবার থেমে যায়।
তুঁত গাছ থেকে যে পরিমাণ জল বাইরে বেরিয়ে আসে, গাছের চারদিকে অনেকটা জায়গা জুড়ে তা জমে থাকে। স্থানীয়দের অনেককেই এই ঘটনার ছবি এবং ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে পোস্ট করতে দেখা যায়।
গাছের বাকল থেকে জল বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা সাধারণত দেখা যায় না। তবে এই ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। এর নেপথ্যে রয়েছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।
ডিনোসা গ্রামটির ভৌগোলিক অবস্থান এমন একটি জায়গায়, যেখানে ভূগর্ভ দিয়ে বহু সংখ্যক জলধারা বয়ে গিয়েছে। বরফ গলে যাওয়ার ফলে অথবা ওই এলাকায় ভারী বর্ষণ হলে জলের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়।
মাটির তলায় থাকা জলধারাগুলিতে জলের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ফলে চাপের পরিমাণ বাড়তে থাকে। মাটির উপরের চাপের সঙ্গে তখন জলধারার চাপের বিশাল পার্থক্য তৈরি হয়।
চাপের সমতা রক্ষার জন্য ভূগর্ভের জলধারাগুলি বাইরে বেরিয়ে আসার জন্য ফাঁকফোকর খুঁজতে থাকে। তুঁত গাছের গুঁড়ির গায়ে একটি ছোট গর্ত রয়েছে। মাটির তলায় জলধারাগুলিতে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে তা বাকলের ভিতর দিয়ে ওই গর্তের মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে।
স্থানীয়দের দাবি, ১৯৯০ সাল থেকে তুঁত গাছ থেকে জল পড়ার ঘটনা লক্ষ করছেন তাঁরা। তবে সারা বছর এই ঘটনা ঘটে না।
স্থানীয়দের মতে, বছরে অন্তত এক বার তুঁত গাছের ভিতর থেকে জল বার হয়। টানা দু’এক দিন জল বেরিয়ে যাওয়ার পর তা আবার থেমে যায়।