দেখে মনে হয়, আগাগোড়া বিলাসী একটি বুটিক হোটেল। ঝাঁ-চকচকে অন্দরসজ্জা। রয়েছে বেশ কয়েকটি রেস্তরাঁ, সুইমিং পুল, রোদ পোহানোর টাব, জিম এবং অবশ্যই পানশালা।
তবে এ কোনও পাঁচতারা হোটেল নয়। এটি ব্রিটিশ ধনকুবের রিচার্ড ব্র্যানসনের সংস্থার প্রমোদতরী। যাতে প্রবেশাধিকার রয়েছে শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের।
গত বছর প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য তাঁদের প্রথম প্রমোদতরী জলে ছেড়েছিল ব্র্যানসনের সংস্থা। নাম ছিল ‘স্কারলেট লেডি’। সম্প্রতি আরও একটি প্রমোদতরীর যাত্রা শুরু হয়েছে। এ বার ‘ভ্যালিয়েন্ট লেডি’।
সংস্থার দাবি, যাঁরা কখনও প্রমোদতরীতে পা রাখেননি, তেমন লোকজনকে আকর্ষণ করতে যাবতীয় বন্দোবস্ত করেছে সংস্থা। তবে আর পাঁচটা প্রমোদতরীর থেকে নাকি এতে যাত্রার অভিজ্ঞতাই আলাদা।
২০২১ সালে ‘স্কারলেট লেডি’-র উদ্বোধনের পর আমেরিকার সংবাদমাধ্যমের সংস্থারর সিইও টম ম্যাকঅ্যালপিন বলেছিলেন, ‘‘এটি আপনার ঠাকুরমার আমলের ক্রুজ নয়।’’
ব্র্যানসনের মতোই নাকি ‘রকস্টার’ এই প্রমোদতরী। এখানে নৈশভোজের সময় খাবার টেবলে হাজির হতে স্যুট-টাই-ওয়েস্টকোট চাপাতে হবে না। বরং রোজকার জামাকাপড় পরেই রেস্তরাঁয় আসতে পারেন যে কেউ।
প্রমোদতরীতে চিরাচরিত ভাবে একটি বড়সড় রেস্তরাঁ বা ডাইনিং হলের বদলে রয়েছে ২০টিরও বেশি ছোট ছোট রেস্তরাঁ। প্রতিটিরই নিজস্ব শেফ রয়েছে। সপরিবার বসে চেখে দেখতে পারেন স্ট্রিট কর্ন, পিৎজা, ভূমধ্যসাগরীয় পিঠা বা অ্যাভোকাডো টাকো।
২৭৮ মিটার দৈর্ঘ্যের এই প্রমোদতরীতে থাকতে পারেন ২৭৭০ জন যাত্রী। তাঁদের জন্য রয়েছে মুড লাইটিং-সহ ১৩৩০টি বিলাসী কেবিন। এ ছাড়াও, ‘রকস্টার’ স্যুইট রয়েছে ৭৮টি। সঙ্গে চারটি ‘মেগাস্টার’ স্যুইট। এতে বার হট টাব এবং মিউজিক রুমও রয়েছে।
বড়সড় কেবিনে থাকার ইচ্ছে না থাকলে বেছে নিতে পারেন নিজস্ব কাবানা। অনেকটা কুঁড়েঘরের মতো দেখতে হলেও এতে আরামের খামতি নেই।
প্রমোদতরীতে রোদ পোহানোর জন্য রয়েছে আলাদা ব্যবস্থা। এ ছাড়া পাবেন পুল ডেক বা ট্যাটু পার্লারের সুবিধাও।
হুল্লোড় করতে এসে নাচাগানা করবেন না, তা কি হয়? সে ব্যবস্থাও করেছে সংস্থা। পুরনো দিনের রেকর্ডের দোকানে গিয়ে খুঁজতে পারেন পছন্দের সুর।
প্রমোদতরীতে বিনোদনের যে ঢালাও বন্দোবস্ত রয়েছে ব্র্যানসনের মন্তব্য থেকে তা বোঝা যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি, (রেস্তরাঁয়) প্রতিটি টেবলে বসা মানুষজনের নাচে অংশ নেওয়া উচিত। আমাদের রকস্টার স্যুইটে সে জন্য টেবিলের সঙ্গে সিঁড়ি লাগানো রয়েছে। যাতে সিঁড়ি বেয়ে টেবলের উপরে উঠে যে কেউ নাচ শুরু করতে পারেন।’’
খাদ্যরসিকদের পাশাপাশি প্রমোদতরীতে আসা স্বাস্থ্য সচেতন যাত্রীদেরও খেয়াল রেখেছে সংস্থা। যাত্রীদের জন্য ফিটনেস ক্লাস, বাঞ্জি জাম্পিং শেখানোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে। রয়েছে স্পা এবং জিম। হাঁটাচলা করে ওজন ঝরানোর জন্য রয়েছে আলাদা ডেক।
২০১৫ সালে তিনটি প্রমোদতরী গড়ার জন্য ইতালীয় সংস্থা ফিনকানটিয়েরি-কে বরাত দিয়েছিল ভার্জিন ভয়েজেস। মাঝারি মাপের এক একটি প্রমোদতরীর ওজন প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার টন। ইতিমধ্যেই আমেরিকার মায়ামি থেকে ক্যারিবিয়ানের যাত্রা সেরে ফেলেছে ‘স্কারলেট লেডি’। অন্য দিকে, ‘ভ্যালিয়েন্ট লেডি’-র প্রথম যাত্রা শুরু হয়েছে ১১ মার্চ। ইংল্যান্ডের এসেক্স থেকে লন্ডনে পাড়ি দিতে রওনা দিয়েছে সেটি। ব্রিটেনের পর স্পেনের বার্সেলোনা এবং অস্ট্রেলিয়াও ঘোরার পরিকল্পনা রয়েছে ‘ভ্যালিয়েন্ট লেডি’-র।
এ প্রমোদতরীতে সময় কাটাতে খরচাপাতি কত? ভার্জিন ভয়েজেস সূত্রে খবর, এক এক জায়গায় সময় কাটানোর খরচ আলাদা। ধরুন, সপ্তাহান্তে ইংল্যান্ডের পোর্টসমাউথ থেকে বেলজিয়ামের জিব্রুগে তিন রাত কাটাতে চান। তা হলে এক রাতের জন্য স্যুইটভাড়া ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১ লক্ষ ৩১ হাজার ৪০৬ টাকা। আবার এতে চড়ে ফ্লোরিডায় ৪ রাত কাটাতে হলে এক রাতের জন্য ভারতীয় মুদ্রায় প্রায়১ লক্ষ ৩৮ হাজার ৯৪৪ টাকা ভাড়া গুনতে হবে।