Niger in Africa

আফ্রিকার ছোট্ট দেশ থেকে আমেরিকার সেনাকে হটিয়ে দিল রাশিয়া! নেপথ্যে কি দুর্মূল্য খনিজ?

আফ্রিকার দেশ নাইজারের নামকরণ হয়েছে সেখান দিয়ে বয়ে যাওয়া নাইজার নদীর নামের উপর ভিত্তি করে। নাইজারের রাজধানীর নাম নিয়ামে। এই নিয়ামেতে একটি বিমানঘাঁটি রয়েছে আমেরিকার।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২৪ ০৮:৪৫
Share:
০১ ১৯

এক পাশে সাহারার ধু ধু মরুভূমি। অন্য পাশে কঙ্গোর ঘন জঙ্গল। তার মাঝে রয়েছে আফ্রিকার ছোট্ট একটি দেশ। আমেরিকা ঘাঁটি গেড়েছিল সেই দেশে। কিন্তু সেখানকার বাসিন্দারা আমেরিকার সৈন্যদের আর সহ্য করতে পারছেন না। রাস্তায় বেরিয়ে রাশিয়ার সৈন্যদের স্বাগত জানিয়েছে সেখানকার জনতা। কিন্তু হঠাৎ আফ্রিকার এই দেশে কী এমন ঘটল?

০২ ১৯

আফ্রিকার দেশ নাইজারের নামকরণ হয়েছে সেখান দিয়ে বয়ে যাওয়া নাইজার নদীর নামের উপর ভিত্তি করে। নাইজারের রাজধানীর নাম নিয়ামে। এই নিয়ামেতে একটি বিমানঘাঁটি রয়েছে আমেরিকার। সেই ঘাঁটি থেকে আমেরিকার সেনাদের বিতাড়িত করে রাশিয়ার সৈন্যেরা প্রবেশ করেছে।

Advertisement
০৩ ১৯

নিয়ামের বিমানঘাঁটি থেকে নাকি আইসিস জঙ্গি সংগঠনের কার্যকলাপে নজর রাখছিল আমেরিকা। রাষ্ট্রপুঞ্জকে আমেরিকা জানিয়েছে, নিয়ামের বিমানঘাঁটি থেকে ড্রোন উড়িয়ে আইসিস সম্পর্কে অনেক তথ্য সংগ্রহ করেছে তারা।

০৪ ১৯

শুধুমাত্র নিয়ামেতে নয়, সারা বিশ্বে মোট ৮০টি দেশে ৭৫০টির বেশি ঘাঁটি রয়েছে আমেরিকার। শুধুমাত্র জাপানেই ১২০টির বেশি ঘাঁটি রয়েছে তাদের। সেখানে ৫৩ হাজারের বেশি আমেরিকার সৈন্য রয়েছে।

০৫ ১৯

শুধুমাত্র জাপানেই নয়, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রিটেন, পর্তুগাল, বেলজিয়াম, পানামা, সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়া, ইটালি, নরওয়ে এবং কিউবার মতো দেশেও ঘাঁটি রয়েছে আমেরিকার। এই দেশগুলির কোথাও ৫০০-র কম সৈন্য নেই তাদের। সব মিলিয়ে ৮০টি দেশে পৌনে দু’লক্ষ সেনা রয়েছে আমেরিকার।

০৬ ১৯

নিয়ামের বাসিন্দাদের আর্থিক পরিস্থিতি তেমন সচ্ছল নয়। আমেরিকার দাবি, আইসিস সেখানকার বাসিন্দাদের টাকার লোভ দেখিয়ে প্রশিক্ষণ দেয় এবং পরে তাঁরাই ইউরোপে গিয়ে হামলা করেন। নিয়ামের মধ্যে যেন আইসিস তার ছায়া ফেলতে না পারে, সে কারণেই আমেরিকার সৈন্যেরা সেখানে ঘাঁটি তৈরি করে। অন্তত এমনটাই দাবি ওয়াশিংটনের।

০৭ ১৯

শুধু আমেরিকা নয়, নিয়ামের উপর নজর ছিল ফ্রান্সেরও। ১৮৯০ সালের দিকে নাইজার ছোট ছোট সাম্রাজ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। ন’বছর পর ১৮৯৯ সালে ফ্রান্স এই দেশে আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে।

০৮ ১৯

১৯০৫ সালে নাইজারকে সেনার শাসনের আওতায় নিয়ে আসে ফ্রান্স। ১৯২২ সালে সেখানে উপনিবেশ তৈরি করে ফরাসিরা।

০৯ ১৯

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর নাইজার স্বাধীন হতে চাইলে ফ্রান্স তাদের প্রতিশ্রুতি দেয় যে, ফরাসি ক্যাবিনেটে নাইজারের তরফে প্রতিনিধি পাঠানো হবে। কিন্তু এই ব্যবস্থা নাইজারের কয়েক জন বিত্তশালীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।

১০ ১৯

এর পরেই ফ্রান্সের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সুর ওঠে নাইজারের বাসিন্দাদের কণ্ঠে। ১৯৬০ সালে ফ্রান্সের শাসনের দিন ফুরিয়ে আসে। এর পর নাইজারে ১৪ বছর ধরে একই সরকারের শাসন বজায় থাকে। কিন্তু তাতে সে দেশের আর্থিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করে।

১১ ১৯

১৯৬৮ সালে খরা, অর্থাভাব এবং খাবারের অভাবে নাইজারের বাসিন্দারা মৃত্যুর সম্মুখীনও হন। ১৯৭৪ সালে নাইজার আবার সেনার শাসনে চলে যায়।

১২ ১৯

১৯৯১ সালে নাইজারে একাধিক রাজনৈতিক দল মিলে সরকার গঠন করে। কিন্তু তাতেও খুব একটা লাভ হয় না। ১৯৯৬ সালে আবার সেনার শাসন শুরু হয় নাইজারে।

১৩ ১৯

১৯৯৯ সালে আবার সরকার গঠন হয় নাইজারে। মহম্মদ তনজা সেখানকার প্রেসি়ডেন্ট হিসাবে পদগ্রহণ করেন। ২০০৯ সাল পর্যন্ত নাইজারের পরিস্থিতি স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু তার পর ধীরে ধীরে অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। ২০২৩ সালে আবার অন্য ছবি ফুটে ওঠে সেই দেশে।

১৪ ১৯

নাইজারের প্রেসিডেন্টকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। আবার সেনার শাসনের আওতায় আসে নাইজার। সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দে‌ওয়া হয়। সে দেশের সেনাবাহিনীতে তখনও ফরাসিদের দাপট ছিল। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে আবার লোকজন খেপে ওঠেন। নাইজারের বাসিন্দাদের অভিযোগ ছিল, সেনার মাধ্যমে আসলে সেখানে শাসকের সিংহাসনে বসে রয়েছে ফ্রান্স।

১৫ ১৯

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‌ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ নাইজার থেকে তাদের সেনা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা করেন। সেই বছর ডিসেম্বর মাসে নাইজার থেকে ফিরে যায় ফ্রান্সের সেনা।

১৬ ১৯

২০২২ সালে ২০২০ টন ওজনের ইউরেনিয়ামের উৎপাদন হয়েছিল নাইজার থেকে। সারা বিশ্বে উৎপাদিত ইউরেনিয়াম খনিজের ৫ শতাংশ নাইজার থেকে পাওয়া যায়। ফ্রান্সের মোট ইউরেনিয়ামের ১৫ শতাংশ নাইজার থেকেই আমদানি করা হয়। তা ছাড়া সোনা এবং তেল উৎপাদনের জন্যও নাইজার প্রসিদ্ধ।

১৭ ১৯

আমেরিকা দাবি করে, ফ্রান্সের সেনা ফিরে গেলেও তাদের সেনা নাইজারে শান্তি ফিরিয়ে আনবে। কিন্তু নাইজারের সেনা রাশিয়ার ওয়াগনার গোষ্ঠীর মতো সশস্ত্র সংগঠনকে ডেকে পাঠায়। এমনকি রাস্তায় নেমে রাশিয়ার সৈন্যকে স্বাগতও জানায় নাইজারের জনতা।

১৮ ১৯

রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে নাইজার। আমেরিকার সৈন্যদের বিতাড়িত করতে রাস্তায় প্ল্যাকার্ড নিয়ে নেমে পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। যদিও এই প্রসঙ্গে রাশিয়ার তরফে কিছু জানানো হয়নি। আমেরিকার দাবি, নিয়ামেতে রাশিয়ার সেনা প্রবেশ করলেও তাদের বিমানঘাঁটি সম্পূর্ণ দখল করতে পারেননি।

১৯ ১৯

কিন্তু শুধুই কি নাইজারের সেনার ডাকে সাড়া দিয়ে সে দেশে এসেছে রাশিয়া? না কি নেপথ্যে রয়েছে ইউরেনিয়ামের বিশাল ভান্ডারের দখল নেওয়ার চেষ্টা? অস্থির নাইজারের দিকেই আপাতত চোখ থাকবে বিশ্বের।

সকল ছবি সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement