US B-2 Bomber

অদ্ভুতদর্শন বোমারু বিমান নিয়ে হুথিদের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধে’ আমেরিকা! কতটা ভয়ঙ্কর ‘বি-২ স্পিরিট’?

ইয়েমেনে হুথিদের গোপন ডেরা গুঁড়িয়ে দিতে বি-২ বোমারু বিমান দিয়ে হামলা চালিয়েছে আমেরিকার বায়ুসেনা। গত শতাব্দীর আশির দশকে তৈরি এই স্টেল্‌থ বম্বার পরমাণু বোমা নিয়েও পাড়ি দিতে পারে এক মহাদেশ থেকে অপর মহাদেশে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৪ ১১:২৯
Share:
০১ ২২
US B 2 Spirit stealth bomber attacked on Houthis hideouts in Yemen know its firepower

ইরানের মদতপুষ্ট ইয়েমেনের হু‌থি বিদ্রোহীদের গোপন ডেরায় এ বার হামলা চালাল আমেরিকার বোমারু বিমান। তাঁদের গুপ্তঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিতে পশ্চিম এশিয়ার আকাশে দাপিয়ে বেড়িয়েছে ওয়াশিংটনের পাঠানো ‘বি-২ স্পিরিট’। যার একসঙ্গে কেজি কেজি বোমা নিয়ে ওড়ার ক্ষমতা রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এই বোমারু বিমান পরমাণু হামলাতেও সমান দক্ষ।

০২ ২২
US B 2 Spirit stealth bomber attacked on Houthis hideouts in Yemen know its firepower

হুথির কোমর ভাঙতে আমেরিকার অতি শক্তিশালী বি-২ স্পিরিটের ব্যবহারে উঠেছে একাধিক প্রশ্ন। গত এক বছর ধরে ইয়েমেনের এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী বিভিন্ন সময়ে ইজ়রায়েলের উপর হামলা চালিয়েছে। ইহুদিদের সমূলে ধ্বংস করতে ‘হাইপারসোনিক’ ক্ষেপণাস্ত্র (শব্দের চেয়ে পাঁচ গুণ বা তার বেশি গতিসম্পন্ন) ছুড়তেও পিছপা হয়নি ইরান সমর্থিত হুথিরা।

Advertisement
০৩ ২২
US B 2 Spirit stealth bomber attacked on Houthis hideouts in Yemen know its firepower

এই আবহে হঠাৎ করেই ইয়েমেনের বিদ্রোহীদের গুপ্ত ঘাঁটি উড়িয়ে দিতে পেন্টাগনের বি-২ নামানো নিয়ে মুখ কুঁচকেছেন তাবড় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা। তবে কি ইজ়রায়েলের হয়ে সরাসরি পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধে জড়াতে চাইছে আমেরিকা? প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। পাশাপাশি, আমেরিকার অত্যাধুনিক বোমারু বিমানটিকে নিয়ে দুনিয়া জুড়ে শুরু হয়েছে আলোচনা।

০৪ ২২

১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বি-২ বোমারু বিমান ব্যবহার করছে আমেরিকান বায়ুসেনা। যার পরিচিতি ‘স্টেল্‌থ বম্বার’ হিসাবে। স্টেল্থ শব্দটির আভিধানিক অর্থ হল চুরি বা গোপনীয়তা। দুনিয়ার সেরা রাডারের চোখে ধুলো দিয়ে শত্রু দেশে ঢুকে কার্পেট বিছানোর মতো বোমাবর্ষণ করতে পারে বি-২। আর তাই এর এমন নামকরণ করা হয়েছে।

০৫ ২২

বি-২ স্পিরিটের আকৃতি অন্যান্য যুদ্ধবিমানের নিরিখে অনেকটাই আলাদা। অদ্ভুত দেখতে এই বোমারু বিমানটির নির্মাণকারী সংস্থা নাম ‘নর্থরপ’। পরবর্তীকালে যা ‘নর্থরপ গ্রুমম্যান’ নামে পরিচিতি পায়। স্টেল্‌থ বম্বারটির নকশা তৈরিতে হাত রয়েছে বোয়িং, হিউজ ও ভাউটের মতো যুদ্ধবিমান নির্মাণকারী সংস্থার।

০৬ ২২

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি, রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) কথা মাথায় রেখে বি-২ স্পিরিটকে তৈরি করা হয়েছে। ফলে যে সমস্ত দেশের হাতে যুদ্ধবিমানকে গুলি করে নামানোর হাতিয়ার রয়েছে, সেখানে গিয়েও বোমাবর্ষণ করতে পারবে এই স্টেল্‌থ বম্বার। এতে রয়েছে সাবসনিক ফ্লায়িং উইং। এই বোমারু বিমানকে ওড়াতে দু’জন চালকের প্রয়োজন হয়।

০৭ ২২

১৯৮৭ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে বি-২ স্পিরিট তৈরি এবং তা উন্নত করে আমেরিকা। যা এখনও ব্যবহার করেছে ওয়াশিংটনের বায়ুসেনা। বোমারু বিমানটি প্রথাগত ও থার্মো পরমাণু, দু’ধরনের বোমাই শত্রুদের উপর ফেলতে সক্ষম। ৮০টি ৫০০ পাউন্ডের (২৩০ কেজি) এমকে ৮২ জেডিএএম জিপিএস গাইডেড বোমা নিয়ে উড়তে পারে এই যুদ্ধবিমান।

০৮ ২২

অন্য ধরনের হাতিয়ারের মধ্যে রয়েছে বি-৮৩ পরমাণু বোমা। একসঙ্গে এই ধরনের আণবিক ১৬টি বোমা নিয়ে ওড়ার ও শত্রুব্যূহে তা ফেলে আসার ক্ষমতা রয়েছে বি-২ স্পিরিটের। যার এক একটির ওজন ২ হাজার ৪০০ পাউন্ড বা ১ হাজার ১০০ কেজি।

০৯ ২২

বি-২ একমাত্র যুদ্ধবিমান, যা বর্তমানে স্টিলথ কনফিগারেশনের বড় আকারের এয়ার-টু-সার্ফেস স্ট্যান্ড অফ অস্ত্র বহনে সক্ষম। গত শতাব্দীর আশির দশকে ‘বি-১এ’ বোমারু বিমানের ব্যবহার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় আমেরিকার সরকার। তখনই বি-২ স্পিরিট তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল সেখানকার সামরিক সদর দফতর পেন্টাগন। সেই মতো ‘অ্যাডভান্সড টেকনোলজি বম্বার’ বা এটিবি প্রকল্প শুরু করে ওয়াশিংটন।

১০ ২২

প্রাথমিক ভাবে ২১টি বি-২ বোমারু বিমান তৈরির পরিকল্পনা করেছিল আমেরিকা। পরবর্তীকালে যার সংখ্যা বৃদ্ধি করেছিল পেন্টাগন। এর জন্য আশির দশকে আনুমানিক খরচ ধরা হয় ২১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। সূত্রের খবর, এক একটি স্টেল্‌থ বম্বার নির্মাণে ওয়াশিংটনকে কোষাগার থেকে দিতে হয়েছিল ৭ হাজার ৩৭০ লাখ ডলার।

১১ ২২

১৯৮৯ সালের ১৭ জুলাই প্রথম বার আকাশে উড়েছিল বি-২ বোমারু বিমান। এর পর বেশ কয়েক বার পরীক্ষার পর ১৯৯৭ সালে আমেরিকার বায়ুসেনার অস্ত্রাগারে চলে আসে এই স্টেল্‌থ বম্বার। মাটি থেকে প্রায় ৫০ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়তে পারে বি-২ স্পিরিট। মাঝ আকাশে একবার মাত্র জ্বালানি ভরে ১০ হাজার নটিক্যাল মাইল চলে যেতে পারে আমেরিকার এই যুদ্ধবিমান। সমতল ভূমিতে যা প্রায় ১৯ হাজার কিলোমিটারের সমান।

১২ ২২

১৯৯৯ সালের কসোভো যুদ্ধে বি-২ বোমারু বিমান ব্যবহার করেছিল আমেরিকান বায়ুসেনা। এ ছাড়া ইরান, আফগানিস্তান ও লিবিয়ার যুদ্ধেও এটিকে ব্যবহার করা হয়েছে। বর্তমানে আমেরিকার বায়ুসেনার হাতে ১৯টি বি-২ বোমারু বিমান রয়েছে। ২০৩২ সাল পর্যন্ত এই বিমানগুলিকে ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে ওয়াশিংটনের। তার পর নর্থরপ গ্রুমম্যানের তৈরি ‘বি-২১ রাইডার’ বোমারু বিমান এগুলির স্থালাভিষিক্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

১৩ ২২

আমেরিকার সেনাকর্তারা জানিয়েছেন, লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে যুদ্ধ ও মালবাহী জাহাজগুলিকে ক্রমাগত নিশানা করছিল হুথিরা। আর তাই বি-২ বোমারু বিমান দিয়ে তাঁদের উপর আঘাত হানা হয়েছে। মূলত বিদ্রোহীর হাতিয়ারের গুদাম ও গোপন ডেরাগুলি উড়িয়ে দিতে স্টেল্‌থ বম্বারটি ব্যবহার করেছে পেন্টাগন। বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ভোরে ইয়েমেনে আকাশসীমায় ঢুকে হামলা চালায় বি-২ বোমারু বিমান।

১৪ ২২

বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন আমেরিকার প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন। ইরানের মদতপুষ্ট হুথিদের উপর যে এ রকমের আক্রমণ জারি থাকবে, তা স্পষ্ট করেছেন তিনি। চলতি বছরের অক্টোবরে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার ইয়েমেনের বিদ্রোহীদের উপর হামলা চালাল আমেরিকার বায়ুসেনা। আগের বার অবশ্য জেট যুদ্ধবিমান ব্যবহার করেছিল ওয়াশিংটন।

১৫ ২২

ইয়েমেনের আকাশ চিরে বি-২ বোমারু বিমানগুলি ঘাঁটিতে ফিরে আসার পর লয়েড অস্টিন বলেন, ‘‘এটা ছিল আমেরিকার ক্ষমতা প্রদর্শনের ছোট্ট একটা নিদর্শন। আমরা যে কোনও জায়গায় গিয়ে শত্রুদের নিকেশ করতে পারি। তাঁরা যত গভীরে বা গুপ্ত জায়গায় লুকিয়ে থাকুক না কেন। আমাদের হাতে এমন কিছু হাতিয়ার রয়েছে, যাতে কোনও ভাবেই নিস্তার পাওয়া সম্ভব নয়।’’

১৬ ২২

এ বছরের সেপ্টেম্বর লোহিত ও এডেন উপসাগরে মোতায়েন আমেরিকান নৌসেনার তিনটি ‘ডেস্ট্রয়ার’ যুদ্ধজাহাজকে নিশানা করে হুথিরা। সেগুলিকে ধ্বংস করতে অন্তত দু’ডজন ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল ইয়েমেনের এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী। তারই পাল্টা হিসেবে এ বার বি-২ বোমারু বিমান দিয়ে হামলা চালিয়েছে আমেরিকা, মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

১৭ ২২

হামাস, হিজ়বুল্লা ও হুথি, এই তিনটি জঙ্গি গোষ্ঠিকে ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে ইরান। তিন দিক থেকে ইহুদি দেশটির উপর রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে তাঁরা। এ ছাড়া সম্প্রতি নিজেদের জমি থেকেও ইজ়রায়েলের উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে শিয়া ফৌজ।

১৮ ২২

সমর বিশেষজ্ঞেরা হামাস, হিজ়বুল্লা ও হুথিকে ‘থ্রি এইচ’ বলে উল্লেখ করছেন। যার মধ্যে প্রথম দু’টিকে পুরোপুরি শেষ করতে গাজ়া ও লেবাননে বিমান হামলা ও গ্রাউন্ড অপারেশন শুরু করেছে ইহুদি সেনা। পাশাপাশি, ইরান-সহ এই ‘থ্রি এইচ’-এর ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট হামলা ঠেকাতে আমেরিকার থেকে ‘থাড’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হাতে পেয়েছে ইজ়রায়েলি ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ।

১৯ ২২

ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলার পর ইরানের উপর প্রত্যাঘাত শানানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তার আগে আইডিএফের কাছে থাড পৌঁছনোকে তাৎপর্যপূর্ণ বলছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা। এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) সঙ্গে ইহুদি ভূমিতে সেনাও পাঠিয়েছে পেন্টাগন। থ্রি এইচ বা শিয়া ফৌজের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রকে মাঝ আকাশে ধ্বংস করতে আমেরিকার সৈন্যরাই থাড ব্যবহার করবেন বলে জানা গিয়েছে।

২০ ২২

বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই পরিস্থিতিতে নতুন করে ইহুদি ভূমিতে বড় আকারের আক্রমণ শানানো ইরানের পক্ষে কঠিন। কারণ, তাতে আমেরিকান সেনার মৃত্যু হলে সরাসরি যুদ্ধে নামতে পারে ওয়াশিংটন। হুথিদের উপর হামলা তারই মহড়া বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

২১ ২২

আমেরিকার মতো বর্তমানে বোমারু বিমান রয়েছে রাশিয়া ও চিনের বায়ুসেনার কাছেও। মস্কোর হাতে আছে ‘টুপলেভ টিইউ-১৬০’ ও ‘টুপলেভ টিইউ-৯৫’ বোমারু বিমান। আর শিয়ান এইচ-২০ নামের স্টেল্‌থ বম্বার ব্যবহার করে বেজিংয়ের পিপলস্ লিবারেশন আর্মি বা পিএলএর বায়ুসেনা। চিনা বোমারু বিমানটিকে আমেরিকার বি-২ স্পিরিটের নকল বলে মনে করেন অনেক প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞই।

২২ ২২

বর্তমানে ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে এই ধরনের বোমারু বিমান নেই। এই ধরনের যুদ্ধবিমান কেনার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে কথাবার্তা চলেছে বলে জানা গিয়েছে। তবে ভারতীয় বায়ুসেনা যে জেট যুদ্ধবিমানগুলি ব্যবহার করে তার মধ্যে বেশ কয়েকটি পরমাণু হাতিয়ার বহনে সক্ষম। সেই তালিকায় প্রথমেই আসবে ফরাসি সংস্থার তৈরি ‘রাফাল’-এর নাম।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement