অজয় বিজলি। ভারতের সবচেয়ে সফল এবং জনপ্রিয় সিনেমাহল সংস্থা বা ‘মাল্টিপ্লেক্স’-এর মালিক। সংস্থার চেয়ারম্যানও তিনিই। ১৯৯৫ সালে এই সংস্থা চালু করেন অজয়। ৩০ বছর না পেরোতেই তিনি এক বিশাল ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের মালিক।
অজয়ের সংস্থাকে বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে বড় সিনেমাহল সংস্থা বলে মনে করা হয়। সংস্থার মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা।
দিল্লির ছেলে অজয় দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু কলেজ থেকে স্নাতক হন। তাঁর বাবা দিল্লিতেই ‘অমৃতসর ট্রান্সপোর্ট’ নামে একটি পরিবহণ সংস্থার মালিক ছিলেন। ধনী পরিবারের ছেলে হওয়ার কারণে দারিদ্র কী তা কখনও চোখেই দেখেননি অজয়।
কলেজে পড়ার সময় থেকেই বাবার উপহার দেওয়া দামি গাড়ি চাপতেন অজয়। সেই সময়েই তাঁর গ্যারাজে একাধিক গাড়ি ছিল। বিয়ের সময় অজয়কে একটি বিলাসবহুল মার্সিডিজ় উপহার দিয়েছিলেন তাঁর বাবা।
পড়াশোনা শেষ করার পর অজয়কে দিল্লির বসন্ত বিহারে একটি সিনেমাহল খুলে দেন তাঁর বাবা। রমরমিয়েই চলছিল বিজলি পরিবারের দ্বিতীয় ব্যবসা। এর মধ্যেই ১৯৯২ সালে অজয়ের বাবা মারা যান।
বাবার আকস্মিক মৃত্যুতে চোখে সর্ষে ফুল দেখেন অজয়। এটিই তাঁর জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায় ছিল বলে মনে করেন তিনি।
বাবার রেখে যাওয়া পরিবহণ ব্যবসায় বিশেষ আগ্রহ ছিল না অজয়ের। বেশি আকর্ষণ ছিল সিনেমাহলের প্রতি। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাবার তৈরি করা ব্যবসা একা হাতে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।
১৯৯৩ সালে হঠাৎই এক দিন অজয়দের পরিবহণ সংস্থায় আগুন ধরে যায়। পুড়ে ছাই হয়ে যায় অনেকগুলি গাড়ি। ক্ষতি হয়ে যায় বহু কোটি টাকার।
ক্ষতির মুখে পড়ে পরিবহণ সংস্থায় তালা ঝোলাতে বাধ্য হন অজয়। তবে কঠিন সময়ে তিনি ভেঙে পড়েননি। বুঝেছিলেন তাঁকে আরও শক্ত হাতে সিনেমাহলের ব্যবসার হাল ধরতে হবে।
নতুন নতুন গাড়ির শখ ছিল অজয়ের। কিন্তু পরিবহণ সংস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিনি গাড়ি কেনা বন্ধ করে দেন। এমনকি বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল গাড়ি বিক্রিও করে দেন।
১৯৯৫ সালে হলিউডের এক প্রযোজকের সঙ্গে দেখা করেন অজয়। ওই প্রযোজক তাঁকে অস্ট্রেলিয়ার এক প্রযোজনা সংস্থার মালিকের পরিচয় করিয়ে দেন।
এর পর ওই প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে দেশ জুড়ে একাধিক সিনেমাহল তৈরির সিদ্ধান্ত নেন অজয়। অস্ট্রেলিয়ার ওই সংস্থা ব্যবসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তিনি নিজেই ওই ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
কোভিড আবহে ক্ষতির মুখে পড়়েছিল তাঁর সংস্থাও। কিন্তু সেই ঝড় নিপুণ হাতে সামলেছেন অজয়।
কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই ভারতের অন্য এক সিনেমাহল সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন অজয়। বর্তমানে দেশে তাদের ১৬৫০টি স্ক্রিন রয়েছে। সম্প্রতি ভারতের প্রথম মাল্টিপ্লেক্স থিয়েটারের পুনর্গঠন করছেন অজয়।
সম্প্রতি পুরুষদের জুতো এবং প্রসাধন সামগ্রীর একটি সংস্থাতেও বিনিয়োগ করেছেন এই ভারতীয় ধনকুবের। অজয়ের ছেলে আমির বিজলির মালিকানাধীন সংস্থাও সদ্য ১০০ কোটি টাকার ক্লাবে প্রবেশ করেছে।
আমিরের সংস্থা অনলাইন স্টোরগুলিতে জামাকাপড় এবং জুতো বিক্রি করে। খুব শীঘ্রই দেশের বড় শহরগুলিতে ব্যবসা করার কথা জানিয়েছেন আমির।
১৯৯০ সালে অজয় তাঁর ছোটবেলার বান্ধবী সেলিনাকে বিয়ে করেন। দম্পতির তিনটি সন্তান রয়েছে। আমির, নীহারিকা এবং নেহা।