জন্ম ১৮৭৭ সালে। বয়স তার ১৪৮। এই ১৪৮ বছরে টেস্ট ক্রিকেট দেখেছে নানা রেকর্ড। সাক্ষী থেকেছে অদ্ভুত সব ঘটনার। মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড ম্যাচের মধ্য দিয়ে ক্রিকেটের যে সবচেয়ে বড় ফর্ম্যাটের জন্ম, সেই টেস্ট ক্রিকেট আজও ‘যুবক’। ১৪৮ বছরেও তার আভিজাত্য কমেনি এতটুকু।
এ পর্যন্ত এক ডজন দেশ ২৩০০-রও বেশি বার পাঁচ দিনের এই ফর্ম্যাটে মুখোমুখি হয়েছে। এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে ইংল্যান্ড। তবে সবচেয়ে বেশি টেস্ট ম্যাচ জিতেছে অস্ট্রেলিয়া।
১৪৮ বছরে ক্রিকেটের সবচেয়ে লম্বা এই ফর্ম্যাট দেখেছে বহু প্রবাদপ্রতিম ক্রিকেটারকে। ২২ গজে তাঁরা গড়েছেন বহু রেকর্ড। সে সব রেকর্ডের মধ্যে বহু রেকর্ড ভাঙা হয়েছে। তবে বেশ কিছু রেকর্ড রয়েছে, যেগুলি এখনও ভাঙা সম্ভব হয়নি।
এর মধ্যে কোনও রেকর্ডের বয়স ১১২ বছর, কোনওটির ১৪০ বছর তো কোনওটির ১৪৮ বছর! এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এমনই পাঁচ রেকর্ড, যেগুলি বহু বছর অক্ষত তো রয়েইছে, ভবিষ্যতেও এগুলি ভাঙার সম্ভাবনা বেশ কম।
কেরিয়ারে একটাই টেস্ট শতরান, তা-ও আবার ইতিহাসের প্রথম টেস্ট ম্যাচে। অস্ট্রেলিয়ার চার্লস ব্যানারম্যানের নামের পাশে এই নজির থাকবে চিরকাল।
১৮৭৭ সালের সেই ম্যাচে প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া করে ২৪৫ রান। এর মধ্যে একা ব্যানারম্যানই করেন ১৬৫ রান। শতাংশের হিসাবে যা ৬৭.৩৪।
এর পর শেষ হওয়া ইনিংসে শতাংশের হিসাবে আজ পর্যন্ত কেউ আর এর চেয়ে বেশি অবদান রাখতে পারেননি। ১৯৯৮-৯৯ মরসুমে অস্ট্রেলিয়ারই মাইকেল স্লেটার এই রেকর্ড ভাঙার সবচেয়ে কাছাকাছি পৌঁছেছিলেন। সে বার দলের ১৮৪ রানের মধ্যে ১২৩ রান করেছিলেন তিনি। শতাংশের হিসাবে যা ৬৬.৩৪ শতাংশ। তবে অক্ষতই রয়ে যায় ব্যানারম্যানের রেকর্ড।
১৮৮৪ সালের অগস্ট মাস। লন্ডনে খেলা চলছে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার। ইংল্যান্ডের নেতৃত্বে ছিলেন ডব্লিউ জি গ্রেস। সেই ম্যাচে প্রথম ব্যাট করে ৫৫১ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দলের ১১ জনকে দিয়েই বল করান গ্রেস।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে ইংল্যান্ড। ১৮১ রানের মধ্যে পড়ে যায় তাঁদের ৮ উইকেট। সেই সময়ে ১০ নম্বরে ব্যাট করতে নামেন ওয়াল্টার রিড। উপরের দিকে ব্যাট করতে না পেরে তিনি এতটাই বিরক্ত ছিলেন যে তাঁর যাবতীয় রাগ ঝরে পড়ে ২২ গজে।
বিধ্বংসী ব্যাটিং করে ১১৭ রান করেন রিড। ক্রিকেটের ইতিহাসে এর পর আরও তিন ব্যাটসম্যান ১০ নম্বরে নেমে শতরান করলেও রিডের ১১৭ রানের রেকর্ড আজও অক্ষত।
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে হ্যাটট্রিক হয়েছে বহু বার। এর মধ্যে চার বোলারের দু’বার করে হ্যাটট্রিক করার নজিরও রয়েছে। তবে অস্ট্রেলিয়ার লেগস্পিনার জিমি ম্যাথিউজ়ের যে রেকর্ড রয়েছে, তা আর কারও নেই। একমাত্র বোলার হিসাবে দু’ইনিংসেই হ্যাটট্রিকের রেকর্ড রয়েছে তাঁর।
ম্যাঞ্চেস্টারে ১৯১২ সালে মুখোমুখি হয় অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। ওই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে রোলান্ড বিউমন্ট, সিড পেগলার এবং টমি ওয়ার্ডকে পর পর তিন বলে আউট করেন জিমি ম্যাথিউজ়।
ফলো অনে ব্যাট করতে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা। ওই ইনিংসে হার্বি টেলর, রেজি সোয়ার্ৎজ় এবং টমি ওয়ার্ডকে পর পর তিন বলে আউট করেন ম্যাথিউজ়।
তবে ম্যাথিউজ়ের রেকর্ড অনন্য অন্য একটি কারণেও। দুই ইনিংসে যে ছ’জনকে তিনি আউট করেছিলেন, কোনও ক্ষেত্রেই অন্য কোনও ফিল্ডারের সহায়তা লাগেনি তাঁর। দু’টি আউট বোল্ড, দু’টি এলবিডব্লিউ এবং দু’টি কট অ্যান্ড বোল্ড করেন তিনি। ১১৩ বছর পরেও অক্ষত সেই রেকর্ড।
১৯৫৬ সাল। ম্যাঞ্চেষ্টারে চলছে অ্যাসেজের চতুর্থ টেস্ট। সেই টেস্টে এক ম্যাচে সর্বাধিক উইকেটের রেকর্ডটি করেন ইংল্যান্ডের জিম লেকার।
সেই টেস্টে ইংল্যান্ড প্রথমে ব্যাট করে ৪৫৯ রান করে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ডানহাতি অফস্পিনারের ঘূর্ণিতে উড়ে যায় রিচি বেনোর অস্ট্রেলিয়া। মাত্র ৮৪ রানে শেষ হয় তাদের ইনিংস। লেকার একাই নেন ৯টি উইকেট।
ফলো অনে ব্যাট করতে নেমে আবার লেকারের জাদুতে কানাগলিতে হারিয়ে যায় অসি ব্যাটিং। এ বার অসি ইনিংসের সব ক’টি উইকেটই নেন লেকার। ইনিংসে ৯০ রানে ১৯ উইকেট নেন লেকার। পরবর্তী কালে অনিল কুম্বলে-অজাজ পটেলরা ইনিংসে ১০ উইকেটের রেকর্ড স্পর্শ করলেও ইনিংসে ১৯ উইকেট নিতে পারেননি কেউই। ৬৯ বছর পরেও অধরা এই রেকর্ড।
তালিকার পাঁচ নম্বরে থাকবে ব্রায়ান লারার নাম। ২০০৪ সালে অ্যান্টিগায় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৪০০ রান করেন তিনি। তিনিই একমাত্র ক্রিকেটার যাঁর নামের পাশে কোয়াড্রা সেঞ্চুরির রেকর্ড রয়েছে।
চার ম্যাচের সিরিজ়ের শেষ ম্যাচে এই রেকর্ড করেন লারা। তিনি ভাঙেন অস্ট্রেলীয় বাঁহাতি ব্যাটার ম্যাথু হেডেনের ৩৮০ রানের রেকর্ড। হেডেন আবার ভেঙেছিলেন লারারই ৩৭৫ রানের রেকর্ড, যা তিনি তৈরি করেছিলেন একই বিপক্ষের বিরুদ্ধে ওই একই মাঠে।
৪০০ রানের ইনিংস খেলার সময় ৫৮২ বল খেলেছিলেন এই বাঁহাতি ক্যারিবীয়। অর্থাৎ প্রায় ১০০ ওভার ব্যাট করেছিলেন তিনি। আধুনিক টি২০ ক্রিকেটের যুগে এত ক্ষণ ব্যাট করা যে কোনও ব্যাটারের কাছেই বেশ কঠিন। এর প্রধান কারণ মানসিকতার পরিবর্তন। ফলে লারার ২১ বছরের পুরনো এই রেকর্ড ভাঙা বেশ কঠিন।