সাফল্য তাঁর সঙ্গে হাত ধরাধরি করে চলেছে। তবে বিতর্কও পিছু ছাড়েনি। বার বার বিতর্কে জড়িয়েছেন ইংল্যান্ডের বক্সার টাইসন ফিউরি। কখনও বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন, নীতিপুলিশি করেছেন। কখনও আবার অবাধ যৌনতার অভিজ্ঞতা শুনিয়েছেন। তার পরেও ফিরে এসেছেন রিংয়ে। দু’বার বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন।
নাম টাইসন লিউক ফিউরি। ১৯৮৮ সালের ১২ অগস্ট ম্যাঞ্চেস্টারে জন্ম টাইসনের। তাঁর বাবা-মা আদতে আয়ারল্যান্ডের। খুব অল্প বয়সেই তাঁরা চলে এসেছিলেন ইংল্যান্ডে।
নির্ধারিত সময়ের তিন মাস আগে জন্মেছিলেন টাইসন। ওজন ছিল মাত্র ৪৫০ গ্রাম। বাঁচার খুব একটা আশা ছিল না। সে সময় বক্সিং রিং কাঁপাচ্ছিলেন আমেরিকার মাইক টাইসন। তাঁর নামেই ছেলের নাম রাখেন বাবা জন ফিউরি।
টাইসনের আগে আরও দু’টি মেয়ের জন্ম দিয়েছিলেন মা অ্যাম্বার ফিউরি। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগে জন্মানোর কারণে দু’টি মেয়েই মারা যায়। টাইসন অবশ্য জন্ম থেকেই ছিলেন লড়াকু। সময়ের আগে জন্মেও তাই লড়াইটা জিতেছিলেন।
টাইসনের বাবাও ছিলেন পেশাদার বক্সার। টাইসনের সৎভাই টমিও ছিলেন বক্সার।
২০০৮ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে প্রথম বার এবিএ সুপার-হেভিওয়েট খেতাব জিতেছিলেন টাইসন। এর পরেই পেশাদার বক্সিং জগতে প্রবেশ করেন। ২০১১ সালে ব্রিটিশ এবং কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন তিনি।
সেই ২০১১ থেকেই বার বার বিতর্কে জড়িয়েছেন টাইসন। ২০১৫ সালে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, নিজের বোন অশালীন আচরণ করলে তাঁকেও ফাঁসিতে ঝোলাতে পিছপা হবেন না।
নীতিপুলিশির পাশাপাশি টাইসন গর্ভপাত, সমকামেরও বিরোধিতা করেছেন প্রকাশ্যে। তিনি দাবি করেছেন, এগুলিকে বৈধতা দিলে বাইবেল অমান্য করা হবে।
টাইসন সমকামকে শিশু ধর্ষণের সঙ্গে তুলনা করে বসেন। সেই নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়। ২০১৫ সালে তাঁকে বছরের সেরা ক্রীড়াবিদের সম্মান দিয়েছিল বিবিসি। সেই সম্মান বাতিলের দাবি ওঠে। হাজার হাজার মানুষ পিটিশনে সই করেন।
রূপান্তরকামীদের নিয়েও বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন টাইসন। সেই নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন। পরে একটি অনুষ্ঠানে এসে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন টাইসন। বলেছিলেন, ‘‘আমি কারও মনে আঘাত দিতে চাইনি। কারও আঘাত লাগলে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি।’’
আবার এই টাইসনই একটি সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন, অন্তত ৫০০ মহিলার সঙ্গে সহবাস করেছেন। এক এক জনের সঙ্গে দু’ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সংসর্গ করেছেন বলে দাবি করেন।
এক বার একটি বক্সিং ম্যাচের আগে টাইসন টুইটারে জানিয়েছিলেন তাঁর জয়ের রহস্য। লিখেছিলেন, ‘‘বহু বার সহবাসের কারণে ফিটনেস বাড়ে। পেশির শক্তি বাড়ে।’’
পরে আবার সেই নিয়ে একটি সাক্ষাৎকারে শোক প্রকাশও করেছিলেন টাইসন। বলেছিলেন, ‘‘আমি এক জন মিথ্যাবাদী, ঠগ, অহঙ্কারী মানুষ। যা কিছু খারাপ, সবই করেছি বা করি। আমরা সকলেই ভুল করি, করি না কি? আমার আক্ষেপ একটাই, বিয়ের আগে সহবাস।’’
সেই সাক্ষাৎকারে টাইসন আরও বলেছিলেন, ‘‘আমার জীবনের কিছু অংশ মুছে ফেলতে পারলে খুব ভাল হত। আমি অন্তত ৫০০ জনের সঙ্গে সহবাস করেছি। তার বেশিও হতে পারে। আসলে আমি গুনতে পারিনি।’’
এর পরেই টাইসন নিজের বিবেক দংশনের কথা জানিয়েছেন। জানিয়েছেন, অতীতের ওই ভুলের জন্য কতটা কষ্ট পেয়েছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘ও সব ভয়ঙ্কর। এখন ভাবলে অসহ্য লাগে। আমি ধার্মিক নই। তবে মানুষকে ভাল কাজে সাহায্য করতে চাই। সব খারাপ জিনিস আটকাতে চাই।’’
টাইসনের যখন ১৭ বছর বয়স, তখন প্যারিসের সঙ্গে প্রথম বার দেখা হয় তাঁর। প্যারিসের বয়স তখন ১৫। পরবর্তী কালে তিনিই টাইসনের ঘরনি হয়েছেন।
২০০৮ সালে বিয়ে হয় দু’জনের। তিন ছেলে এবং তিন মেয়ে রয়েছে এই দম্পতির। তিন ছেলের নামই প্রিন্স রেখেছেন টাইসন। প্রিয় ফাইটার প্রিন্স নাসিমের নামে।