প্রাক্তন আইপিএস অথা বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষ এবং তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ পুলিশ অফিসারদের সোনা প্রতারণা মামলায় নয়া মোড়। ঘাটাল ট্রেজারিতে থাকা উদ্ধার করা টাকা মেদিনীপুর আদালতে সরানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।
সোনা প্রতারণা মামলায় জড়িত ভারতী ঘোষ ও অন্য পুলিশ অফিসারদের বাড়ি থেকে প্রায় পাঁচ বছর আগে কয়েক কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছিল বলে পুলিশ সূত্রে দাবি। সেই টাকা রাখা ছিল ঘাটাল মহকুমা অফিসের ট্রেজারিতে।
সূত্রের খবর, বন্যার জলে সেই টাকার একটা অংশ নষ্ট হয়ে গিয়েছে! টাকার অঙ্কও নেহাত কম নয়— প্রায় দু’কোটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, মামলার সূত্রে বাজেয়াপ্ত টাকা বন্যার জলে কী ভাবে নষ্ট হল, তাতে কারও গাফিলতি ছিল কি না, তার তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি।
সম্প্রতি সিআইডির পদস্থ আধিকারিক ঘাটালে এসেছিলেন। তবে এ বিষয়ে সিআইডির কেউ মুখ খুলতে চাননি। যদিও ঘাটাল ট্রেজারিতে থাকা বাকি টাকা মেদিনীপুর আদালতে সরানোর প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।
বছর পাঁচেক আগে দাসপুরের সোনা প্রতারণা মামলায় নাম জড়ায় ভারতী এবং তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ একাধিক পুলিশ আধিকারিকের। ভারতী ও তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ পুলিশ অফিসারদের বাড়িতে তল্লাশি চালানোর সময়ে কোটি-কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছিল বলে দাবি সিআইডির।
আদালতের অনুমতি নিয়েই সেই টাকা ঘাটাল মহকুমা ট্রেজারিতে রাখা হয়েছিল। এর দু’বছর আগে পুরনো পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট বাতিল করেছিল কেন্দ্র। কিন্তু সিআইডির দাবি, ভারতী ও তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’দের বাড়ি থেকে পুরনো নোটই উদ্ধার হয়েছিল।
অভিযোগ ছিল, ভারতী ও তাঁর ‘ঘনিষ্ঠেরা’ নোটবন্দির সময়ে পুরনো পাঁচশো ও হাজার টাকার নোটের বদলে সোনা সংগ্রহ করেছিলেন নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে। কিন্তু সবটা বদল করা সম্ভব হয়নি।
২০১৮ সালে তল্লাশিতে মূলত তেমনই নোট উদ্ধার হয় বলে পুলিশ সূত্রে দাবি। বাজেয়াপ্ত টাকার মধ্যে ওই বাতিল নোট আদালতের অনুমতি নিয়ে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে বদলেও নেয় সিআইডি।
এখন অভিযোগ, প্রায় দু’কোটি টাকার তেমন নোট নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আদালতের অনুমতি নিয়ে ওই নষ্ট হয়ে যাওয়া নোট উদ্ধারে সক্রিয় হয়েছে সিআইডি।
ভারতীর অবশ্য দাবি, “মামলা বিচারাধীন। তাই মন্তব্য করব না। তবে এটুকু বলব, ওই টাকা আমার নয়। সময়ে সব জানতে পারবেন।”
ঘাটালের মহকুমাশাসকের কার্যালয়েই রয়েছে ট্রেজারি। ঘাটালে বন্যা প্রতি বছরের ঘটনা হলেও জল সচরাচর ওই ট্রেজারিতে ঢোকে না।
কিন্তু ২০২১ সালের বন্যায়, গভীর রাতে মহকুমাশাসকের অফিস সংলগ্ন দেওয়াল ভেঙে আচমকাই জলমগ্ন হয় গোটা দফতর।
তখনই ওই প্রায় দু’কোটি টাকা জলে নষ্ট হয়ে যায় বলে প্রশাসনের এক সূত্রের দাবি। এমন ঘটনা কী করে ঘটল, বন্যার জল ট্রেজারিতে ঢোকার পরেই বা প্রশাসন কতটা তৎপর হয়েছিল, সেই সব প্রশ্ন ইতিমধ্যেই উঠতে শুরু করেছে।
ঘাটাল মহকুমা বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুজিত হাজরা বলেন, ‘‘বন্যার জলে টাকা নষ্ট হয়ে গেলে তৎক্ষণাৎ কী প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তা তদন্ত-সাপেক্ষ। তবে কেউ দায় এড়াতে পারেন না।’’
ঘাটালের মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাসের দাবি, ‘‘গভীর রাতে জল ঢুকেছিল অফিসে। তখন পরিস্থিতি মোকাবিলায় যাবতীয় পদক্ষেপ করা হয়েছিল।’’
পুলিশ সূত্রে অভিযোগ, নোটবন্দির সময়ে পুরনো পাঁচশো-হাজার টাকার নোট দিয়ে চড়া দামে সোনা কেনার চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ভারতী, ঘাটাল ও দাসপুরের প্রাক্তন ওসি, সিআই-সহ বেশ কয়েক জন। সকলেই এখন জামিনে মুক্ত।
তখন সোনার গয়না ছাড়াও উদ্ধার হওয়া টাকা গুনে দেখা গিয়েছিল, তার অঙ্ক কমবেশি ছ’কোটি। আদালতের অনুমতি নিয়ে ট্রাঙ্কভর্তি সেই টাকা রাখা হয়েছিল ঘাটাল ট্রেজারিতে।
তবে মামলাটি এর মধ্যেই ঘাটাল থেকে মেদিনীপুর আদালতে স্থানান্তরিত হয়েছে।
আর অভিযোগ প্রসঙ্গে ভারতীর দাবি, ওই টাকা আদৌ তাঁর নয়।