ভাইব্রেনিয়ামের বিষয়ে জানা আছে? কেউ যদি মার্ভেলসের কমিকস্ বা সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের ভক্ত হন, তা হলে নিশ্চয়ই জানা আছে। এই ধাতুর জোরেই মহান শক্তির অধিকারী ক্যাপ্টেন আমেরিকা, ব্ল্যাক প্যান্থাররা। ভাইব্রেনিয়াম হল একটি কল্পধাতু। অর্থাৎ, মার্ভেলের স্রষ্টাদের কল্পনার বাইরে বাস্তবে এই ধাতুর কোনও অস্তিত্ব নেই।
মার্ভেল স্রষ্টারা এই ধাতুকে বিশ্বের সব থেকে শক্তিশালী ধাতু হিসাবে দেখিয়েছেন। এই ধাতুর ‘ম্যাজিকে’ পৃথিবীর তথ্যপ্রযুক্তির দিশা বদলে যেতে পারে বলেও মার্ভেল স্রষ্টারা তাঁদের গল্পগুলিতে বর্ণনা করেছেন।
বাস্তবে এই ধাতুর কোনও অস্তিত্ব না থাকলেও সম্প্রতি নাকি এই ধাতু পাওয়া গিয়েছে আফ্রিকা মহাদেশের কঙ্গোতে! সেই নিয়ে কয়েকটি ভিডিয়োও সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে সকলের নজর কেড়েছে। যদিও সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।
গত ২১ জানুয়ারি ‘আফ্রিকা আর্কাইভস’ নামের এক টুইটার হ্যান্ডল থেকে এই ভিডিয়োগুলি শেয়ার করা হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে দুই ব্যক্তি দু’টি পাথর হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। আর একটির সঙ্গে অন্যটি ছোঁয়াতেই তৈরি হচ্ছে বিদ্যুৎ স্ফুলিঙ্গ। যেমনটা মার্ভেলসে্র গল্পে ভাইব্রেনিয়ামের সম্পর্কে বলা হয়েছে।
অন্য একটি ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, ওই পাথর স্পর্শ করিয়ে একটি ছোট বাল্ব জ্বালিয়ে দেওয়া যাচ্ছে কোনও বৈদ্যুতিক সংযোগ ছাড়াই।
এই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই সমাজমাধ্যমে ঝড় উঠেছে। জোর তরজা শুরু হয়েছে মার্ভেল অনুরাগীদের মধ্যে।
ওই টুইটার হ্যান্ডল থেকে দাবি করা হচ্ছে, এই পাথরের একটি এক গ্রামের টুকরো নাকি, টানা ৭২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে একটি বাল্ব জ্বালিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
এই ‘রহস্য’ পাথরের এক কেজি অন্তত দু’মাস দু’কামরার বাড়িতে এক টানা বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যেতে পারবে বলেও দাবি করা হয়েছে।
এই আবহেই প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি অবশেষে সত্যিই মানুষের হাতে উঠে এল অফুরান শক্তির উৎস? ভাইব্রেনিয়ামের অস্তিত্ব কি তবে সত্যিই আছে?
কঙ্গোর বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম কিন্তু অন্য কথা বলছে। সংবাদমাধ্যম ‘নাইরোবি নিউজ়’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই তড়িদাহিত শিলাগুলি ম্যাগনেটাইট এবং কোয়ার্ৎজ শিলার মিশ্রণ থেকে তৈরি করা হয়েছে। আর এই দুই খনিজের শঙ্কর ধাতুই বিদ্যুৎ স্ফুলিঙ্গের উৎপত্তির কারণ। অর্থাৎ, কঙ্গোতে ভাইব্রেনিয়ামের খোঁজ আদৌ মেলেনি।
এই পাথরের টুকরোর ভিডিয়ো ইন্টারনেটে ভাইরাল হওয়ার পরে, বিশ্বব্যাপী গবেষকরা এই পাথর নিয়ে গবেষণার কাজ শুরু করেছেন।
‘নাইরোবি নিউজ়’-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, এই ধাতুর আসল নাম ভাইব্রানিয়াম নয়। তবে এর অস্তিত্ব রয়েছে এবং এটি কঙ্গোর কাতাঙ্গা অঞ্চলে পাওয়া যায়। এই পাথরের উপর একাধিক গবেষণা নাকি আগেও করা হয়েছে।
এই পাথরের শক্তি ধরে রাখার ক্ষমতা রয়েছে বলেও বিভিন্ন জায়গায় দাবি করা হয়েছে। অনেকের দাবি, নির্দিষ্ট মাত্রার শব্দের কারণে এই পাথরের মধ্যে দিয়ে বৈদ্যুতিক স্রোত প্রবাহিত হতে পারে।
এই সম্ভাব্য আবিষ্কারের পরে, কঙ্গোর বাসিন্দারা আশাবাদী যে, এই পাথরগুলি একটি নতুন শক্তির উৎস হয়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি এই পাথর জীবাশ্ম জ্বালানির উপর থেকে বিশ্বের নির্ভরশীলতাও কমাতে পারে বলে দাবি করা হচ্ছে।
যদিও বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী এই পাথরের উৎস অজানা বলেই ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। কঙ্গো খনিজ সম্পদের জন্য বিখ্যাত। কঙ্গোতে কোল্টান, কোবাল্ট, তামা, সোনা, টিন-সহ একাধিক ধাতুর খনি রয়েছে।
কোল্টান এবং কোবাল্ট, এই দুই ধাতুই বৈদ্যুতিন যন্ত্র তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। স্মার্টফোন এবং ল্যাপটপের ক্যাপাসিটর এবং ট্রানজিস্টর তৈরিতে কোল্টানের ব্যবহার হয়। কোবাল্ট ব্যবহার করা হয় ব্যাটারি, চুম্বক এবং উচ্চশক্তির সংকর ধাতু তৈরিতে।
বেশ কিছু বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েবসাইট এবং পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, পৃথিবীতে ভাইব্রেনিয়ামের কোনও অস্তিত্ব নেই। কোথাও কোথাও দাবি করা হয়েছে, এই ধাতু কোনও দিন আবিষ্কারও হওয়া সম্ভব নয়।
গল্পে ভাইব্রেনিয়ামকে ধাতুকে শক্তি শোষক এবং সঞ্চয়ক ধাতু হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। পাশাপাশি এই ধাতুর কিছু অতি ধাতবিক ক্ষমতাও রয়েছে। যদিও তা গল্পের পাতা এবং সিনেমার পর্দাতেই বিদ্যমান।
তবে এই ধাতুর সঙ্গে ভাইব্রেনিয়ামের আশ্চর্য একটি মিল রয়েছে। এই ধাতুর মতোই মার্ভেলসের ভাইব্রেনিয়ামের খনির হদিসও কিন্তু মিলেছিল আফ্রিকাতেই।