প্রেমকাহিনি হোক বা খুন, অথবা ভয়ের গল্প— ছবিনির্মাণের ক্ষেত্রে বিশ্বদরবারে প্রথম সারিতে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। ‘কোরিয়ান ড্রামা’ অথবা রোম্যান্টিক ঘরানার ছবি বা ওয়েব সিরিজ়ের দিক দিয়ে বরাবর দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন কোরিয়ার ছবিনির্মাতারা। কিন্তু থ্রিলারধর্মী ছবির ক্ষেত্রেও যে কোরিয়া পসার গড়ে তুলেছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
কোরিয়ার ছবিনির্মাতারা ড্রামা বা রহস্যধর্মী গল্পের সঙ্গে এমন টানটান চিত্রনাট্যের মিশেল ঘটাতে পারেন যে থ্রিলার ঘরানার ছবি হিসাবে নির্বাচন করলে সেগুলি বিশ্বদরবারে প্রথম সারিতে জায়গা করে নিতে বাধ্য।
কোরিয়ার ছবি বললেই যে ফিল্মের কথা সবার আগে মাথায় আসে তা হল ‘প্যারাসাইট’। দক্ষিণ কোরিয়ার পরিচালক বং জুন-হুর পরিচালনায় তৈরি হয় এই ছবি।
২০১৯ সালের ২১ মে কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘প্যারাসাইট’ ছবিটি দেখানো হয়। তার ন’দিন পর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ছবিটি।
থ্রিলারধর্মী ‘প্যারাসাইট’ ছবির সঙ্গে জুড়ে রয়েছে দুই পরিবারের গল্প, সমাজের বিত্তশালী সম্প্রদায়ের রূপের পাশাপাশি আরও অনেক কিছু। বক্স অফিসে চুটিয়ে ব্যবসা করার পাশাপাশি বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে এই ছবি প্রচুর প্রশংসাও পায়। এমনকি, অস্কারের মঞ্চেও পুরস্কৃত হয় ‘প্যারাসাইট’।
বড় পর্দায় ‘জ়ম্বি’র উপর ছবি রয়েছে প্রচুর। মানুষের শরীরে এক বার কামড় বসালেই শেষ। আবার মানবদেহই তাদের প্রিয় খাদ্য। ভারত থেকে শুরু করে আমেরিকার ছবিনির্মাতারা এই বিষয়ের উপর ছবি তৈরি করেছেন। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার বানানো ছবি যেন অন্য সব ছবিকে টেক্কা দিয়ে বহু দূর এগিয়ে রয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার পরিচালক ইয়ং সাং-হুর পরিচালনায় ২০১৬ সালের মে মাসে মুক্তি পায় ‘ট্রেন টু বুসান’ ছবিটি। থ্রিলারধর্মী এই ছবির সঙ্গে যেমন মিশেছিল ভয়, তেমনই মিশেছিল মনখারাপ। ‘জ়ম্বি’র উপর ছবি দেখতে পছন্দ করলে এই ছবিটি ‘মিস্’ করা একেবারেই উচিত নয়।
প্রথম সারির থ্রিলারধর্মী ছবির তালিকায় রয়েছে বং জুন-হু পরিচালিত আরও একটি ছবি ‘মেমোরিজ় অফ মার্ডার’। ২০০৩ সালে মুক্তি পেয়েছিল এই ছবি। থ্রিলারধর্মী এই ছবির পরত পরতে জড়িয়ে রয়েছে সাসপেন্স।
১৯৮৬ সালে দুই মহিলাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়। এই খুনের তদন্ত করতে শুরু করেন দুই গোয়েন্দা। কিন্তু ওই এলাকায় একই ভাবে খুন হতে থাকে। খুনের নেপথ্যে আসলে কে, তদন্তই বা কী ভাবে করা হচ্ছে সেসব নিয়েই কাহিনি বোনা হয়েছে ‘মেমোরিজ় অফ মার্ডার’ ছবিটি। দক্ষিণ কোরিয়ার থ্রিলারধর্মী ছবির তালিকায় প্রথম সারিতে নাম লিখিয়েছে এই ছবি।
২০১০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় মুক্তি পায় ‘আই স দ্য ডেভিল’ ছবিটি। থ্রিলারধর্মী এই ছবিটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয় প্রায় এক বছর পর। সানডেন্স চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি দেখানো হলে তা দর্শকের নজর কাড়ে।
‘আই স দ্য ডেভিল’ ছবিটি পরে আমেরিকা এবং কানাডার গুটিকতক প্রেক্ষাগৃহেও দেখানো হয়। থ্রিলার ঘরানার এই ছবিটি যে রোমহর্ষক, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই দর্শকের।
শুধু থ্রিলারধর্মী ছবি নয়, দক্ষিণ কোরিয়ার ছবিনির্মাতা জুং জি-উ রোম্যান্টিক ঘরানার ছবির মধ্যেও টানটান ভাব বজায় রেখে দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছে।
২০১৯ সালের অগস্ট মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘টিউন ইন ফর লভ’ নামে রোম্যান্টিক ছবি। এই ছবিতে রয়েছে ড্রামার ছড়াছড়ি।
রোম্যান্স এবং ড্রামা এই দুই ঘরানার স্বাদ একেবারে সুদে-আসলে মিটিয়েছেন জুং জি-উ। থ্রিলারধর্মী না হলেও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম সারির ছবির মধ্যে নাম লিখিয়ে ফেলেছে ‘টিউন ইন ফর লভ’।