রাশিয়ার গুপ্তচর সংস্থার এক শীর্ষস্তরীয় আধিকারিককে কারাবন্দি করেছেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শুক্রবার টুইটারে ওই আধিকারিকের বন্দিদশার খবর জানিয়েছেন রাশিয়ার সুরক্ষা পরিষেবা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আন্দ্রেই সোলদাতোভ। কিন্তু কেন?
ফেডেরাল সিকিউরিটি সার্ভিস অব দ্য রাশিয়ান ফেডারেশন (সংক্ষেপে এফএসবি)-র কর্নেল-জেনারেল সের্গেই বেসেদা নামে ওই আধিকারিক আপাতত মস্কোর অদূরে লেফোরতোভো কারাগারে বন্দি।
জেলে পাঠানোর আগে বেসেদাকে গত মার্চ থেকে গৃহবন্দিও করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু কেন তাঁকে জেলে পোরা হল? এ নিয়ে ক্রেমলিনের তরফে কোনও বিবৃতি জারি করা হয়নি।
পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের গুপ্তচর সংস্থা কেজিবি-র উত্তরসূরির ভূমিকাতেই দেখা গিয়েছে এফএসবি-কে। আগে অবশ্য এর নাম ছিল ফেডেরাল কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (সংক্ষেপে এফএসকে)।
এফএসবি-র পঞ্চম সার্ভিসের প্রধান ৬৮ বছরের বেসেদা ২০০৯ সাল থেকেই এই পদে। রাশিয়ার এই শীর্ষ গোয়েন্দা কর্তাকে জেলে পোরার ঘটনায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বেশ শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
সংবাদমাধ্যমের দাবি, যে লেফোরতোভো কারাগারে বেসেদাকে রাখা হয়েছে, তাতে সাধারণত শত্রুপক্ষের গুপ্তচরদেরই রাখা হয়।
বেসেদার পাশাপাশি তাঁর ডেপুটি আনাতোলি বোলিয়ুখকেও গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল। তবে বেসেদাকে জেলে পোরা হলেও বোলিয়ুখ এই মুহূর্তে কোথায়, তা স্পষ্ট নয়।
বেসেদার বিরুদ্ধে মামলাও রুজু করা হবে বলে দাবি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলির। সূত্রের খবর, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতার দায় চাপানো হয়েছে তাঁর উপর। যদিও এ নিয়ে সরকারি ভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি পুতিন সরকার।
বস্তুত, ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পর থেকে প্রায় দেড় মাস কেটে গিয়েছে। তবে জয় তো দূরের কথা, ইউক্রেনের মাটিতে চরম প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছে পুতিন-বাহিনীকে।
ব্রিটেনের এক সংবাদমাধ্যমের দাবি, পশ্চিমী দুনিয়ার কাছে ইউক্রেন অভিযানের খবর ফাঁস করে দেওয়ার পিছনে কোনও গুপ্তচরের হাত রয়েছে বলে মনে করেন পুতিন।
ওই সংবাদমাধ্যমের আরও দাবি, ইউক্রেন আক্রমণের আগে রাশিয়ার গোয়েন্দারা নাকি পুতিনকে বুঝিয়েছিলেন যে, সে দেশের আমজনতা এই অভিযানকে স্বাগত জানাবে।
তবে বাস্তবে তা হয়নি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির বাহিনীর পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকেরাও ঘরোয়া অস্ত্র নিয়েই পুতিন-বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন।
ইউক্রেনীয়দের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার দায় যে সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থার উপরেই বর্তাবে, তা মনে করছেন সোলদাতোভের মতো আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।
সোলদাতোভ আগেই দাবি করেছিলেন যে রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থায় কোনও গুপ্তচর রয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হবে। ওই গুপ্তচরই ইউক্রেন হামলার পরিকল্পনা ফাঁস করে দিয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখবে ক্রেমলিন।
সোলদাতোভের দাবিই সত্যি হয়েছে। ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যমে তিনি আরও দাবি করেছেন যে রাশিয়ার সামরিক তদন্ত বিভাগ বেসেদার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। যদিও বেসেদাকে আটক বা গ্রেফতারির বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে রাশিয়া।