২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলার রাজনীতিতে অন্যতম ইস্যু হয়ে উঠেছিল সন্দেশখালি। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের এই অঞ্চলকে কেন্দ্র করে অনেক রাজনৈতিক সমীকরণ বোনা হয়েছে মাসের পর মাস ধরে।
ইডির উপরে হামলা, তৃণমূল নেতার গ্রেফতারি, গ্রামবাসীদের আন্দোলন— পর পর ঘটনায় সন্দেশখালি অস্বস্তিতে ফেলেছিল রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলকে। বিজেপি সেই সুযোগ লুফে নেয়।
সন্দেশখালির স্থানীয় মহিলাকেই বসিরহাট কেন্দ্রে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। রেখা পাত্র সন্দেশখালি আন্দোলন থেকেই উঠে এসেছেন বাংলার রাজনীতিতে।
কিন্তু মঙ্গলবারের ফলাফলে দেখা গেল, বসিরহাটে শেষ হাসি হাসতে চলেছে তৃণমূলই। বিপুল ব্যবধানে জিততে চলেছেন বিদায়ী সাংসদ হাজি নুরুল।
বসিরহাটের ফল বলছে, সন্দেশখালি ইস্যু বিজেপির সুবিধা করতে পারেনি। বরং, তা তৃণমূলেরই কাজে লেগেছে। এমনকি, সন্দেশখালি বিধানসভাতেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলেছে।
সন্দেশখালি বিধানসভায় শেষ পর্যন্ত বিজেপি জিতেছে। তবে গণনার সময় একাধিক বার সেখানেও তারা তৃণমূলের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছিল।
গত জানুয়ারি মাসে প্রথম খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিল সন্দেশখালি। সেখানকার তৎকালীন তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতে রেশন ‘দুর্নীতি’র তদন্তে গিয়েছিল ইডি।
কিন্তু সন্দেশখালিতে গিয়ে সে দিন মার খেতে হয়েছিল ইডিকে। শাহজাহানের দেখা তারা পায়নি। তাঁর অনুগামীরা ইডি আধিকারিকদের ঘিরে ধরেন এবং মারধর করেন বলে অভিযোগ।
তার পর থেকে দীর্ঘ দিন নিখোঁজ ছিলেন শাহজাহান। সেই পর্বেই সন্দেশখালিতে তাঁর এবং তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে শুরু হয় গ্রামবাসীদের আন্দোলন।
অভিযোগ, সন্দেশখালিতে ‘রাজত্ব’ চালান শাহজাহান। গ্রামবাসীদের জমি জবরদখল করে মাছের ভেড়ি তৈরি করেছেন তাঁরা। গ্রামে চলে অত্যাচার, তোলাবাজি। এমনকি, শাহজাহান এবং তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ এবং শ্লীলতাহানির অভিযোগও তুলেছিলেন মহিলারা।
অস্বস্তিতে পড়ে কলকাতা থেকে সন্দেশখালিতে গিয়েছিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। গ্রামবাসীদের কেড়ে নেওয়া জমি ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে এসেছিলেন তাঁরা।
পরে ধরা পড়েন শাহজাহানও। রাজ্য পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে আদালতের নির্দেশে তুলে দেয় কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে। বর্তমানে তিনি জেল হেফাজতে রয়েছেন। নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকারও করেছেন।
এই পরিস্থিতিতে ভোটের মুখে প্রকাশ্যে আসে সন্দেশখালির ‘স্টিং ভিডিয়ো’। যেখানে দেখা যায়, স্থানীয় বিজেপি নেতা বলছেন, টাকার বিনিময়ে গ্রামের মহিলাদের দিয়ে তৃণমূলবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলেছিল বিজেপি। (ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)।
পর পর একাধিক ‘স্টিং ভিডিয়ো’ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে সন্দেশখালি থেকে। যার সারবত্তা, শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে টাকা বিলি করা হয়েছিল সন্দেশখালিতে। তার বিনিময়ে তাঁরা স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ভিডিয়োগুলি হাতিয়ার করে পাল্টা মাঠে নেমেছিল তৃণমূল। সন্দেশখালির আন্দোলনকে ‘সাজানো ঘটনা’ বলে কটাক্ষ করে তারা। ‘স্টিং ভিডিয়ো’ প্রকাশ্যে আসার পর দেখা গেল, সন্দেশখালি ‘বুমেরাং’ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিজেপির সামনেই।
অভিযোগ, বিজেপি বসিরহাট কেন্দ্রে যাঁকে প্রার্থী করেছে, সেই রেখাও টাকার বিনিময়ে ধর্ষণের ‘ভুয়ো’ অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। সন্দেশখালির ভাইরাল ভিডিয়োতেও সে কথা স্বীকার করতে দেখা গিয়েছিল স্থানীয় বিজেপি নেতা গঙ্গাধর কয়ালকে। সেই ভিডিয়োর সত্যতাও যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।
অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগে সন্দেশখালির মামলা গড়ায় আদালত পর্যন্ত। শেষ দফায় বসিরহাটে ভোট হয়েছে গত ১ জুন। সে দিনও সন্দেশখালি সারা দিন অশান্ত থেকেছে। ভোটের পরে সেখানে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দুপুর ২টো ৪০ মিনিট পর্যন্ত বসিরহাটে তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুল এক লক্ষ ৯৩ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছেন। বড় অঘটন না ঘটলে তাঁর জয় প্রায় নিশ্চিত।