দুবাই। এই নাম শুনলেই প্রচুর টাকা, তেল, বিলাসবহুল জীবন, বুর্জ খলিফা— এই ছবিগুলিই চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কিন্তু এই বিলাসবহুল জীবনের বাইরেই রয়েছে মরুভূমি। আর মরুভূমির মাঝে রয়েছে এক রহস্যময় গ্রাম।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন এটি বিশ্বের অন্যতম ‘রহস্যময়’ একটি জায়গা। গ্রামটির নাম আল মাদাম।
গ্রামটি নাকি রাতে উধাও হয়ে যায়। আবার সূর্যের আলো ফুটতেই দেখা দেয় সেই গ্রাম। এই জন্য আল মাদাম গ্রামকে ‘ভুতুড়ে গ্রাম’ও বলা হয়। কিন্তু কেন এই ঘটনা ঘটে তার সঠিক কারণ আজও খুঁজে বেড়াচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
গ্রামটির এই ভুতুড়ে ঘটনা চাউর হতেই বিজ্ঞানীরা এর কারণ খুঁজতে আল মাদামে যান। প্রাথমিক ভাবে বিজ্ঞানীরা জানতে পারেন যে, গ্রামে নাকি এমন এক রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল যে কারণে ওই গ্রামের ধারেকাছে ঘেঁষতেও কেউ সাহস পেতেন না।
দুবাই থেকে এক ঘণ্টার দূরত্বে মরুভূমির মাঝে শারজার সীমানালাগোয়া এই জনশূন্য গ্রামে যে কয়েকটি বাড়ি রয়েছে, সেগুলির দরজা-জানলা হাট করে খোলা। ঘরের আসবাবপত্রও এলোমেলো। দেখে মনে হবে, কোনও তাড়াহুড়োয় বা আপৎকালীন পরিস্থিতিতে সব ফেলে পালিয়েছেন বাসিন্দারা।
স্থানীয়দের দাবি, ১৯৭০ সালের আশপাশে এই গ্রামটির সৃষ্টি। গ্রামে গেলেই একটা অদ্ভুত নিস্তব্ধতা অনুভূত হবে। গা ছমছমে ভাব চতুর্দিকে।
চারদিকে ধু ধু করছে বালি। আর তার মাঝখানে বালির মধ্যে থেকে মাথা উঁচিয়ে আছে বেশ কয়েকটি বাড়ি আর একটি মসজিদ।
দিনের বেলায় আর পাঁচটা গ্রামের মতোই লাগবে আল মাদামকে। কিন্তু রাত হতেই এর চেহারা বদলে যায়। সেখানে যে একটা গ্রাম রয়েছে তা বোঝা দায় হয়ে যায়।
প্রাথমিক ভাবে বিজ্ঞানীরা মনে করেছিলেন, রাতের বেলায় বালিতে ঢাকা পড়ে যায় গোটা গ্রাম। কারণ সেখানে ক্রমাগত হাওয়া চলতে থাকে। যে কারণে বালি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সেই হাওয়ার সঙ্গে উড়ে যায়। আর সে বালির তলায় চাপা পড়ে যায় গ্রাম।
কিন্তু এই যুক্তিকে আবার বিজ্ঞানীদের একাংশ খণ্ডন করেছেন। তাঁদের দাবি, রাতে বালিতে চাপা পড়ে গেলেও, দিনে আবার দ্রুত বালি সরে যায় কী ভাবে? এমনটা তো সম্ভব নয়!
বিজ্ঞানীরা আরও একটি সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন। তা হল, রাতে দৃষ্টিভ্রমের কারণে গ্রামটি অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে বলে মনে হয়। কারণ দুবাইয়ে যেমন অর্ধেক মরুভূমি, তেমনই রয়েছে সমুদ্র। ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি বাতাস দ্রুত গরম হয়, আর উপরের দিকের বাতাস সমুদ্রের কারণে ঠান্ডা থাকে। ফলে নীচের দিকে যখন আলোর প্রতিসরণ হয়, তখনই মনে হয় গ্রামটি অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে।
গ্রামটিকে আল কুতবি উপজাতি সম্প্রদায়ের বাস ছিল। প্রতিকূল পরিবেশ, ধু ধু মরুভূমি আর ক্রমাগত বালির ‘হামলা’র কারণে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন কুতবিরা।
গ্রামটির এই ‘রহস্যময়’ চরিত্রের জন্য তা পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে। অনেক আবার রহস্য উদ্ঘাটনের টানে ছুটে আসেন।
আল মাদামের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলির বিশ্বাস, ওই গ্রামে এক মহিলার আত্মা ঘুরে বেড়ায়। উম দুয়াইস নামে ওই আত্মার বিড়ালের মতো চোখ, হাতে ধারালো অস্ত্র থাকে।