একই সিনেমার দু’টি ক্লাইম্যাক্স! কখনও শুনেছেন কি? কিন্তু ভারতে এমন এক সিনেমা তৈরি হয়েছে যার দু’টি ক্লাইম্যাক্স। শুধু তাই নয় দু’টি ক্লাইম্যাক্স দিয়েই এই সিনেমা বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল। কিন্তু কেন এমন অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সিনেমার নির্মাতারা?
দক্ষিণ ভারতীয় এই সিনেমার নাম ‘হরিকৃষ্ণানস’। বিখ্যাত মালয়ালি অভিনেতা মামুটি এবং মোহনলাল অভিনীত এই সিনেমা মুক্তি পায় ১৯৯৮ সালে।
মামুটি এবং মোহনলাল-এর বিপরীতে এই সিনেমায় নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন জুহি চাওলা।
এই সিনেমার পরিচালক ছিলেন আবদুল হামিদ মহম্মদ ফয়জল, যিনি ফয়জল নামেই বেশি পরিচিত। পরিচালক হিসেবে তখন ফয়জলের খুব নামডাক। এই সিনেমার প্রযোজক ছিলেন মোহনলালের স্ত্রী সুচিত্রা মোহনলাল।
‘হরিকৃষ্ণানস’ মালয়ালম সিনেমা জগতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিনেমা। মুক্তির সময় ‘হরিকৃষ্ণানস’ এতই সাড়া ফেলে দিয়েছিল যে, এই সিনেমা বক্স অফিসে ব্যাপক সাফল্য পায়।
এই কমেডি সিনেমার সাফল্যের পিছনে অন্যতম কারণ ছিল এই সিনেমার গান। তবে গান ছাড়াও এই সিনেমা বক্স অফিসে ‘হিট’ করার প্রধান কারণ ছিল এই সিনেমার তারকা নির্বাচন। মামুটি এবং মোহনলাল, দু’জনেই তখন মালয়ালি সিনেমার নামকরা তারকা। তাঁদের দু’জনের জনপ্রিয়তাই ছিল তুঙ্গে। ভক্তেরা তাঁদের নাম বলতে পাগল ছিল।
মামুটি এবং মোহনলাল ছাড়াও এই সিনেমায় নায়িকা হিসেবে জুহির উপস্থিতি এক অন্য মাত্রা যোগ করেছিল। জুহিও তখন বলিউডে নায়িকা হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত এবং জনপ্রিয়। জুহির জনপ্রিয়তা বলিউড টপকে দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমাতেও পৌঁছে গিয়েছিল।
‘হরিকৃষ্ণানস’-এ আইনজীবী হরির চরিত্রে অভিনয় করেন মামুটি। মোহনলাল অভিনয় করেন কৃষ্ণানের চরিত্রে। জুহির চরিত্রের নাম ছিল মীরা।
কিন্তু কেন এই সিনেমায় দু’টি ক্লাইম্যাক্স রেখেছিলেন নির্মাতারা?
ফয়জল জানিয়েছিলেন, মামুটি এবং মোহনলালকে একসঙ্গে নিয়ে সিনেমা করার ইচ্ছে তাঁর অনেক দিন ধরেই ছিল। তা ছাড়া দুই অভিনেতাই তাঁর ভাল বন্ধু।
মামুটি এবং মোহনলালের কাছে সিনেমার গল্প নিয়ে যাওয়া হলে তাঁরা দু’জনেই রাজি হন। তবে দু’জনেই এত সফল অভিনেতা ছিলেন যে, চিত্রনাট্য লেখার সময় ফয়জলকে মাথায় রাখতে হয়েছিল যে কাউকেই যেন অন্যের থেকে বেশি প্রাধান্য না দেওয়া হয়।
ফয়জল এ-ও ভয় পেয়েছিলেন যে, দুই অভিনেতার মধ্যে কাউকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হলে অন্য অভিনেতার ভক্তকূল রুষ্ট হতে পারে।
তবে সব মোটামুটি ঠিক থাকলেও বিভ্রান্তি তৈরি হয় ছবির ক্লাইম্যাক্স নিয়ে। দুই অভিনেতার মধ্যে সিনেমার শেষে জুহি জীবনসঙ্গী হিসেবে কাকে বেছে নেবেন, তা নিয়েই তৈরি হয়েছিল যাবতীয় সমস্যা।
অবশেষে অনেক ভেবে ফন্দি বের করেন ফয়জল। সিনেমার ক্লাইম্যাক্স এমন ভাবে তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন যাতে কোনও অভিনেতার অনুরাগীরাই অসন্তুষ্ট না হন।
সিনেমার ক্লাইম্যাক্সে দেখানো হয়, মোহনলাল এবং মামুটি, দু’জনকেই জুহির সমান পছন্দ। জীবনসঙ্গী হিসেবে কাকে বেছে নেবেন তা নিয়ে ধন্দে পড়েন জুহি। তবে এই দোলাচল থেকে মুক্তি পেতে টস করেন জুহি। টসে যাঁর ভাগ্যে হেড আসবে তাঁকেই প্রেমিক হিসেবে বেছে নিয়ে বিয়ে করবেন জুহি। আর অন্য এক জন থাকবেন তাঁর বন্ধু হয়ে।
এই দৃশ্য শ্যুট করার সময় জুহিকে দিয়ে দু’বার টস করানো হয়। এক বারের শ্যুটে মামুটিকে টসে জেতানো হয়। জুহির পাত্র হন তিনি। বন্ধু হন ‘কৃষ্ণান’ মোহনলাল।
আরও এক বার এই সিনেমার শেষ দৃশ্য শ্যুট করা হয়। তবে এই বার টসে জেতানো হয় মোহনলালকে। জুহির চরিত্র মীরার সঙ্গে বিয়ে হয় মোহনলালের। এ ক্ষেত্রে বন্ধু হয়ে থাকেন হরি অর্থাৎ মামুটি।
এই দুই ক্লাইম্যক্স দিয়েই সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল। সমান সমান হলও পেয়েছিল এই দুই আলাদা আলাদা ক্লাইম্যাক্সের সিনেমা।
তবে সেন্সর বোর্ডের কাছে জুহির সঙ্গে মোহনলালের বিয়ের দৃশ্যযুক্ত সিনেমাটিই পাঠানো হয়েছিল। যখন সেন্সর বোর্ডের কাছে দু’টি আলাদা আলাদা ক্লাইম্যাক্স যুক্ত সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে চলার খবর পৌঁছয়, তখন নির্মাতাদের কাছে আইনি নোটিস পাঠানো হয়। জানানো হয়, যদি সেন্সর বোর্ডকে যে ক্লাইম্যাক্স যুক্ত সিনেমা পাঠানো হয়েছে সেটি বাদে অন্য কিছু চলে, তা হলে নির্মাতাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হবে।
এরপরই পিছু হটেন নির্মাতারা। জুহির সঙ্গে মোহনলালের বিয়ের ক্লাইম্যাক্স যুক্ত সিনেমাই প্রেক্ষাগৃহে চালানোর সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। সরানো হয় অন্যটি। এই সিনেমা নিয়ে সেই মুহূর্তে বেশ বিতর্কেরও সৃষ্টি হয়েছিল। তবে এতেও সিনেমার সাফল্যে কোনও বাধার সৃষ্টি হয়নি। বক্স অফিসে রমরমিয়ে চলেছিল এই সিনেমা।
তবে বলিউডের ‘কিং খান’ শাহরুখের সঙ্গেও এই সিনেমার শেষ দৃশ্য শ্যুটের পরিকল্পনা করেছিলেন ফয়জল। ফয়জল ঠিক করেছিলেন এক বিশেষ চরিত্রে দেখানো হবে শাহরুখকে। জুহির প্রেমিকের চরিত্রে অভিনয় করবেন শাহরুখ। মামুটি বা মোহনলাল নন, জুহিকে বিয়ে করবেন শাহরুখই। তবে কিছু বিশেষ সমস্যার কারণে তা বাতিল হয়ে যায়।