ভারতে আসছেন বিশ্বের অন্যতম বিত্তশালী ব্যবসায়ী ল্যারি ফিঙ্ক। ভারতীয় ধনকুবের তথা বন্ধু মুকেশ অম্বানীর পুত্র অনন্তের বিয়েতে বিশেষ অতিথি হয়ে আসছেন তিনি।
ল্যারি বিশ্বের সর্ববৃহৎ সম্পদ ব্যবস্থাপনা (অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট) সংস্থা ‘ব্ল্যাকরক’-এর সিইও।
ব্ল্যাকরকের ব্যবস্থাপনায় ১০ লক্ষ কোটি ডলারের বেশি সম্পদ রয়েছে। যা ভারতের মোট জিডিপির প্রায় তিন গুণ।
বিশ্বের প্রায় ১০ শতাংশ শেয়ারের দেখাশোনাও করে ব্ল্যাকরক। এটি বিশ্বের বৃহত্তম ‘শ্যাডো ব্যাঙ্ক’ (এমন আর্থিক সংস্থা যা ব্যাঙ্ক না হয়েও ব্যাঙ্কের মতোই কার্যক্রম চালায়। এরা মূলত ঋণ দেয়।)
সংস্থার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১ লক্ষ ২১ হাজার কোটি ডলার। যা গত এক বছরে প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ল্যারির মোট সম্পত্তির পরিমাণও নেহাত কম নয়, ১১০ কোটি ডলার। ব্ল্যাকরকের সিইও হওয়ার পাশাপাশি ল্যারি, ‘কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস’ এবং ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’-এর অছি পরিষদের সদস্য।
উল্লেখযোগ্য, গোপন সংস্থা (সিক্রেট সোসাইটি) ‘কাপ্পা বেটা ফি’-র সদস্য ল্যারি। এই সংস্থা বিশ্বের উচ্চপদস্থ অর্থ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তৈরি। বছরে এক বার সংগঠনে নতুন সদস্যদের যোগ দেওয়ানোর জন্য বৈঠক হয়। বাকি সময় তাঁরা যে বৈঠক করেন, তা থাকে লোকচক্ষুর আড়ালে।
১৯৫২ সালের ২ নভেম্বর ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যান নুয়েসে একটি ইহুদি পরিবারে ল্যারির জন্ম। ১৯৭৪ সালে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক হন তিনি। এর পর ১৯৭৬ সালে এমবিএ করেন।
১৯৭৬ সালেই নিউ ইয়র্কের বিনিয়োগ ব্যাঙ্ক ‘ফার্স্ট বস্টন’-এ কর্মজীবন শুরু করেন ল্যারি। সেখানে তিনি সংস্থার বন্ড বিভাগে কাজ করতেন। ওই সংস্থায় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যও ছিলেন ল্যারি।
পরে ল্যারি ‘ফার্স্ট বস্টন’-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর হন। আয় বিভাগের সহ-প্রধানের চেয়ারেও বসেন।
ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে ল্যারি শীঘ্রই ওই সংস্থায় অর্থ সংক্রান্ত নতুন কয়েকটি বিভাগ চালু করেন। মর্টগেজ এবং রিয়েল এস্টেট নিয়েও কাজ শুরু করেন তিনি।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ল্যারির সময়ে ‘ফার্স্ট বস্টনের’ রমরমা আকাশ ছুঁয়েছিল।
১৯৮৬ সালে ক্ষতির মুখে পড়ে ‘ফার্স্ট বস্টন’। তা-ও আবার ল্যারির কারণেই। সুদের হার সম্পর্কে তাঁর ভুল ভবিষ্যদ্বাণীর কারণে ল্যারির বিভাগ হাজার লক্ষ ডলারের ক্ষতির মুখে পড়েছিল।
এর পর সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নিজের সংস্থা শুরুর সিদ্ধান্ত নেন ল্যারি। ১৯৮৮ সালে, ব্ল্যাকস্টোন গোষ্ঠীর ছাতার তলায়, ‘ব্ল্যাকরক’ সংস্থা তৈরি করেন ল্যারি। তাঁর সঙ্গে আরও কয়েক জন ছিলেন।
ল্যারিকেই সংস্থার ডিরেক্টর এবং সিইও করা হয়। ১৯৯৪ সালে ব্ল্যাকস্টোন থেকে আলাদা হয়ে যায় ব্ল্যাকরক। ব্ল্যাকরক আলাদা হওয়ার পরেও, ফিঙ্ক তাঁর পদ ধরে রেখেছিলেন। ১৯৯৮ সালে তিনি সংস্থার চেয়ারম্যানও হন।
ব্ল্যাকরক সংস্থায় বোর্ডের চেয়ারম্যান, নেতৃত্ব কমিটির চেয়ারম্যান, কর্পোরেট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং গ্লোবাল ক্লায়েন্ট কমিটির সহ-সভাপতিও হন তিনি।
ধীরে ধীরে সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য ব্ল্যাকরকের নাম ছড়াতে থাকে। সম্পত্তি দেখরেখ এবং বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে শলাপরামর্শের জন্য ব্ল্যাকরকের দ্বারস্থ হতে থাকে বিশ্বের নামীদামি সংস্থা।
ব্ল্যাকরক মূলত লগ্নি এবং বিনিয়োগের ঝুঁকি সংক্রান্ত বিষয়ে অন্যান্য সংস্থাকে পরামর্শ দেয়। তাদের সম্পত্তির ব্যবস্থাপনাও করে। বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগকে আরও সরলীকরণ করা ওই সংস্থার কাজ।
এক সময় ভারতেও প্রবেশ করে ব্ল্যাকরক। ডিএসপির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ভারতে ব্যবসা চালাতে শুরু করে ল্যারির সংস্থা। তবে ২০১৮ সালে নিজেদের ৪০ শতাংশ অংশীদারি ডিএসপির কাছে বিক্রি করে দিয়ে ভারত থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে চলে যায় তারা।
ফিরে আসে ২০২৩-এ। গত বছরের জুলাই মাসের শুরুতেই রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ় থেকে নিজেদের আলাদা হয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করে রিলায়্যান্স স্ট্র্যাটেজিক ইনভেস্টমেন্ট। রিলায়্যান্স স্ট্র্যাটেজিক ইনভেস্টমেন্টের নাম পরিবর্তন করে জিয়ো ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস করা হয়। এর পরেই ব্ল্যাকরকের সঙ্গে যৌথ অংশীদারির কথা ঘোষণা করে অম্বানীরা।
দুই সংস্থার যৌথ উদ্যোগে তৈরি সংস্থার নাম ‘জিয়ো ব্ল্যাকরক’। নতুন সংস্থায় জিয়ো এবং ব্ল্যাকরক দুই সংস্থারই ৫০ শতাংশ করে অংশীদারি রয়েছে। তখন থেকেই বন্ধু ল্যারি এবং মুকেশ।