বাপ্পি লাহিড়ির মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ বলি থেকে টলিউড। তাঁর এই আকস্মিক মৃত্যুতে নেটমাধ্যমে শোকপ্রকাশ করেছেন অনেকে। রুপোলি পর্দার বেশির ভাগ তারকার সঙ্গেই সুমধুর সম্পর্ক ছিল বাপ্পির। তবে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন তারকার সঙ্গে বিবাদেও জড়িয়েছেন তিনি। তাঁদের মধ্যেই এক জন অজয় দেবগণ।
শুনে চমকে যাচ্ছেন কি? বাপ্পির মৃত্যুর পর পরই অজয় নেটমাধ্যমে শোকপ্রকাশ করেছিলেন। তাঁর স্ত্রী কাজলও সঙ্গীতশিল্পীর মৃত্যুর পর তড়িঘড়ি তাঁর বাড়িতে পৌঁছন। কিন্তু কী কারণে অজয়ের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছিলেন বাপ্পি? কী এমন হয়েছিল যে অজয়ের বিরুদ্ধে আইনি পথেও এগিয়েছিলেন তিনি?
এই বিবাদের সূত্রপাত ২০১০ সালে। ২০১০ সালে মুক্তি পায় অজয় দেবগণ অভিনীত অ্যানিমেটেড সিনেমা ‘টুনপুর কা সুপারহিরো’। আর এই সিনেমাকে কেন্দ্র করেই মন কষাকষি শুরু হয় দু’জনের মধ্যে।
অজয় অভিনীত এই ছবির প্রযোজনা করেছিলেন তাঁর অন্যতম বন্ধু কুমারমঙ্গত পাঠক। এই সিনেমায় অজয়-কাজল এবং কিছু পার্শ্বচরিত্র ছাড়া বেশির ভাগ চরিত্রকেই অ্যানিমেশনের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল।
সিনেমাতে বহু কার্টুন চরিত্রের মধ্যে একটি চরিত্রের নাম ছিল ‘গাপ্পি’। চরিত্রটিকে একটি গায়কের ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল। আর এই চরিত্রকে দেখে বেজায় চটেছিলেন বাপ্পি।
গাপ্পি চরিত্রটি দেখলেই মনে হবে এটি তৈরি করা হয়েছে বাপ্পি লাহিড়ির আদলে। চেহারা তো বটেই, বাপ্পির সঙ্গে কার্টুন চরিত্রের সাদৃশ্য ছিল বেশভূষাতেও। বাপ্পির মতো গলায় ভারী সোনার চেনও পরত কার্টুন চরিত্র গাপ্পি।
তবে ‘ডিস্কো কিং’ বাপ্পির মতো জনপ্রিয় নয়, বরং বেসুরো গলায় গান গেয়ে মানুষের ত্রাস হিসেবে দেখানো হয়েছিল গাপ্পিকে।
শুধু চলন নয়, বলনেও মিল ছিল দু’জনের মধ্যে। বলিউডে জনপ্রিয় হওয়া বাপ্পি আদতে বাঙালি। বাংলায় কথা বলতেই তিনি বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। এই সিনেমায় বাপ্পির মতোই বাংলায় কথা বলতে দেখা গিয়েছিল গাপ্পিকেও।
এর ফলেই রেগে যান বাপ্পি। অভিযোগ করেন গাপ্পি চরিত্রের মাধ্যমে তাঁর নেতিবাচক ছবি তৈরি করেছেন অজয়-কুমার। তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেন বাপ্পি।
শুধু রাগ দেখিয়েই শান্ত হননি বাপ্পি। অজয়-সহ সিনেমার পুরো ইউনিটের বিরুদ্ধে আইনি নোটিস পাঠান তিনি। দাবি ছিল সিনেমার পোস্টার এবং ট্রেলার থেকে বাদ দিতে হবে গাপ্পি চরিত্রটিকে। মুক্তির আগে সিনেমা থেকেও ছেঁটে ফেলতে হবে গাপ্পিকে। জনসমক্ষে তাঁর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে বলেও দাবি জানান বাপ্পি।
আইনি নোটিস পেয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন অজয়ও। তিনি জানান, বাপ্পির যদি এই চরিত্র নিয়ে কোনও আপত্তি থাকত তা হলে তা তিনি কথা বলেও মিটিয়ে নিতে পারতেন। এর জন্য নোটিস পাঠানোর দরকার ছিল না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পরে কাজলের মধ্যস্থতায় মিটমাট হয় বিষয়টির। দুরত্ব দূর করে আবার কাছাকাছি আসেন অজয়-বাপ্পি। গাপ্পি চরিত্রকে নিয়েই মুক্তি পায় ‘টুনপুর কা সুপারহিরো’।