লোকসভা ভোটের আগে আবার চর্চায় ‘জাতিগত সংরক্ষণ’। সুপ্রিম কোর্টে পঞ্জাব সরকাররে করা একটি মামলায় নতুন করে হাওয়া পেয়েছে সংরক্ষণ বিতর্ক। কী বলল দেশের সর্বোচ্চ আদালত?
কারা জাতিগত সংরক্ষণের সুবিধা পাবেন? কারা পাবেন না? বাবা-মা এক বার জাতিগত সংরক্ষণের সুযোগ গ্রহণ করে সরকারি চাকরি এবং তার সমস্ত সুযোগ-সুবিধা পেলে তার পর তাঁদের সন্তানেরাও কি জাতিগত সংরক্ষণের সুবিধা পাবেন?
যদি পান, তা হলে এই ব্যবস্থা কত দিন চলবে? পঞ্জাব সরকারের দায়ের করা একটি মামলার প্রেক্ষিতে ফের এই সব প্রশ্নই উস্কে দিল সুপ্রিম কোর্ট।
পঞ্জাব সরকার আদালতে যুক্তি দিয়েছে, অনগ্রসর শ্রেণির মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা সম্প্রদায়গুলিকে চিহ্নিত করা উচিত এবং তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ পাওয়ার উপায় করে দেওয়া উচিত।
রাজ্য আরও দাবি করেছে, যাঁরা সরকারি চাকরিতে উচ্চ প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে এগিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের উচিত তফসিলি জাতির মধ্যে সুবিধা থেকে বঞ্চিত সম্প্রদায়গুলির জন্য পথ তৈরি করে দেওয়া।
অনগ্রসর জাতিগুলির মধ্যে, বাল্মীকি এবং মাজহাবি (শিখ)-র মতো সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা অংশগুলিকে আলাদা ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত এবং তাদের সংরক্ষণের সুবিধা দেওয়া উচিত বলে সুপ্রিম কোর্টে দাবি করেছে পঞ্জাব সরকার।
রাজ্য জানিয়েছে, তফসিলি জাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে ৪৩ শতাংশ মানুষ রাজ্য সরকারের তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত পদের ৮১ শতাংশ আসনে কাজ করছেন।
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি বিআর গাভাই, বিচারপতি বিক্রম নাথ, বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদী, বিচারপতি পঙ্কজ মিত্তল, বিচারপতি মনোজ মিশ্র এবং বিচারপতি সতীশচন্দ্র মিশ্রের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি চলছিল।
পঞ্জাব সরকারের অ্যাডভোকেট জেনারেল গুরমিন্দর সিংহের এই যুক্তি শুনে বিচারপতি গাভাই জানতে চান, ‘‘তফসিলি জাতি/উপজাতি (এসসি/এসটি) সম্প্রদায়ের এক জন ব্যক্তি, আইএএস এবং আইপিএসের মতো কেন্দ্রীয় পরিষেবাগুলিতে যোগদানের পরে, সর্বোচ্চ সুবিধা পান। তবুও তাঁদের সন্তান বা তাঁদের সন্তানেরা সংরক্ষণের সুবিধা পেতে থাকেন। এটা কি চলতেই থাকবে?’’
গুরমিন্দর জানান, চাকরিতে নিয়োগের পরীক্ষায় অনগ্রসর শ্রেণির এক জন যদি ৫৯ শতাংশ নম্বর পান এবং সমাজের এগিয়ে থাকা অংশের কেউ যদি ৯৯ শতাংশ নম্বর পান, তা হলেও অনগ্রসর শ্রেণির প্রার্থীকেই সুযোগ দেওয়া উচিত।
কারণ, দ্বিতীয় জন বিমানে চড়া থেকে শুরু করে জীবনের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন, যেখানে প্রথম জনকে জীবনের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধাটুকুও না পেয়ে একই সংগ্রামে নামতে হয়েছে।
তিনি প্রস্তাব দেন, তফসিলি জাতিভুক্ত একটি সম্প্রদায় যখন সরকারি চাকরিতে পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব পেয়ে সামাজিক ক্ষেত্রে যথেষ্ট এগিয়ে যান, তখন তাঁদের সংরক্ষণের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যেতে পারে।
গুরমিন্দর বলেন, ‘‘সংবিধানের প্রণেতারা-সহ কেউই চাননি সংরক্ষণ চিরস্থায়ী হোক।’’
তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতির পাশাপাশি, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির মধ্যে উপ-শ্রেণি সংরক্ষণের বিষয়টি নিয়ে রাজ্যগুলিতে দীর্ঘ দিন ধরে বিতর্ক চলছে।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অতীতে এমন ঘটনাও ঘটেছে, যেখানে রাজ্য সরকার নির্দিষ্ট বিভাগে সংরক্ষণের সীমা বাড়িয়ে অন্য একাধিক সম্প্রদায়কে সংরক্ষণের আওতাধীন করেছে। তবে সরকারের সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলাও হয়েছে।