Thar dessert

ঊষর মরুর বুকে সবুজের সমাহার! ‘সোনার কেল্লা’র রাজ্যে ‘টাইম বোমা’য় ক্ষতি কয়েকশো কোটির?

চার দিকে শুধু ধু-ধু প্রান্তর। যে দিকে দু’চোখ যায় শুধু বালি আর বালি। দূরদূরান্তে তাকালেও মরুভূমির বুকে জলের হদিস পাওয়া দুষ্কর। চরমতম জলবায়ুর কারণে থরের জনঘনত্ব স্বাভাবিক ভাবেই কম।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:৫৫
Share:
০১ ১৯

থরের বাদামি শরীরে জুড়ে পড়ছে সবুজের ছোপ। ধীরে ধীরে সবুজায়ন হচ্ছে থর মরুভূমির!‌ শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও, থরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কয়েক দশক ধরে বাড়ছে সবুজের সমারোহ। হাজার হাজার বছর ধরে যে অঞ্চলে ছিল শুধু বালি আর বালি, সেখানে কোন জাদুতে বদলে যাচ্ছে প্রকৃতি?

০২ ১৯

আমাদের দেশের তিন দিক সমুদ্রে ঘেরা। আর একটি দিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে সুউচ্চ হিমালয়। দেশের ভিতরেও বরফে ঢাকা নানা পর্বত এবং গভীর সব জঙ্গল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আর বাকি যেটা থাকে প্রকৃতির অসামান্য খেয়ালিপনায় সেটাও ভারতে বিদ্যমান। তা হল সুবিস্তৃত মরুভূমি।

Advertisement
০৩ ১৯

উত্তর-পশ্চিম ভারতে বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে থর মরুভূমি। গ্রীষ্মকালে এখানে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠে অসহ্য দাবদাহে মানুষকে অতিষ্ঠ করে তোলে। সারা বছরে মাত্র ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত বরাদ্দ থাকে এখানকার অধিবাসীদের জন্য। মুম্বই বা কলকাতায় কয়েক ঘণ্টায় এই পরিমাণ বৃষ্টি হয়। আবার শীতেও অসহনীয় অবস্থা। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে চলে যায় প্রতি বছর।

০৪ ১৯

চার দিকে শুধু ধু-ধু প্রান্তর। যে দিকে দু’চোখ যায় শুধু বালি আর বালি। দূরদূরান্তে তাকালেও মরুভূমির বুকে জলের হদিস পাওয়া দুষ্কর। চরমতম জলবায়ুর কারণে থরের জনঘনত্ব স্বাভাবিক ভাবেই কম। কমবেশি তিন বছর অন্তর ভয়াবহ খরা ও দু্র্ভিক্ষের সম্মুখীন হয় থর।

০৫ ১৯

থরের জলবায়ুর ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, ১৭০০ সাল থেকে ১৮৯৯ সাল পর্যন্ত অন্তত ১৫ বার অনাবৃষ্টির ফলে খরার কবলে পড়ে আরও শুষ্ক এবং রুক্ষ হয়ে উঠেছিল থর।

০৬ ১৯

অসহনীয় পরিবেশ, লাগাতার খরা, খাবারের অভাব, দু্র্ভিক্ষের ফলে থরের জনবসতি ক্রমেই কমতে শুরু করে। ১৮৯১ সালের জনগণনায় প্রতি দেড় বর্গকিলোমিটারে ১০২ জন মানুষের বসতির হদিস পাওয়া গিয়েছিল এই মরুভূমিতে। স্বাধীনতার পর সেই অবস্থা খানিকটা বদলাতে শুরু করে।

০৭ ১৯

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহওরলাল নেহরুর উদ্যোগে ও হাইড্রোলিক ইঞ্জিনিয়ার কানওয়ার সাইনের পরিকল্পনায় পঞ্জাবের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত নদীর জল থরে টেনে আনার জন্য প্রস্তাব করা হয় একটি সেচ খালের মাধ্যমে। সাইন অনুমান করেছিলেন যে, বিকানের ও জয়সলমেরের উত্তর-পশ্চিম কোণে মরুভূমির ২০ লক্ষ হেক্টর জমিতে পঞ্জাবের নদীগুলির জল এনে সেচ করা যেতে পারে।

০৮ ১৯

১৯৬০ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু জল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সেই চুক্তি অনুযায়ী শতদ্রু, বিপাশা, ইরাবতী এবং তাদের শাখানদীগুলির উপর পূর্ণ অধিকার পায় ভারত। তার পরেই রাজস্থানের অন্তর্গত থরের এলাকায় চাষবাষের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলতে ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘ সেচখাল ‘ইন্দিরা ক্যানাল’ তৈরির পরিকল্পনা করা হয়।

০৯ ১৯

জলের সমস্যা মিটতেই ধীরে ধীরে থরের বুকে আবার গড়ে ওঠে জনবসতি। শুরু হয় চাষবাষ। সরকারের পক্ষ থেকেও সবুজায়ন করার চেষ্টা শুরু হয়। ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০২ সালের মধ্যে থরে সবুজের পরিমাণ ১৪ শতাংশ বে়ড়ে যায়।

১০ ১৯

প্রাণহীন বালির প্রান্তরে এত সবুজের অস্তিত্বের কারণ কী? প্রকৃতির এই বিপরীতধর্মী আচরণের নেপথ্যে কী লুকিয়ে রয়েছে? প্রকৃতির কোন খামখেয়ালি আচরণে ভোল বদলে গেল থর মরুর?

১১ ১৯

গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা জানাচ্ছে, এই পরিবর্তিত রূপের নেপথ্যে রয়েছে উষ্ণায়নের পরোক্ষ ইন্ধন। পৃথিবী যত বেশি উষ্ণ হচ্ছে ততই সরে যাচ্ছে ‘ইন্টারট্রপিক্যাল কনভারজেন্স জ়োন’ বা আন্তঃক্রান্তীয় অভিসারী অঞ্চলের সীমানা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নিরক্ষীয় ভারত মহাসাগরে উষ্ণ জলের সম্প্রসারণের ফলে পশ্চিম দিকে স্থানান্তরিত হচ্ছে আইসিটিজ়েড। ফলে গ্রীষ্মকালে পশ্চিমাঞ্চলে বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

১২ ১৯

উত্তর-পশ্চিম ভারতের আধা শুষ্ক অঞ্চলের সম্ভাব্য সবুজায়নের জন্য এই কারণটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবহ দফতরের তথ্য বলছে, গত ৫০ বছরে পশ্চিম ভারতে বৃষ্টিপাত ২৫ শতাংশ বা়ড়লেও উত্তর ও পূর্ব ভারতে তা ১০ শতাংশ কমছে। এই তথ্যে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে আবহবিদদের কপালেও।

১৩ ১৯

পশ্চিমাঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের ‘সুফল’ পাচ্ছে থরও। বৃষ্টির জলের ছোঁয়ায় সবুজের ঢল নেমেছে থরের মাটিতে। পৃথিবী যত বেশি উষ্ণ হবে, দিনের পর দিন থরের তত সবুজায়ন হবে। থরের জন্য তা শাপে বর হলেও ভারতের পূর্ব ও উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির জন্য শঙ্কার বার্তাই বহন করছে। বৃষ্টি কমলে ফসলের ওপর তার প্রভাব অবশ্যম্ভাবী। কমবে খাদ্য শস্যের ফলন, দেখা দিতে পারে খাদ্য সঙ্কটও।

১৪ ১৯

মড়ার এপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো আরও এক আশঙ্কার কথা শোনাচ্ছেন আবহবিদেরা। ঊষর মরুতে বাস করে পঙ্গপাল। গরম আবহাওয়ায় চুপচাপ থাকলেও বৃষ্টিপাত ও সবুজের এই জোড়া অনুকূল পরিবেশ পেলে পঙ্গপালের বংশবিস্তারের পরিমাণ বহু গুণ বেড়ে যায়।

১৫ ১৯

২০২০ সালে ভারতে যে পঙ্গপালের দল হানা দিয়েছিল, সেটি পূর্ব আফ্রিকার সোমালিয়া, ইথিয়োপিয়ার মতো দেশ থেকে এসেছিল। লোহিত সাগর পেরিয়ে ইরানের মরুভূমি থেকে আফগানিস্তান-পাকিস্তান হয়ে পৌঁছয় রাজস্থানের থর মরুভূমিতে।

১৬ ১৯

পঙ্গপাল মরু অঞ্চলের শুকনো আবহাওয়া পছন্দ করে। কিন্তু ডিম পাড়ে ভিজে বাতাসযুক্ত আবহাওয়ায়। পূর্ণবয়স্ক হলেই এরা ফের বংশবৃদ্ধি করতে চায়। তার জন্য মরু অঞ্চলের ভিজে আবহাওয়া জরুরি। অসময়ের বৃষ্টি বা অতিবৃষ্টিও আচমকা বাড়িয়ে দেয় পঙ্গপালের বংশবৃদ্ধি।

১৭ ১৯

তাই থরে বসবাসকারী পঙ্গপাল ভারতের জন্য যেন একটি ‘টাইম বোমা’। থরের আবহাওয়া যে ভাবে আর্দ্র হয়ে উঠছে তাতে পঙ্গপালের দল বহাল তবিয়তে বংশবৃদ্ধি করবে, সে কথা বলাই বাহুল্য। ভবিষ্যতেও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বৃষ্টিপাতের খামখেয়ালিপনা বাড়বে এবং তার সঙ্গে বাড়বে পঙ্গপালের আক্রমণও।

১৮ ১৯

এরা দিনে প্রায় দেড় লক্ষ টন পরিমাণ খাদ্যশস্য ধ্বংস করে। এই পঙ্গপাল শুধুমাত্র পাকিস্তান বা ভারতের রাজস্থান অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। পরবর্তী কালে তা আরও এগিয়ে আসবে পূর্ব ভারতের দিকে। তা যদি আটকানো না যায়, অচিরেই ফাঁকা হয়ে যাবে একের পর এক জমির ফসল।

১৯ ১৯

কয়েক দশকে থরের জলবায়ুতে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে থাকবে। থরের বুকে সবুজের পরিমাণও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন জলবায়ু গবেষকেরা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement