নানা পটেকরের মতো জনপ্রিয় তারকার কেরিয়ার তৈরি করেছিলেন। কম সময়ের মধ্যে ছোট পর্দার পাশাপাশি পরিচিতি গড়ে তুলেছিলেন বড় পর্দাতেও। কিন্তু সাফল্যের স্বাদ বেশি দিন উপভোগ করতে পারেননি। মাত্র ৪৫ বছর বয়সে শুটিং সেটে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান অভিনেতা মোহন গোখেল।
১৯৫৩ সালের ৯ নভেম্বর জন্ম মোহন গোখেলের। বাবা-মা এবং ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন তিনি। মোহনের বাবা পেশায় সাংবাদিক ছিলেন। একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদনার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন মোহনের বাবা।
ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল মোহনের। পুণের একটি স্কুলে পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। তার পর উচ্চশিক্ষার জন্য সেখানকার কলেজেই ভর্তি হন মোহন।
কলেজে পড়াকালীন থিয়েটার শুরু করেন মোহন। মরাঠি ভাষায় থিয়েটারে অভিনয় করতেন তিনি। খুব কম সময়ের মধ্যে অভিনয়দক্ষতার মাধ্যমে থিয়েটারজগতে নিজের পরিচিতি তৈরি করে ফেলেন মোহন।
থিয়েটারে অভিনয়ের কারণে রাজ্য স্তরে একাধিক পুরস্কারও পান মোহন। পুণেয় থিয়েটার শেখানোর জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। মরাঠি নাটকের নির্দেশনা করতেও শুরু করেন তিনি।
মোহন নির্দেশিত প্রথম নাটক ছিল ‘ভাউ মুরারাও’। এই মরাঠি নাটকে অভিনয় করেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন নানা পটেকর। তার পরেই বলিপাড়ায় অভিনয়ের সুযোগ পান নানা।
থিয়েটারের পাশাপাশি ছোট পর্দায় অভিনয় শুরু করেন মোহন। ‘শ্বেতাম্বর’ নামের একটি মরাঠি ধারাবাহিকে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। ১৯৭৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বন্য বাপু’ ছবির মাধ্যমে মরাঠি ফিল্মজগতে আত্মপ্রকাশ করেন মোহন। একাধিক মরাঠি এবং গুজরাতি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।
১৯৮০ সালে হিন্দি ফিল্মজগতে পা রাখেন মোহন। ‘স্পর্শ’ ছবিতে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু তার মধ্যেই বলিপাড়ার ছবিনির্মাতাদের নজর কেড়ে নেন তিনি।
‘স্পর্শ’ মুক্তির পর একের পর এক হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পেতে থাকেন মোহন। ‘আদত সে মজবুর’, ‘হোলি’, ‘মির্চ মশলা’, ‘হিরো হীরালাল’ এবং ‘আরণ্যক’-এর মতো হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
‘মিসিসিপি মশলা’ এবং ‘ডক্টর বাবাসাহেব অম্বেডকর’ নামে দু’টি ইংরেজি ছবিতেও অভিনয় করেন মোহন। আশির দশকে দূরদর্শনের জনপ্রিয় মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। ‘যাত্রা’, ‘আহট’, ‘ভারত এক খোঁজ’, ‘লেখু’র মতো হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করেন মোহন। ‘শক্তিমান’ ধারাবাহিকেও অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি।
মোহন জনপ্রিয়তা পান ‘মিস্টার যোগী’ ধারাবাহিকে অভিনয় করে। এই ধারাবাহিকে যোগেশের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে। আমেরিকা থেকে ভারতে বিয়ে করতে এসেছিল যোগেশ। ১২টি ভিন্ন রাশির মহিলার সঙ্গে সাক্ষাত হয় তার। পরে এই ধারাবাহিকের চিত্রনাট্যের উপর ভিত্তি করে ২০০৯ সালে আশুতোষ গোয়ারিকরের পরিচালনায় মুক্তি পায় প্রিয়ঙ্কা চোপড়া জোনাস এবং হরমন বাওয়েজা অভিনীত ‘হোয়াট’স ইওর রাশি?’ ছবিটি।
কমল হাসনের ‘হে রাম’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পান মোহন। বলিপাড়া সূত্রে খবর, এই ছবির শুটিং করতে গিয়ে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৪৫ বছর। সেই মুহূর্তে ‘অল্পবিরম’, ‘জঞ্জীরে’ এবং ‘আশীর্বাদ’ ধারাবাহিকের শুটিং করছিলেন তিনি।
মৃত্যুর পর ২০০১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মোক্ষ’ ছবিতে শেষ দেখতে পাওয়া যায় মোহনকে। ‘মিস্টার যোগী’ ধারাবাহিকে মোহনের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন তাঁর স্ত্রী শুভাঙ্গি গোখেল। ১৯৮৯ সালে শুভাঙ্গির সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। তাঁদের কন্যা সখী গোখেল বাবা-মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে অভিনয়ে নামেন। বর্তমানে মরাঠি ফিল্মজগতের অভিনেত্রী সখী।