Taliban New Rule

মহিলাদের কথা যেন শুনতে না পান মহিলারাই! আফগান নারীর অধিকারের সীমা আরও সঙ্কুচিত করল তালিবান

বিশেষজ্ঞেরা উদ্বিগ্ন যে, ভবিষ্যতে মহিলাদের সাধারণ কথা বলার ক্ষেত্রেও এই নির্দেশ জারি করা হতে পারে। অর্থাৎ, নির্দেশ জারি হতে পারে যে, কোনও আফগান মহিলার সাধারণ কথাও শুনতে পাবেন না অন্য আফগান মহিলারা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৪ ১৪:২৪
Share:
০১ ২৩

আফগানিস্তানে নারীদের অধিকারের সীমানা সঙ্কুচিত হল আরও। এ বার শুধু পুরুষ নয়, এক মহিলার অন্য মহিলার কাছেও জোরে কথা বলা বা প্রার্থনা করার উপর নিষেধাজ্ঞা চাপাল তালিবান সরকার।

০২ ২৩

আমেরিকার ভার্জিনিয়া-ভিত্তিক আফগান সংবাদমাধ্যম ‘আমু টিভি’র খবর অনুযায়ী, এই নতুন নির্দেশ জারি করার কথা জানিয়েছেন তালিবান মন্ত্রী মহম্মদ খালিদ হানাফি। হানাফি জানিয়েছেন, যে কোনও আফগান মহিলার অন্য আফগান মহিলাদের সামনে জোরে কোরান পাঠ করা উচিত নয়। কোরান এমন ভাবেই পাঠ করতে হবে যাতে তাঁরা একে অপরের কথা শুনতে না পান।

Advertisement
০৩ ২৩

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী হানাফি বলেছেন, ‘‘মহিলাদের যখন তাকবির বা আজান পড়ার অনুমতি দেওয়া হয় না, তখন তাঁরা অবশ্যই গান গাইতে পারে না বা সঙ্গীত উপভোগ করতে পারে না।’’

০৪ ২৩

হানাফির ওই মন্তব্যের কথা প্রকাশিত হয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফেও। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, হানাফি জানিয়েছেন যে, এক জন মহিলার কণ্ঠস্বরকে ‘আওরাহ’ হিসাবে বিবেচনা করা হয়— যার অর্থ এটি সব সময় গোপন করা উচিত এবং জনসমক্ষে শোনা উচিত নয়। এমনকি কোনও মহিলারও অন্য মহিলার আওয়াজ শোনা উচিত নয়। আর সেই কারণেই নাকি এই নিয়ম।

০৫ ২৩

উল্লেখ্য, মহিলাদের গলা শুনতে পাওয়া নিয়ে তালিবদের নতুন সেই নির্দেশ আপাতত প্রার্থনা পর্যন্ত সীমিত।

০৬ ২৩

তবে বিশেষজ্ঞেরা উদ্বিগ্ন যে, ভবিষ্যতে মহিলাদের সাধারণ কথা বলার ক্ষেত্রেও এই নির্দেশ জারি করা হতে পারে। অর্থাৎ, নির্দেশ জারি হতে পারে যে, কোনও আফগান মহিলার সাধারণ কথাও শুনতে পাবেন না অন্য আফগান মহিলারা। যা মহিলাদের অবাধে কথা বলার ক্ষমতাকে আরও সীমিত করবে।

০৭ ২৩

স্থানীয় প্রতিবেদনে আরও ইঙ্গিত করা হয়েছে, নারীদের প্রকাশ্যে কথা বলাও নিষেধ করা হয়েছে। আফগানিস্তানে যে গুটি কয়েক মহিলা বাড়ির বাইরে গিয়ে কাজ করার অনুমতি পান, তাঁদের মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীরা।

০৮ ২৩

হেরাতের এক জন মহিলাকে উদ্ধৃত করে আমু টিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, আফগানিস্তানের মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীদেরও জনসমক্ষে বিশেষ করে রোগীর পুরুষ আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলতে বাধা দেওয়া হয়।

০৯ ২৩

উল্লেখ্য, এর আগে অগস্ট মাসেই মহিলাদের জন্য নতুন নিয়ম জারি করেছিল তালিবেরা। তাতে বলা হয়েছিল, আফগান মহিলাদের সব সময় সারা শরীর ঢেকে রাখতে হবে। ছাড় পাবে না মুখমণ্ডলও।

১০ ২৩

পাশাপাশি, অপরিচিত পুরুষদের দিকে তাকানোর ক্ষেত্রেও নারীদের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছিল সেই সময়। নিষেধাজ্ঞা চেপেছিল আরও। আফগানিস্তানের মহিলারা জনসমক্ষে বা বাড়ির ভিতরে জোরে কথা বলতে পারবেন না বলেও নিয়ম চালু করেছিল তালিবরা।

১১ ২৩

তালিব সরকারের জারি করা ১১৪ পৃষ্ঠার আদেশনামার বর্ণনা প্রকাশিত হয়েছিল ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ-এর প্রতিবেদনেই।

১২ ২৩

নতুন সেই নিয়মে লেখা ছিল, ‘‘কোনও ভাবেই অপরিচিত পুরুষদের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারবেন না আফগানিস্তানের প্রাপ্তবয়স্ক মহিলারা।’’ অপরিচিত বলতে স্বামী বা আত্মীয় নন এমন পুরুষদের বোঝানো হয়েছিল।

১৩ ২৩

মহিলারা যাতে অপরিচিত পুরুষদের দিকে তাকিয়ে ‘উত্তেজিত না হয়ে পড়েন’ বা অন্যদের ‘উত্তেজিত না করে দেন’, তার জন্যই নাকি এই নিদান। পাশাপাশি, আফগান নারীদের জন্য নির্দেশ ছিল, তাঁরা বাড়ির ভিতরে কথা বললে সেই আওয়াজ যেন বাড়ির বাইরে শোনা না যায়।

১৪ ২৩

জনসমক্ষে এক জন মহিলার শরীর সর্ব ক্ষণ ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক বলেও উল্লেখ ছিল নতুন তালিবানি নিয়মে। সেই নিয়ম অনুযায়ী, ‘‘যদি মহিলাদের বাড়ি থেকে বাইরে বেরোতেই হয়, তা হলে তাঁদের অবশ্যই পুরুষদের থেকে নিজেদের মুখ এবং কণ্ঠস্বর লুকিয়ে রাখতে হবে।’’

১৫ ২৩

পাশাপাশি সে নিয়মে উল্লেখ ছিল, মহিলারা যে পোশাক পরবেন তা যেন কোনও ভাবেই পাতলা না হয়। পোশাক হবে না ছোট বা আঁটসাঁট। গাড়িচালকদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়, হিজাববিহীন বা সঙ্গে পুরুষ নেই এমন মহিলাদের যেন কোনও ভাবেই ট্যাক্সিতে না চাপানো হয়। গাড়িতে গান বাজানো এবং পুরুষদের সঙ্গে মহিলাদের মেলামেশাতেও জারি হয় নিষেধাজ্ঞা।

১৬ ২৩

যে মহিলারা নতুন নিয়ম অমান্য করবেন, তাঁদের গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হবে বলেও কড়া নির্দেশ ছিল তালিবান সরকারের।

১৭ ২৩

নতুন এই নিয়ম আফগান মহিলাদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল। বিশেষজ্ঞরাও জানিয়েছিলেন, নারী অধিকারের উপরে তালিবান সরকারের নিষেধাজ্ঞাই আফগানিস্তানের আন্তর্জাতিক মূলস্রোতে শামিল হওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

১৮ ২৩

নারীদের পাশাপাশি তালিবদের নিষেধাজ্ঞার কোপে পড়েছেন আফগান পুরুষেরাও। আফগান পুরুষদেরও জনসমক্ষে মহিলাদের মুখের দিকে তাকানো এবং আঁটসাঁট পোশাক পরতে নিষেধ করা হয়েছে। বিশেষ করে খেলাধুলার সময়েও পুরুষেরা ছোট পোশাক পরতে পারবেন না বলে জানানো হয়েছে। পুরুষদের দাড়ি কাটার উপরও জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।

১৯ ২৩

উল্লেখ্য, আফগানিস্তানে পুনরায় ক্ষমতা দখলের ন’মাসের মাথায়, ২০২২ সালের মার্চে আচমকা মেয়েদের হাই স্কুল এবং কলেজে যাওয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিল তালিবান। আমেরিকা-সহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশই তার প্রতিবাদ জানিয়েছিল।

২০ ২৩

তালিবান মন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হক্কানি সে সময়ে জানিয়েছিলেন, তাঁদের সরকার মোটেও নারীশিক্ষার বিরোধী নয়। কিন্তু পোশাকবিধি-সহ বেশ কিছু দিকে নজর দেওয়ার উদ্দেশ্যে কয়েক মাস মেয়েদের পঠনপাঠন বন্ধ রাখা হয়েছিল। তার পর থেকে কার্যত মধ্য ও উচ্চশিক্ষার দরজা খোলেনি মেয়েদের সামনে।

২১ ২৩

সম্প্রতি ইউনেস্কোর একটি রিপোর্টে স্পষ্ট ভাবে জানানো হয়েছে, তালিবানের কড়াকড়ির কারণে গত তিন বছরে আফগানিস্তানের অন্তত ১৪ লক্ষ শিশুকন্যা স্কুলশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

২২ ২৩

২০২১ সালের ১৫ অগস্ট ক্ষমতা দখলের পর মেয়েদের শিক্ষার অধিকার সুরক্ষিত রাখার যে প্রতিশ্রুতি মৌলানা আখুন্দজ়াদার বাহিনী দিয়েছিল, তা পালিত হয়নি বলে জানাচ্ছে ওই রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্য।

২৩ ২৩

রিপোর্ট বলছে, আফগানিস্তানে মেয়েরা এখন শুধু প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়। সেখানেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা দ্রুত কমছে! এর ফলে শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহ বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ইউনেস্কো। তার মধ্যেই আবার আফগান মহিলাদের উপর নতুন নিষেধাজ্ঞার খাঁড়া নেমেছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement