২৪ ঘণ্টায় তৃতীয় বার। ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল তাইওয়ান। তাইওয়ানে ঘন ঘন ভূমিকম্পের জেরে জাপানে সুনামি সতর্কতা জারি হয়েছে। বার বার ভূমিকম্পের জেরে তাইওয়ানে ভেঙে পড়েছে বহু বাড়ি। লাইন থেকে উল্টে গিয়েছে আস্ত ট্রেন। সব মিলিয়ে লাগাতার প্রকৃতির ধ্বংসলীলার সাক্ষী তাইওয়ান। দেখে নিন ভূমিকম্পের কাঁপন ধরানো ছবি।
তাইওয়ানের আবহাওয়া দফতর থেকে জানানো হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্বের তাইতুং কাউন্টি ভূমিকম্পের উৎসস্থল। সেখানেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সর্বাধিক। তবে কারও মৃত্যু হয়েছে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়।
তাইওয়ানে শনিবার রাতে প্রথম বার কম্পন অনুভূত হয়। আবহাওয়া দফতর জানায়, রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৬.৪। রবিবার সকালে আবার কেঁপে ওঠে তাইওয়ান। এ বার কম্পনের মাত্রা ছিল ৬.৮। শেষ কম্পন অনুভূত হয় দুপুরে। কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.২।
তিনটি ভূমিকম্পেরই উৎসস্থল তাইতুং কাউন্টির ১০ কিলোমিটার ভিতরে। প্রথম দু’টি কম্পনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তেমন না হলেও রবিবার দুপুরের শেষ কম্পনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইউলি শহরে একটি তিন তলা বাড়ি ভূমিকম্পে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। সেই বাড়ির ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়ে যান চার জন। প্রথমে দু’জনকে বার করে নিয়ে আসা গেলেও পাঁচ বছরের শিশুকে নিয়ে আটকে পড়েন তাঁর মা। পরে তাদেরও উদ্ধার করা হয়।
ইউলি শহরে প্রায় সাত হাজার বাড়ি কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নেই বিদ্যুৎ, জল। তবে এখনও পর্যন্ত প্রাণহানির কোনও খবর পাওয়া যায়নি। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে উদ্ধারকাজ।
তাইওয়ানের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা ভেঙে গিয়েছে। ভেঙে পড়েছে সেতু। এর ফলে সেতুর উপরে থাকা গাড়ি পড়েছে নীচে। ডোংলি রেল স্টেশনে একটি দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেন উল্টে গিয়েছে লাইন থেকে। উড়ে গিয়েছে স্টেশনের ছাদ।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, তাইওয়ানের চিকে ও লিউশিশি পাহাড় এলাকায় ধস নেমে রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাতে অন্তত ৬০০ জন আটকে পড়েছেন বলে জানা গিয়েছে। শারীরিক ভাবে তারা সকলেই অক্ষত রয়েছেন। উদ্ধারকারী দল রাস্তা পরিষ্কার করে পর্যটকদের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করছে।
তাইওয়ানে লাগাতার ভূমিকম্পের জেরে সুনামি সতর্কতা জারি করেছিল জাপান। আবহাওয়া দফতরের আশঙ্কা ছিল সমুদ্রে উঠতে পারে সাড়ে তিন ফুট উঁচু ঢেউ। সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় সেই মতো প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছিল।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স সূত্রে খবর, জাপানের কিছু অংশে সুনামি সতর্কতা তুলে নেওয়া হয়েছে। সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় যদিও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে বিপর্যয় মোকাবিলা দল মোতায়েন রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবস্থানগত ভাবে তাইওয়ান ‘রিং অফ ফায়ার’ এর অন্তর্গত। অর্থাৎ, এই এলাকা প্রকৃতিগত ভাবে ভূমিকম্পপ্রবণ। এই এলাকায় সুনামির আশঙ্কা অত্যধিক। আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের ঘটনাও আকছাড় শোনা যায়।
ভূ-বিশেষজ্ঞদের দাবি, তাইওয়ানের অবস্থান এমন যে, সেখানে দু’টি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলের খুব কাছাকাছি। তাই ভূগর্ভে দু’টি প্লেটের একটিতেও যদি সামান্য অবস্থানগত পরিবর্তন হয়, তার প্রভাব দেখা যায় ভূপৃষ্ঠের উপরে, তাইওয়ানে। এ বারও তেমনই কিছু হয়েছে কি না তা অবশ্য স্পষ্ট হয়নি।
এ বারের লাগাতার ভূমিকম্প মূলত দক্ষিণ-পূর্ব দিকে আবদ্ধ ছিল বলে গোটা তাইওয়ানে ধ্বংসের পরিমাণ কম। যদিও কয়েকটি প্রদেশে অবস্থা যথেষ্টই সঙ্গীন। রবিবার দুপুরের ভূমিকম্পের গোটা দেশ জুড়েই আতঙ্ক ছড়িয়েছে, আরও ‘আফটার শক’ এলে কী ভাবে তা সামলানো যাবে।
আমেরিকার ‘প্যাসিফিক সুনামি ওয়ার্নিং সেন্টার’ তাইওয়ানের জন্য সতর্কতা জারি করেছে। তাদের দাবি, আবারও কেঁপে উঠতে পারে তাইওয়ান। যদিও জাপানের কিছু এলাকায় সুনামি সতর্কতা তুলে নেওয়া হয়েছে।
সমগ্র তাইওয়ানে ভূমিকম্পের জেরে ধ্বংসলীলা না দেখা গেলেও রাজধানী তাইপেতে বড় বড় বহুতল নড়তে দেখা গিয়েছে। সামান্য সময়ের জন্য সেখানেও জনজীবন বিপর্যস্ত হয়। দ্রুত তা সামলে ওঠা গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এর আগে একাধিক বার এ ভাবেই কেঁপে উঠেছে তাইওয়ান। ২০১৬ সালে দক্ষিণ তাইওয়ানে ভূমিকম্পে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে ৭.৩ তীব্রতার ভূমিকম্পে তাইওয়ানে মৃত্যু হয়েছিল দু’হাজারেরও বেশি মানুষের।