কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিচারপতি সৌমেন সেনের মধ্যে বেনজির সংঘাতের মাঝে মেডিক্যালে ভর্তি সংক্রান্ত সমস্ত মামলা কলকাতা হাই কোর্ট থেকে সরিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
মেডিক্যাল মামলার দায়িত্ব নিজের হাতে নিয়েছে শীর্ষ আদালত। তিন সপ্তাহ পরে সেখানেই হবে পরবর্তী শুনানি। মামলার সব পক্ষকে ওই সময়ের মধ্যে লিখিত হলফনামা জমা দিতে বলেছে আদালত।
এর আগে শনিবারও মেডিক্যাল মামলা শুনতে বসেছিল শীর্ষ আদালতের বিশেষ বেঞ্চ। সে দিন এই মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের যাবতীয় বিচারপ্রক্রিয়া স্থগিত করে দেওয়া হয়েছিল।
সিবিআই তদন্তেও স্থগিতাদেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। জানিয়েছিল, মেডিক্যাল মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের সিঙ্গল এবং ডিভিশন বেঞ্চের কোনও নির্দেশ আপাতত কার্যকর করা হচ্ছে না।
কলকাতা হাই কোর্টের দুই বিচারপতির সংঘাত এবং মেডিক্যাল মামলা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফেও সোমবার সুপ্রিম কোর্টে কিছু বলতে চেয়েছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। প্রধান বিচারপতি তাঁকে লিখিত আকারে তাঁদের বক্তব্য জানাতে বলেন।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টে কলকাতা হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের বিরুদ্ধে সওয়াল করেন রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল। সিঙ্গল বেঞ্চ থেকে মামলা সরানোর আবেদন জানান তিনি।
রাজ্যের আইনজীবী বলেন, ‘‘সিঙ্গল বেঞ্চ থেকে মেডিক্যালে ভর্তি মামলা সরানো হোক। না হলে আবার একই ঘটনা ঘটবে।’’ সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি বিভিন্ন সভায় যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। যদিও বিচারপতির নাম উল্লেখ করা হয়নি।
এর আগে শনিবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা (এসএলপি) করেছিল রাজ্য সরকার। মামলার অনুমতিও দিয়েছিল শীর্ষ আদালত।
রাজ্যের তরফে সোমবার মেডিক্যাল মামলা প্রসঙ্গে জানানো হয়, মেডিক্যালে ভর্তির ১৪টি ভুয়ো শংসাপত্র পাওয়া গিয়েছে। দায়ের করা হয়েছে মোট চারটি এফআইআর। সব পক্ষের বক্তব্য শুনে মেডিক্যাল মামলার ভার নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
কেন্দ্রের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, ‘‘কলকাতা হাই কোর্টের বিষয়টি এমন একটি জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে, যা সকলকে আশ্চর্য করবে। আমাকে এ বিষয়ে কিছু বলার জন্য সময় দেওয়া হোক।’’
কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, তিন সপ্তাহ পরে মামলার পরবর্তী শুনানির দিনই সব কথা শোনা হবে। আপাতত লিখিত হলফনামা দিতে হবে সব পক্ষকে।
কলকাতা হাই কোর্টের দুই বিচারপতির দ্বন্দ্ব ভাল চোখে দেখছে না সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের মন্তব্য থেকেই তা স্পষ্ট।
কেন কলকাতা হাই কোর্টের হাতে মেডিক্যাল মামলা রাখা হল না? দুই বিচারপতির দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘সিঙ্গল এবং ডিভিশন বেঞ্চ নিয়ে যা হচ্ছে তা ঠিক হচ্ছে না।’’
প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘আমরা এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করলে হাই কোর্টের গরিমার উপর তার প্রভাব পড়বে। তাই বিষয়টি আমরা অন্য ভাবে সমাধান করব।’’
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি শনিবারের পর সোমবারও আদালতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বক্তব্য জানান। একটি ভিডিয়ো দেখাতে চান আদালতে।
অভিষেকের আইনজীবী বলেন, ‘‘প্রায় দিনই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় একই ধরনের মন্তব্য করছেন। এর আগেও তিনি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, সংবাদমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন। আমার কাছে তার ভিডিয়ো রয়েছে, দেখুন।’’ যদিও ভিডিয়ো দেখানো যায়নি আদালতে।
মেডিক্যালে ভর্তি মামলা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত। এই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতি সেনের ডিভিশন বেঞ্চ তা খারিজ করে দেয়।
তার পরেই ওই বিচারপতির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তোলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। ‘ত্রুটি’ উল্লেখ করে ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশই তিনি খারিজ করে দেন এবং সিবিআইকে তদন্ত চালিয়ে যেতে বলেন।
দুই বিচারপতির মধ্যে এই বেনজির সংঘাতের আবহে স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। শনিবার ছুটির দিনে বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে এই মামলা শোনে শীর্ষ আদালত।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি সঞ্জীব খন্না, বিচারপতি বিআর গাভাই, বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু।
শনিবারই মেডিক্যাল মামলায় হাই কোর্টের যাবতীয় বিচারপ্রক্রিয়া স্থগিত করে দেওয়া হয়েছিল। স্থগিতাদেশ দেওয়া হয় সিবিআই তদন্তেও। সেই সঙ্গে রাজ্য, মামলাকারী, এমনকি সিবিআইকেও নোটিস দেওয়া হয়।
তার পর সোমবার মেডিক্যাল মামলা কলকাতা হাই কোর্ট থেকে স্থানান্তর করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। বিচারের ভার তারা নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছে। তিন সপ্তাহ পরে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে সুপ্রিম কোর্টে।