এ এক ‘আজব’ রাজার তাজ্জব করা গল্প! ওহ্ ‘রাজা’ নন, তিনি ব্রুনেইয়ের সুলতান! তবে ‘আজগুবি’ মনে হলেও তা সত্যি বলেই দাবি বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলির।
বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, ব্রুনেইয়ের সুলতানের কাছে ৩০টি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার রয়েছে। বিয়ে করেছেন তিন জনকে।
তাঁর বিলাসভবনের ঝাড়বাতিগুলিতে বাল্ব লাগে ৫২ হাজার। এখানেই শেষ নয়। প্রতি মাসে চুল কাটাতে সুলতানের খরচ ১৫ লক্ষ টাকা!
মালয়েশিয়া এবং দক্ষিণ চিন সাগরে ঘেরা বোর্নিয়ো দ্বীপপুঞ্জের ছোট্ট দেশ ব্রুনেই। তবে সে দেশের সুলতানের ধনসম্পত্তির গল্প মোটেও ছোট নয়।
১৯৬৭ সালের ৫ অক্টোবর ব্রুনেইয়ের সিংহাসনে বসেন তৃতীয় হাসানঅল বোকাইয়া ইবনি ওমর আলি সইফউদ্দিন। তবে এটা তাঁর পোশাকি নাম। গোটা দুনিয়া তাঁকে ‘হাসানঅল বোকাইয়া’ নামেই চেনে।
দুনিয়া তাঁকে যে নামেই চিনুক না কেন, ব্রুনেইয়ের সুলতানের এক বিঘত লম্বা নাম-পদবি রয়েছে। সে নাম বলার পর খানিক দম নিতে হয় বটে।
কেমন সে নাম? সুলতান হাজি হাসানঅল বোকাইয়া মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদ্দালাহ ইবনি অল-মরহম সুলতান হাজি ওমর আলি সইফুদ্দিন সা’দুল কাহিরি ওয়াদ্দেন।
ব্রুনেইয়ের সুলতানের আরও একটি পদবি রয়েছে। তিনি ব্রুনেই দার-উস-সালেমের ইয়াং দি-পার্তুয়ান।
দেশের সুলতানি করার পাশাপাশি তিনি ব্রুনেইয়ের প্রধানমন্ত্রীও বটে। পাশাপাশি, প্রতিরক্ষা এবং বিদেশ মন্ত্রকের দায়িত্বও নিজের হাতে রেখেছেন ৭৬ বছরের সুলতান।
নামের পর এ বার ব্রুনেইয়ের সুলতানের সম্পত্তির দিকে নজর ঘোরানো যাক। যিনি প্রতি মাসে ১৫ লক্ষ টাকায় চুলের কেতা ঠিকঠাক করেন, তিনি তো বিপুল ধনসম্পত্তির মালিকই হবেন! যদিও এ সবই এক ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডের দাবি।
মোট কত সম্পত্তির মালিক ব্রুনেইয়ের সুলতান? ওই ট্যাবলয়েডের দাবি, সুলতানের মোট সম্পত্তির অর্থমূল্য ৩০ বিলিয়ন পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় তা ২,৮৩,২৮১ কোটি টাকা। এত সম্পত্তির মালিক নাকি 'মাত্র' তিনটি বিয়ে করেছেন!
প্রভূত অর্থের মালিক হলেও তা যখের ধনের মতো আগলে রাখেননি সুলতান। দরাজ হাতে খরচও করেছেন তিনি। তা সে সোনায় মোড়া জেট বিমান হোক বা বিলাসবহুল বাসভবন— সবেতেই জলের মতো অর্থব্যয় করেছেন ব্রুনেইয়ের সুলতান।
সুলতানের কাছে নাকি কম করে সাত হাজার গাড়ি রয়েছে। তার মধ্যে ৩৬৫টি ফেরারি, ২৭৫টি ল্যাম্বরঘিনি, ২৫৮টি অ্যাস্টন মার্টিন, ১৭২টি বগাটি, ২৩০টি পোর্শে, ৩৫০টি বেন্টলি, ৬০০টি রোল্স রয়েস, ৪৪০টি মার্সিডিজ বেঞ্জ, ২৬৫টি অডি, ২৩৭টি বিএমডব্লিউ, ২২৫টি জাগুয়ার এবং ১৮৩টি ল্যান্ড রোভার রয়েছে।
হাজার হাজার গাড়ি নিজের প্রাসাদের কোথায় রাখেন সুলতান? সেগুলি রাখার জন্য সুলতানের প্রাসাদে ১১০টি গ্যারাজ রয়েছে। সেখানেই নাকি তাঁর সাত হাজার গাড়ি থাকে।
অনেকের দাবি, সব গাড়ি তো একসঙ্গে ব্যবহার করা যায় না, তাই বাড়তি আয়ের জন্য সংগ্রাহকদের কাছে বেশ কতগুলি গাড়ি তিনি ভাড়া দেন। তবে এ সবই জল্পনা।
জল্পনা আরও রয়েছে। ব্রুনেইয়ের সুলতান নাকি ১৯০০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বিশ্বে বিক্রি হওয়া ফেরারির অর্ধেকেরও বেশির মালিক।
গাড়ির পাশাপাশি বিমানের শখ রয়েছে সুলতানের। তাঁর বোয়িং ৭৪৭ বিমানের দাম নাকি ৩,৩০৪ কোটি টাকা। তাতে রয়েছে সোনায় মোড়া বেসিন, জানলা, টেবিল। দামি চামড়ার আসন।
এ হেন সুলতান যে বিলাসবহুল প্রাসাদে থাকবেন, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। ১৯৮৪ সালে ইস্তানা নুরুল ইমান নামের প্রাসাদটি নির্মাণ করেন সুলতান।
২০ লক্ষ বর্গফুটের ওই প্রাসাদটির নাম 'গিনেস বুক অব রেকর্ডস'-এ ঢুকে পড়েছে। সেটিই নাকি বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রাসাদ। কী রয়েছে তাতে?
প্রাসাদে রয়েছে ২২টি সোনার গম্বুজ, ১,৭০০টি ঘর এবং ৫টি বিশালকার সুইমিং পুল। সঙ্গে যোগ করুন, ২৫৭টি বাথরুম।
এ ছাড়া, তাঁর নিজস্ব চিড়িয়াখানা ৩০টি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, অসংখ্য বাজপাখি, কাকাতুয়া-সহ জীবজন্তুতে ভরা।
সুলতানের প্রাসাদে নাকি ৫৬৪টি ঝাড়বাতি রয়েছে। কী ভাবে এই নির্দিষ্ট সংখ্যাটি জানা গেল? ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডের দাবি, ওই ঝাড়বাতিগুলি গুনেছিলেন এক ব্যক্তি। ঝাড়বাতিগুলিতে আলো ফোটাতে আবার ৫১ হাজার বাল্ব বসানো রয়েছে বলেও দাবি।