রাস্তার ধারে একটি সাদা রঙের বাংলো। তার সামনে সাদা রঙের মার্বেল দিয়ে তৈরি সদর দরজা। সদর দরজাটি ঘেরা রয়েছে আরও একটি কাঠের দরজা দিয়ে। বাংলোর চারদিকে গাছপালা। সাদা-সবুজে ঘেরা এই বাংলোটি এক নজরে দেখলে মনে হবে সেখানে কোনও নবাব বাস করেন।
নবাবের বাস না থাকলেও বাংলোর নাম রাখা হয়েছে ‘নবাব’। বাংলোটির মালিক বলি অভিনেতা নওয়াজ়উদ্দিন সিদ্দিকি। নওয়াজ় তাঁর বাবা নবাবউদ্দিনের নামানুসারে এই বাংলোর নাম রেখেছেন।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, মুম্বইয়ের ভারসোভা এলাকায় এই বাংলোটি ১২.৮ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করিয়েছেন অভিনেতা। বাংলোটি তৈরি করতে তিন বছর সময় লেগেছে বলে জানা যায়।
কাঠের দরজা দিয়ে নওয়াজ়ের বিলাসবহুল বাংলোর অন্দরমহলে প্রবেশ করলেই দেখা যায় বিশাল ঘর। দেওয়ালে সাদা এবং বাদামি রঙের খেলা। দরজার সামনেই রাখা একটি বিলিয়ার্ড বোর্ড।
নওয়াজ়ের বাংলোয় কোনও ছবিনির্মাতা অথবা অভিনেতা এলে তাঁদের সঙ্গে চিত্রনাট্য নিয়ে আলোচনা করেন ডাইনিং হলে বসেই। ঘরের এক কোণে রয়েছে ডাইনিং টেবিল এবং চেয়ার। ঘরের মেঝে থেকে কাচের লম্বা জানলা সিলিং ছুঁয়েছে। সাদা রঙের পর্দা দিয়ে সেগুলি ঢাকাও রয়েছে।
সিনেমা দেখার জন্য বাংলোয় একটি আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করেছেন নওয়াজ়। সেখানে রয়েছে একটি বিশাল বড় টিভি। টেলিভিশনের সামনে আরাম করে বসার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি সোফা-চেয়ার। এই ঘরটি থিয়েটার রুম হিসাবেই ব্যবহার করেন নওয়াজ়। এই থিয়েটারের পাশে রয়েছে খোলা বারান্দা। সিনেমা দেখার পর সাদা-নীল রঙের দেওয়ালে ঘেরা বারান্দায় বসে সময় কাটাতে পছন্দ করেন অভিনেতা।
পেশায় অভিনেতা। ঘরে মেকআপ করার জন্য নজরকাড়া ব্যবস্থা না থাকলে কি হয়! মেকআপ করার জন্য আলাদা ঘর রয়েছে নওয়াজ়ের বাংলোয়। দেওয়ালের এক দিক জুড়ে রয়েছে বিশাল আয়না। আয়নার চারটি দিক ঘেরা রয়েছে আলোয়।
গাছপালায় ঘেরা খোলামেলা জায়গাই বেশি পছন্দের নওয়াজ়ের। পিঙ্কভিলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা বলেন, ‘‘বাড়ি এমন একটি জায়গা, যেখানে একবার আসার পর অন্য কোথাও যেতে ইচ্ছা করে না। সেখানেই যেন জীবনের সব শান্তি পাওয়া যায়।’’
বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ছবি নিয়ে আলোচনা করতে পছন্দ করেন নওয়াজ়। আড্ডা দেওয়ার জন্য বাংলোর ছাদকে বেছে নিয়েছেন তিনি। সাদা রেলিং দিয়ে ঘেরা ছাদে রয়েছে বসার জায়গা। চার দিকে রয়েছে রংবেরঙের ফুলের গাছ।
বিছানায় সাদা রঙের চাদর, ঘরে সাদা রঙের পর্দা। পিঙ্কভিলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিনেতা জানান, এই ঘর থেকে বাইরের দিকে তাকালেই চার দিকে শুধু সবুজ আর সবুজ। তাই নিজের বেডরুমটি তাঁর কাছে প্রিয়।
নওয়াজ়ের বাংলোয় দু’টি ডাইনিং রুম-সহ মোট ন’টি ঘর রয়েছে। সমস্ত ঘরের মধ্যে যে ঘরটি আয়তনে সবচেয়ে ছোট, সেই ঘরেই থাকেন অভিনেতা।
সাক্ষাৎকারে নওয়াজ় বলেন, ‘‘আমার বন্ধুরা আমাকে বার বার বলত যে, কোনও গৃহসজ্জাশিল্পীকে ডেকে যেন আমি ঘর সাজাই। কিন্তু আমি নিজেই পুরো বাংলো সাজিয়েছি।’’ ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা থেকে অভিনয় নিয়ে পড়াশোনা করেছেন অভিনেতা। সেখানকার বারান্দার সজ্জার ছাপই নাকি বাংলোর হলঘরে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তিনি।
বই পড়তে খুব ভালবাসেন নওয়াজ়। তাই হলঘরের একটি দেওয়াল জুড়ে রয়েছে বইয়ের তাক। ‘হ্যামলেট’, ‘ওথেলো’র মতো যে নাটকগুলিতে নওয়াজ় অভিনয় করেছেন, সেই নাটকগুলির বিভিন্ন দৃশ্য ফোটোফ্রেমে বন্দি করে বসার ঘরে ঝুলিয়ে রেখেছেন অভিনেতা। জনপ্রিয় থিয়েটারশিল্পী কোনস্তানতিন স্টানিসলাওস্কির পোস্টারও রয়েছে সেই ঘরে।
সারা বাংলো বিলাসবহুলতায় মোড়া থাকলেও মধ্যবিত্ত পরিবারের বাড়ির রান্নাঘর যেমন হয়, নওয়াজ়ের বাংলোর রান্নাঘরেও সেই ছবি ফুটে ওঠে। স্টিলের বাসন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ইতিউতি। ছিমছাম রান্নাঘরে রয়েছে একটি বসার জায়গাও।
ঘরের মেঝে থেকে শুরু করে রেলিং, ঘরের প্রতিটি স্তম্ভের নকশায় ফুটে উঠেছে নওয়াজ়ের শৈশবের স্মৃতি। উত্তরপ্রদেশের বুধানার একটি ছোট শহরে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন অভিনেতা। তাঁদের বাড়ির প্রতিটি রেলিংয়ে জালের নকশা কাটা থাকত। দেওয়ালের কোণে নকশা করে খাঁজও কাটা থাকত। এগুলির পাশাপাশি সেই বাড়ির মেঝের নকশাও নওয়াজ় তাঁর বাংলোয় ফুটিয়ে তুলেছেন।