বাবা তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বলিপাড়ায় অভিনয় করেছেন। হিন্দি ছবির পাশাপাশি দক্ষিণী ফিল্মজগতে প্রশংসা কুড়োতেও বাদ রাখেননি। কিন্তু বলিপা়ড়ার জনপ্রিয় খলনায়ক মুকেশ ঋষির পুত্র হয়েও কেন আলোর রোশনাই থেকে দূরে সরে থাকেন রাঘব ঋষি?
নব্বইয়ের দশকে প্রথম সারির দিকে চোখ রাখলে খলনায়কের তালিকার শীর্ষে নাম জ্বলজ্বল করে মুকেশের। ধর্মেন্দ্র, বিনোদ খন্না, অমিতাভ বচ্চন, সঞ্জয় দত্ত, গোবিন্দ, সইফ আলি খান, হৃতিক রোশনের মতো বলি তারকাদের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন মুকেশ। খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করে খুব কম সময়ের মধ্যে বলিপাড়ায় নিজের পরিচিতি গড়েছিলেন মুকেশ।
তবে মুকেশের পুত্র রাঘব অভিনয়জগতে পা রাখার পরেও বাবার মতো সাফল্যের স্বাদ পাননি। মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে জন্ম রাঘবের। মুম্বইয়ে বাবা-মা এবংল বোনের সঙ্গে থাকেন রাঘব। মুম্বইয়ের একটি স্কুল থেকেই পড়াশোনা শেষ করেছেন তিনি।
বাবাকে অভিনয় করতে দেখে তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নেন রাঘব। ছোট থেকেই অভিনয়ে নামার ইচ্ছা ছিল তাঁর। কিন্তু বাবার তারকা হওয়ার সুযোগ নিতে চাইতেন না রাঘব।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে রাঘব বলেছিলেন, ‘‘আমার বাবা যে তারকা, তার কোনও সুযোগ-সুবিধা নিতে চাইতাম না আমি। এমনকি আমার সহপাঠীরাও জানত না বাবার পরিচয়।’’ দশম শ্রেণি পর্যন্ত তিনি কাউকে জানাননি যে, তিনি বলি তারকা মুকেশের পুত্র।
রাঘবের দাবি, তাঁর বোন সাত্ত্বিকী বাবার জনপ্রিয়তার প্রভাব উপভোগ করতেন। কিন্তু রাঘব সে রকম ছিলেন না। বলি খলনায়িকার কন্যা হয়েও অভিনয়ে না নেমে গান নিয়ে নিজের কেরিয়ার তৈরি করেন সাত্ত্বিকী।
বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে মুম্বইয়ে রোশন তানেজার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হন রাঘব। তার পর মুকেশের কাছেও তালিম নিতেন তিনি। ২০১৯ সালে বলিউড থেকে প্রথম ডাক পান রাঘব।
২০১৯ সালে সিংহ তরণজিতের পরিচালনায় ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান এসকেপ’ ছবিটি মুক্তি পায়। এই ছবির মাধ্যমেই প্রথম বড় পর্দায় কাজ করার সুযোগ পান রাঘব। কিন্তু এই ছবিটি কবে মুক্তি পেল তা কিছুই টের পেলেন না দর্শক।
চলতি বছরের মে মাসে আরও একটি ছবি মুক্তি পায় রাঘবের। তবে আর বলিউডি নয়, পঞ্জাবি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
‘নিদার’ নামের একটি পঞ্জাবি ছবিতে অভিনয় করেন রাঘব। এই ছবিতে প্রযোজনার পাশাপাশি অভিনয়ও করতে দেখা গিয়েছে মুকেশকে।
পঞ্জাবি ভাষায় সংলাপ বলার সময় কোনও সমস্যায় পড়তে হয়েছে কি না তা নিয়ে রাঘব বলেন, ‘‘মুম্বইয়ে থাকলেও আমার বন্ধুবান্ধবের দৌলতে পঞ্জাবি ভাষার সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয়। প্রথমে একটু সমস্যা হলেও পরে আমি সব বুঝতে পারতাম। আমার মনে হয় একটি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করে আমি যে পরিমাণ আনন্দ পেতাম, পঞ্জাবি ছবিতে অভিনয় করেও একই রকম আনন্দ পেয়েছি।’’
মুকেশই যে রাঘবের জীবনে অনুপ্রেরণা, তা অকপটে স্বীকার করেন অভিনেতা। রাঘব বলেন, ‘‘বাবার কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। বাবা যখন আমার কাজের প্রশংসা করেন, তখন আমি বুঝতে পারি যে, সত্যিই ভাল কাজ করেছি।’’
জীবনে কখনও না থেমে অনবরত সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়— এই শিক্ষাও বাবার থেকে পেয়েছেন বলে জানান রাঘব। বলিপাড়ায় অভিনয় নিয়ে এগিয়ে যেতে চান বলে অভিনয়ের পাশাপাশি নাচ এবং অ্যাকশনও শিখেছেন রাঘব।
রাঘবের বক্তব্য, মুকেশ বড় মাপের অভিনেতা। তাঁর কাছে অভিনয়ের তালিম যখন নিতে পেরেছেন, তখন বলিপাড়ার জনপ্রিয় তারকাদের সঙ্গে কাজ করতেও সঙ্কোচবোধ করবেন না।
কিন্তু বলিপাড়ায় যে মুকেশ জনপ্রিয় খলনায়ক ছিলেন, তাঁর পুত্র হওয়া সত্ত্বেও রাঘবকে কাজ দেননি বলিউডের ছবি নির্মাতারা। তা হলে বাবার ভরসাতেই বাকি পেশাগত জীবন কাটিয়ে দেবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।