এক সময় ভারতের অন্যতম বিত্তশালী ব্যবসায়ী। নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করে তিনিই দ্বারস্থ হলেন ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইবুনালে (এনসিএলটি)! কথা হচ্ছে শিবিন্দর মোহন সিংহকে নিয়ে।
এনসিএলটির কাছে ফোর্টিস হেল্থকেয়ারের প্রাক্তন প্রোমোটার শিবিন্দরের আবেদন, তাঁর ঋণের পরিমাণ তাঁর সম্পত্তির পরিমাণের চেয়ে অনেক বেশি। সোমবার সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি-টিভি১৮-এর প্রতিবেদনে প্রথম বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
বিষয়টির সঙ্গে ওয়াকিবহাল আইনজীবীরা জানিয়েছেন, দেউলিয়া আইনের ৯৪ নম্বর ধারার অধীনে দেউলিয়া ট্রাইবুনালের (ইনসলভেন্সি ট্রাইব্যুনাল) দিল্লিভিত্তিক বেঞ্চে আবেদনটি দায়ের করেছেন শিবিন্দর।
সোমবার মহেন্দ্র খান্ডেলওয়াল এবং সুব্রতকুমার দাসের দুই সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চে শিবিন্দরের আবেদনটি তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল এবং সংক্ষিপ্ত ভাবে মামলাটির শুনানি হয় বলে খবর। আগামী ২০ মে মামলার পরবর্তী শুনানি হবে বলে জানা গিয়েছে।
উল্লেখ্য, কোনও ব্যক্তি ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম হলে তাঁকে দেউলিয়া ঘোষণার আবেদন করার অনুমতি দেয় দেউলিয়া আইনের ৯৪ নম্বর ধারা।
ঋণগ্রহীতা নিজে অথবা অংশীদারদের সঙ্গে যৌথ ভাবে অথবা কোনও পেশাদারের মাধ্যমে এনসিএলটিতে একটি আবেদন জমা দিয়ে দেউলিয়া নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া (ইনসলভেন্সি রেজ়োলিউশন প্রসেস) শুরু করার জন্য আবেদন করতে পারেন।
এক সময় ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শিবিন্দর। শিবিন্দরের বাবা ছিলেন প্রবিন্দর সিংহ এবং দাদু ভাইমোহন সিংহ। ভাইমোহন ‘র্যানব্যাক্সি ল্যাবরেটরি’ প্রতিষ্ঠা করেন।
২০০৮ সালে ভারতের বিখ্যাত ফার্মাসিটিকিউল সংস্থা র্যানব্যাক্সি ল্যাবরেটরিজ়ের বেশির ভাগ অংশ জাপানের বিশ্ববিখ্যাত ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা দাইচি সানকিও সংস্থার কাছে বিক্রি করে দেন তিনি।
প্রায় ৪৬০ কোটি ডলারে নিজেদের অংশ বিক্রি করার পর ভাই মালবিন্দর সিংহের সঙ্গে ফোর্টিস এবং রেলিগেয়ার প্রতিষ্ঠা করেন শিবিন্দর।
তবে দাইচি সানকিওর সঙ্গে শিবিন্দরের চুক্তি ভারতীয় ব্যবসায়িক ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত কর্পোরেট যুদ্ধের একটিতে পরিণত হয়।
২০১৬ সালের ২৯ এপ্রিল সিঙ্গাপুরভিত্তিক জাপানি সংস্থা দাইচি সানকিওর পক্ষে রায় দেয় একটি সালিশি ট্রাইবুনাল। সিংহ ভ্রাতৃদ্বয়কে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা জরিমানা করে তারা।
২০১৫ সালের এপ্রিলে ভারতের ৩৫তম ধনী ব্যক্তি ছিলেন সিংহ ভাইয়েরা। মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ২৫০ কোটি ডলার বা প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা।
কিন্তু সেই শিবিন্দরই এ বার নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করে এনসিএলটির দ্বারস্থ হয়েছেন বলে খবর। জানা গিয়েছে দেউলিয়া হওয়ার আবেদনে শিবিন্দর দাবি করেছেন যে, ‘‘দাইচির সঙ্গে মামলার কারণে আমার বেশির ভাগ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত বা বিক্রি হয়েছে।’’
দেউলিয়া হওয়ার জন্য দাইচিকে ৩,৫০০ কোটি টাকা দেওয়া এবং রেলিগেয়ারের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন শিবিন্দর।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর গ্রেফতার হয়েছিলেন শিবিন্দর এবং তাঁর ভাই। দিল্লির একটি আদালত শিবিন্দরের সংস্থা রেলিগেয়ার ফিনভেস্ট লিমিটেডে তহবিল তছরুপের একটি মামলায় শিবিন্দরের জামিনের আবেদন খারিজ করে।