কপূর পরিবারের মেজো ছেলে। বলিপাড়ায় কাজ করেছেন বহু বছর। পাঁচ দশকের কেরিয়ারে শতাধিক ছবিতে অভিনয় করে দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন অভিনেতা। মহিলা অনুগামীদের সংখ্যাও ছিল প্রচুর। কিন্তু এক বলি নায়িকাই নাকি অভিনেতার দেওয়া বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এক সময় নাকি মদ এবং সিগারেটের প্রতি চরম আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন শাম্মি কপূর।
১৯৫৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘জীবন জ্যোতি’ ছবির মাধ্যমে বলিপাড়ায় পদার্পণ শাম্মির। কিন্তু বক্স অফিসে সেই ছবি সাফল্য পায়নি। ১৯৫৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘তুমসা নেহি দেখা’র পর ‘রোম্যান্টিক হিরো’ হিসাবে খ্যাতি পান তিনি।
কেরিয়ার শুরুর দু’বছরের মাথায় অভিনেত্রী গীতা বালিকে বিয়ে করেন শাম্মি। তখন বলিউডের নামজাদা অভিনেতা তিনি। ১৯৬৫ সালে শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্রয়াত হন গীতা বালি।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, শাম্মি নাকি বিয়ে করতে চেয়েছিলেন তাঁর পর্দার প্রেমিকাকে। কিন্তু সেই নায়িকা শাম্মির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। কপূর পরিবারের পুত্রকে বিয়ে করতে চাননি বলে তাঁকে প্রশ্নও করেছিলেন অনেকে।
১৭ বছর বয়সে বলিপাড়ায় পা রাখেন মুমতাজ। ১৯৬৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ব্রহ্মচারী’ ছবির শুটিংয়ের সময় মুমতাজের সঙ্গে প্রথম আলাপ হয় শাম্মির। বলিপাড়ায় জনশ্রুতি, সেই সময় মুমতাজের প্রেমে পড়েন অভিনেতা। নায়িকাকে বিয়ের প্রস্তাবও দেন শাম্মি।
এক সাক্ষাৎকারে শাম্মি বলেছিলেন, ‘‘মুমতাজ এবং আমি একসঙ্গে অনেক স্বপ্ন বুনেছিলাম। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই তা সব দুঃস্বপ্ন হয়ে গেল।’’ বলিপাড়ার গুঞ্জন, বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার পর শাম্মির মন ভেঙে যায়।
১৯৬৯ সালে নীলা দেবীর সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন শাম্মি। গীতার মৃত্যুর পর নীলাই একমাত্র সম্বল হয়ে যান অভিনেতার। তবে বিয়ের পর সেই সংসার তেমন সুখের ছিল না। এমনটাই দাবি নীলার।
এক সাক্ষাৎকারে নীলা জানিয়েছিলেন, মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান করতেন শাম্মি। মদের প্রতি আসক্তি থাকার কারণে রাগও বেড়ে গিয়েছিল অভিনেতার। পার্টিতে বা অন্য কোনও জলসায় মাঝেমধ্যেই রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারতেন না তিনি।
রাগে দিগ্বিদিকশূন্য হয়ে কী বলতেন বা কী করতেন তাও খেয়াল থাকত না শাম্মির। এমনটাই জানিয়েছিলেন নীলা। পরের দিন সকালে উঠে নাকি আগের রাতের কাণ্ডকারখানার কথা নীলাকে জিজ্ঞাসা করতেন। তখন তাঁকে বুঝিয়ে বললে নিজের দোষ বুঝতেও পারতেন অভিনেতা। তবে চেষ্টা করেও মদে আসক্তি কমাতে পারেননি শাম্মি।
নীলা জানিয়েছিলেন, নেশা করার পর ছোটখাটো বিষয়েও রেগে যেতেন শাম্মি। একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে নীলা বলেছিলেন, ‘‘হয়তো পার্টিতে তাঁর পায়ে কারও পা লেগে গেল। পার্টিতে তো এমন হতেই পারে। কিন্তু এগুলোয় তিনি খুব রেগে যেতেন।’’ শুধু মদের প্রতি নয়, সিগারেটের নেশাতেও আসক্ত ছিলেন শাম্মি।
নীলার দাবি, এক সময় সারা দিনে ১০০টা সিগারেটও খেয়েছেন শাম্মি। তবে ২১ জানুয়ারি প্রথম স্ত্রী গীতার মৃত্যুদিন হওয়ার কারণে ওই মাসের ১ তারিখ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত স্ত্রীর স্মরণে সব রকম নেশা থেকে দূরে থাকতেন অভিনেতা।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, শাম্মিকে ভালবাসতেন মুমতাজ। তা সত্ত্বেও বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে মুমতাজ বলেছিলেন, ‘‘শাম্মি এবং আমি একে অপরকে ভালবাসতাম, তা কেউ বিশ্বাস করতে চাইতেন না। আমি যে শাম্মির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলাম, তাও কেউ মানতে পারতেন না।’’
মুমতাজ বলেছিলেন, ‘‘শাম্মির মতো এত জনপ্রিয় তারকাকে কেন বিয়ে করতে চাই না, কেন কপূর পরিবারের পুত্রবধূ হওয়ার সুযোগ এ ভাবে হারিয়ে ফেললাম তা নিয়ে লোকজনের কৌতূহলের অন্ত ছিল না।’’
মুমতাজের কথায়, ‘‘কপূর পরিবার রক্ষণশীল ছিল, বড্ড কড়া। শাম্মিকে বিয়ে করলে আমায় অভিনয় থেকে দূরে সরে যেতে হত। তখন আমার ১৭ বছর বয়স। সবেমাত্র কেরিয়ার শুরু করেছিলাম। তাই অভিনয়ের সুযোগ এবং কেরিয়ার জলাঞ্জলি দিয়ে বিয়ে করতে রাজি হইনি। নিজের পরিবারের প্রতিও আমার কিছু দায়িত্ব ছিল। শাম্মি ভীষণ রেগে গিয়েছিল ওঁকে যখন বিয়ে করতে রাজি হইনি। ভেবেছিল, আমি কোনও দিন ওকে ভালইবাসিনি, শুধুমাত্র নায়িকা হতেই চেয়েছিলাম।’’