১৯৯৩ সাল। প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় আব্বাস-মস্তান পরিচালিত রোম্যান্টিক-অ্যাকশন-থ্রিলার ঘরানার ছবি ‘বাজিগর’। বলিউডের ‘কিং খান’-এর কেরিয়ারের শুরুতেই এই ছবিটি মাইলফলক তৈরি করে।
‘অজয় শর্মা’ ওরফে ‘বিকি মলহোত্রা’র চরিত্রের বিভিন্ন দিক নিপুণ ভাবে বড় পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছিলেন শাহরুখ। কিন্তু এই চরিত্রের জন্য শাহরুখ প্রথম পছন্দ ছিলেন না পরিচালক যুগলের।
আব্বাস-মস্তান প্রথমে সলমন খানকে এই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু ‘ভাইজান’ তখন অন্য ছবির শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত থাকায় প্রস্তাব খারিজ করে দেন।
পরে পরিচালক যুগল যান অনিল কপূরের কাছে। অনিল তখন তাঁর কেরিয়ারের মধ্যগগনে। একের পর এক সুপারহিট ছবি দর্শককে উপহার দিয়ে চলেছেন তিনি।
তাই তাঁর কাছেই গিয়েছিলেন আব্বাস-মস্তান। অভিনেতা প্রথমে পরিচালকদ্বয়ের কাছ থেকে ছবি এবং চরিত্রের বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ জানতে চান।
কিন্তু চরিত্রটি নেতিবাচক হওয়ায় অনিল স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে পারবেন না তিনি। এতে তাঁর ‘হিরো ইমেজ’ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
সেই সময় রোম্যান্টিক চরিত্রে একটানা অভিনয় করে বলিউডে বহু প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন অনিল।
অভিনেতা যদি হঠাৎ এমন নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেন তা হলে দর্শক তা ভাল ভাবে না-ও নিতে পারে। তাঁর কেরিয়ারে ছন্দপতনও হতে পারে বলে মনে করতেন তিনি।
তাই আব্বাস-মস্তানের প্রস্তাব বাধ্য হয়ে খারিজ করতে হয় অনিলকে। সলমন এবং অনিল— বলিউডের এই দুই সুপারস্টার পরিচালক যুগলের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাঁরা অন্য অভিনেতার খোঁজ করতে থাকেন।
সেই সময় ‘ফৌজ’ ধারাবাহিকে অভিনয় করে দর্শকমহলে শাহরুখ বেশ পরিচিতি লাভ করেছেন। এই ধারাবাহিকে শাহরুখের সহঅভিনেতা হিসাবে কাজ করেছিলেন অমৃত পটেল।
আব্বাস-মস্তান তাঁদের নতুন ছবির জন্য অভিনেতা খুঁজছেন জানতে পেরে অমৃত তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এমনকি, ‘অজয় শর্মা’র চরিত্রের জন্য শাহরুখকে সুযোগ দেওয়ার অনুরোধও করেছিলেন তিনি।
অমৃতের কথা মেনে শাহরুখের কাছে এই ছবির প্রস্তাব নিয়ে যান আব্বাস-মস্তান। শাহরুখ প্রথমে তাঁদের কাছে ছবির স্ক্রিপ্ট শুনতে চান।
এই প্রসঙ্গে পরিচালক যুগল এক সাক্ষাৎকারে জানান, তাঁরা ভাল মতো ‘অজয় শর্মা’র চরিত্রের বর্ণনা করার সুযোগও পাননি। শাহরুখ তবুও এই চরিত্রে অভিনয় করবেন বলে রাজি হয়ে যান।
পরিচালকেরা বলেন, ‘‘ছবি মুক্তির প্রথম দিন আমরা দর্শকদের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য প্রেক্ষাগৃহে গিয়েছিলাম। সকলের উচ্ছ্বাস দেখে আমারও অবাক হয়ে যাই। শাহরুখের অভিনয় দেখে সকলেই খুশি হয়েছিলেন।’’
‘‘আমরা তেমন গুছিয়ে না বলা সত্ত্বেও শাহরুখ বুঝতে পেরেছিলেন যে আমরা এই চরিত্র থেকে, তাঁর কাছ থেকে ঠিক কী চাইছি’’ বলেছেন আব্বাস-মস্তান।
‘বাজিগর’ ছবিতে সলমন এবং অনিলের পরিবর্তে শাহরুখের অভিনয় দেখে সন্তুষ্ট হয়েছিলেন আব্বাস-মস্তান। ‘বাজিগর’-এ অভিনয়ের পরেই শাহরুখের জীবনে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। বড় পর্দার সেই ‘অজয় শর্মা’ই ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন বলিউডের ‘কিং খান’।