কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। সংক্ষেপে যার নাম এআই। একবিংশ শতাব্দীকে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই উপহার দিয়েছে বিজ্ঞান। এর মাধ্যমে নানা আপাত-অসম্ভব বাস্তবে সম্ভব হয়ে উঠছে। দিন দিন বদলে যাচ্ছে প্রযুক্তি।
বিজ্ঞানের অভাবনীয় দানের নাম এআই। এর মাধ্যমে মানুষের যাবতীয় কাজ করে ফেলছে যন্ত্র। যা আগে কখনও ভাবা যায়নি, তা-ই সম্ভব হয়ে যাচ্ছে নিমেষে।
হালে প্রকাশ্যে এসেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রমরমা। মানুষের হয়ে লেখালেখি থেকে শুরু করে অফিসের কাজ, সবই করে দিচ্ছে এআই। পরীক্ষাতেও এআই ব্যবহার করেই কাজ চালিয়ে নেওয়া যাচ্ছে অনায়াসে।
তবে যত দিন গিয়েছে, এআই প্রযুক্তির ক্ষতিকর, ভয়ানক দিকগুলিও প্রকাশ্যে এসেছে। ক্রমে একটি প্রশ্ন সকলের মনে উঁকিঝুঁকি মারতে শুরু করেছে, মানুষের কাজ যদি এআই করে দেয়, তবে মানুষ কী করবে?
এআই নিয়ে এসেছে বেকারত্বের আশঙ্কা। ইতিমধ্যে বিশ্বের নানা প্রান্তে মানুষের কাজে কোপ পড়তে শুরু করেছে। বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা এআই-কে হাতিয়ার করে ছাঁটাই করে ফেলেছে মানব-কর্মচারীকে।
এই পরিস্থিতিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে আরও এক আশ্চর্য এবং অভাবনীয় কাজ করে ফেলেছেন বিজ্ঞানীরা। তৈরি করা হচ্ছে ‘বায়োকম্পিউটার’। সেই কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে।
মানুষের মস্তিষ্কের জটিল ত্রিস্তরীয় জৈবিক নেটওয়ার্কের ধাঁচে ল্যাবরেটরিতে একটি কৃত্রিম মস্তিষ্ক তৈরি করা হয়েছে। তার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
এই দুইয়ের সংযোগেই তৈরি হবে বায়োকম্পিউটার। কম্পিউটিংয়ের দুনিয়ায় যা সাড়া ফেলে দেবে বলে বিজ্ঞানীদের দাবি। প্রযুক্তিতে আসবে যুগান্তর। মানুষের মস্তিষ্কের মতোই কাজ করতে পারবে এআই যন্ত্রও।
যে বিজ্ঞানীদল এই অসাধ্যসাধনের চেষ্টা করছেন, তাঁদের নেতৃত্বে আছেন ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক ফেং গুয়ো। তাঁরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন কম্পিউটার হার্ডঅয়্যার প্রস্তুত করছেন।
নতুন ধরনের এই কম্পিউটিং হার্ডঅয়্যারের অনুপ্রেরণা মানুষের মস্তিষ্ক। ফলে এতে মানুষের বুদ্ধির প্রয়োগ দেখা যেতে পারে। যে বুদ্ধি পৃথিবীর অন্য সকল জীবজন্তু থেকে মানুষকে আলাদা করে রেখেছে।
অধ্যাপক ফেং গুয়ো নেচার ইলেকট্রনিক্স পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থার যা কিছু সীমাবদ্ধতা এখনও পর্যন্ত রয়েছে, বায়োকম্পিউটারে সেগুলিকেও অতিক্রম করে ফেলা যাবে।
বিজ্ঞানীরা অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন, প্রস্তুতির প্রাথমিক পর্যায়ে মানব-মস্তিষ্কের জটিলতম বিষয়গুলি বায়োকম্পিউটারে থাকছে না। তার গঠন আসল মস্তিষ্কের চেয়ে তুলনামূলক সরল।
তবে সেই সঙ্গে বিজ্ঞানীরা এ-ও জানিয়ে দিয়েছেন, এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিকশিত এবং পরিবর্তিত হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী নিজেকে বদলে ফেলার ক্ষমতা রয়েছে তার।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে অতীতে অনেক কাজ হয়েছে। বিজ্ঞানীমহলে বিষয়টি এখন আর নতুন নয়। তবে মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মিশিয়ে দেওয়ার কাজ আগে কখনও হয়নি।
প্রাথমিক ভাবে এই প্রযুক্তি নিয়ে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা। বায়োকম্পিউটার তৈরি হয়ে গেলে অসীম সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচিত হতে পারে বিজ্ঞানের জগতে। সেই সম্ভাবনার আশায় এখন তাঁরা দিন গুনতে শুরু করেছেন।