খ্যাতনামীদের ‘ফ্যান ক্লাব’ থাকাটা নতুন কথা নয়। এ তো হামেশাই হয়! তবে দেশের কোনও পুলিশকর্তার নামে ‘ফ্যান ক্লাব’ গড়ে উঠেছে কি? অনেকেই অবাক হতে পারেন। বলতে পারেন, এমন তো বড় একটা শোনা যায় না। তবে শিমলার প্রথম মহিলা পুলিশ সুপার সৌম্যা সাম্বশিবমের ক্ষেত্রে তেমনই হয়েছে।
কী এমন নজির গড়েছেন সৌম্যা, যার জন্য তাঁর ফ্যান ক্লাব গড়ে উঠেছে? তাঁর দাপটে বাঘে-গরুতে একঘাটে জল খায় না বটে, তবে নিজের পেশাদার জীবনে বহু অপরাধীই তাঁর দাপটের কাছে হার মেনেছে। পুলিশ আধিকারিক হিসেবে যে বিভাগেরই দায়িত্ব সামলেছেন, তাতেই কৃতিত্ব দেখিয়েছেন সৌম্যা।
নিজের পেশা হিসাবে গোড়াতেই পুলিশের চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা ভাবেননি সৌম্যা। ২০১০ ব্যাচের এই আইপিএস অফিসারের জীবনপঞ্জিতে বহুজাতিক সংস্থায় কাজের অভিজ্ঞতাও রয়েছে।
বিজ্ঞানে স্নাতক হওয়ার পর মার্কেটিং অ্যান্ড ফাইনান্স-এ এমবিএ করেছিলেন সৌম্যা। তার পর একটি বহুজাতিক ব্যাঙ্কে কাজও করেন। তবে এক সময় সে সব ছেড়েছুড়ে পুলিশে চাকরির সিদ্ধান্ত নেন।
আইপিএস আধিকারিক হিসেবে শুরুতেই সাফল্য! হিমাচল প্রদেশের শিমলার পুলিশ সুপার পদে যোগদানের আগে তাঁকে সিরমৌর জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেখানে বছর দুয়েক থাকাকালীন ছ’টি খুনের রহস্যভেদ করেছিলেন সৌম্যা।
সিরমৌরের মতো ছোট জেলায় সৌম্যার নাম ছড়াতে দেরি হয়নি। জেলার লোকজন তাঁকে কড়া ধাতের পুলিশ আধিকারিক হিসেবেই চিনতেন। শৃঙ্খলাপরায়ণ বলেও নামডাক রয়েছে সৌম্যার।
সৌম্যার পেশাদার জীবনে সোনালি অধ্যায় বোধ হয় শিমলা-পর্ব। ২০১৭ সালের শেষ দিকে শিমলার পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি। সৌম্যাই ছিলেন শিমলার প্রথম মহিলা পুলিশ সুপার।
২০১৭ সালে যে ঘটনার জেরে তড়িঘড়ি শিমলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সৌম্যাকে, তা হিমাচল ছাড়াও গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল।
গুড়িয়া গণধর্ষণ-কাণ্ড নামে পরিচিত শিমলার ওই ঘটনায় ১৬ বছরের এক দশম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল ছ’জনের বিরুদ্ধে। ২০১৭ সালের ৪ জুলাই স্কুল থেকে একাই বাড়ি ফিরছিল ওই মেয়েটি। স্কুল থেকে তার বাড়ি পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টার রাস্তায় একটি জঙ্গলের মধ্যে তাকে টেনে নিয়ে যায় ওই ছ’জন। সেখানেই গণধর্ষণ এবং শ্বাসরোধ করে খুন। ঘটনার দু’দিন পর ৬ জুলাই ওই কিশোরীর দেহ উদ্ধার হয়। পরের দিন থেকে অভিযুক্তদের গ্রেফতারির দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন।
কিশোরীর গণধর্ষণ-কাণ্ডে শিমলার তৎকালীন পুলিশ সুপার জহুর এস জাইদির নেতৃত্বে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করে তদন্ত শুরু হয়েছিল। পরে অবশ্য সিট-এর থেকে সিবিআইকে তদন্তভার দেওয়া হয়েছিল। সিট-এর তদন্ত চলাকালীন ১৩ জুলাই ধরা পড়ে ছয় অভিযুক্ত। জিজ্ঞাসাবাদের সময় লকআপে মৃত্যু হয় এক অভিযুক্তের। তার জেরেই বদলি করা হয় জাইদিকে। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব নেন সৌম্যা।
শিমলার ওই ঘটনার মামলা গড়ায় হিমাচল প্রদেশ হাই কোর্ট পর্যন্ত। ২০২১ সালের এপ্রিলে ওই কাণ্ডে নিল্লু নামে এক কাঠুরেকে ধর্ষণ ও খুনে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। ওই মামলা চলাকালীনই বদলি করা হয়েছিল সৌম্যাকে। তবে যত দিন পর্যন্ত শিমলার দায়িত্বে ছিলেন, তার মধ্যেই নিজের কর্মদক্ষতায় আমজনতার কুর্নিশ আদায় করে নিয়েছিলেন।
সৌম্যার কর্মদক্ষতার জেরে রাষ্ট্রপতির পদকের জন্যও তাঁর নাম সুপারিশ করা হয়েছে। স্কুল পড়ুয়াদের আত্মরক্ষায় তাদের শিক্ষিত করা ছাড়াও ‘পেপার স্প্রে’ তৈরির জন্যও প্রশিক্ষণ দিয়েছেন সৌম্যা। এ সব দেখেই বোধ হয় ফেসবুকে গড়ে উঠেছে সৌম্যা ফ্যান ক্লাব।