২০০৭ সালে ‘ধন ধনা ধন গোল’ ছবির হাত ধরে প্রচারের আলোয় আসেন সানা খান। ছবিটি সফল হয়নি। কিন্তু সেই ছবির একটি গানে নজর কাড়েন সানা।
‘বিল্লো রানি’ নামের আইটেম গানটি যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। সেই গানেই নাচতে দেখা যায় সানাকে। স্বল্প পোশাকে যেন আগুন ঝরিয়েছিলেন নায়িকা। তাঁর শরীরী উন্মাদনা ঝড় তুলেছিল নানা মহলে।
হিন্দি, তামিল, তেলুগু-সহ মোট পাঁচটি ভাষার ছবিতে কাজ করেছেন সানা। তাঁকে দেখা গিয়েছে ৫০টিরও বেশি বিজ্ঞাপনী ছবিতে। তাঁর কাজ যথেষ্ট প্রশংসিতও হয়েছিল।
১৯৮৮ সালে মুম্বইয়ের ধারাভিতে জন্ম সানার। সেখানেই তাঁর বেড়ে ওঠা। বড় হয়ে মডেলিংয়ের দিকে ঝোঁকেন। সেই পথ ধরে পা রাখেন অভিনয়ের জগতে।
২০০৫ সালে ‘ইয়ে হ্যায় হাই সোসাইটি’ নামের একটি স্বল্প বাজেটের হিন্দি ছবিতে প্রথম কাজ করেন সানা। তার পর ধীরে ধীরে তামিল, তেলুগু, মালয়ালম এবং কন্নড় ভাষার একাধিক ছবিতে দেখা যায় তাঁকে।
সানা অভিনীত হিন্দি ছবিগুলির মধ্যে রয়েছে ‘বম্বে টু গোয়া’, ‘ধন ধনা ধন গোল’, ‘হাল্লা বোল’। এ ছাড়া, ‘জয় হো’, ‘ওয়াজ়়া তুম হো’ এবং ‘টয়লেট: এক প্রেম কথা’ ছবিতেও কাজ করেছেন।
১৪টি ছবি এবং ৫০-এর বেশি বিজ্ঞাপনে সানার সহ-অভিনেতা হিসাবে দেখা গিয়েছে অক্ষয় কুমার, সলমন খান থেকে শুরু করে শাহরুখ খান, অনেক তারকাকেই।
২০১৩ সালে মালয়ালম ইন্ডাস্ট্রিতে সানার অভিষেক হয় ‘ক্লাইম্যাক্স’ ছবির হাত ধরে। বলিউডের ‘ডার্টি পিকচার’-এর মতো এই ছবিও দক্ষিণী অভিনেত্রী সিল্ক স্মিতার জীবনের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন সানা।
২০১২ সালে জনপ্রিয় হিন্দি রিয়্যালিটি শো ‘বিগ বস ৬’-এও প্রতিযোগী হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন সানা। তিনি এই প্রতিযোগিতার ফাইনালে পৌঁছেছিলেন।
২০১৯ সালে সানা নিজেই জানিয়ে দেন কোরিয়োগ্রাফার মেলভিন লিইসের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা। সেই সম্পর্ক অবশ্য বেশি দিন টেকেনি। ২০২০ সালে তাঁদের সম্পর্কে ছেদ পড়ে।
কেরিয়ার যখন একটু একটু করে পাকা হতে শুরু করেছে, ঠিক সেই সময়, ২০১৯ সালে, হঠাৎ অভিনয় জগতকে বিদায় জানান সানা। আচমকা ছেড়ে দেন মডেলিংও।
শুধু তা-ই নয়, আজীবন হিজাব পরার পণ করে বসেন তিনি। ইসলামের যাবতীয় অনুশাসন কঠোর ভাবে মেনে চলতে শুরু করেন। রুপোলি পর্দার ঝলমলে দুনিয়ার দিক থেকে একেবারে মুখ ফিরিয়ে নেন সানা।
ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট করে নিজের সিদ্ধান্ত এবং আকস্মিক এই ভাবান্তরের কারণ ব্যাখ্যা করেন সানা। জানান, তিনি সৃষ্টিকর্তার আদেশ মেনে মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে চান।
এর পরেই ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে মুফতি আনাস সঈদকে বিয়ে করেন সানা। তাঁর স্বামী ইসলাম ধর্ম নিয়ে গবেষণা করেছেন। সেই থেকে কখনও তাঁকে প্রকাশ্যে হিজাব ছাড়া দেখা যায়নি।
কেন হঠাৎ অভিনয় ছেড়ে দিলেন? পরে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে সানা জানান, কী ভাবে অবসাদ গ্রাস করেছিল তাঁকে। কী ভাবে তা থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পেয়েছেন নিজেই।
সানা বলেন, ‘‘আমার অতীত জীবনে আমি সব কিছুই পেয়েছিলাম। নাম, যশ, টাকা, কিছুর অভাব ছিল না। কিন্তু আমার মনে কোনও শান্তি ছিল না। ধীরে ধীরে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ি আমি।’’
ওই ভিডিয়োতে সানা আরও জানান, প্রায়ই একটি নির্দিষ্ট স্বপ্ন দেখতেন তিনি। স্বপ্নে একটি কবর দেখতে পেতেন। তার ভিতরে দেখতে পেতেন নিজেকে। এই স্বপ্ন থেকে সানার মনে হয়েছিল, এ হল ঈশ্বরের বার্তা।
সানার মনে হয়েছিল, স্বপ্নের মাধ্যমে ঈশ্বর তাঁকে জীবন-পদ্ধতি বদলে ফেলার নির্দেশ দিচ্ছেন। তা না করলে স্বপ্নে দেখা কবরটিই তাঁর ভবিতব্য হতে চলেছে।
এই ভাবনার পরই রাতারাতি নিজেকে বদলে ফেলেন সানা। নিয়মিত ইসলামের নানা গ্রন্থ পড়তে শুরু করেন। পরের দিন সকালে উঠেই হিজাবে মাথা এবং শরীরের অধিকাংশ ঢেকে ফেলেন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পণ করেন, আর কখনও হিজাব খুলবেন না।
গত বছর স্বামীর সঙ্গে হজে গিয়েছিলেন সানা। ফিরে এসে জানান, ধর্মের পথে থেকেই তিনি খুশি। হিজাব কখনও খুলতে চান না।