রাশিয়ার চন্দ্র অভিযান ব্যর্থ হতেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন ৯০ বছরের রুশ বিজ্ঞানী। লুনা-২৫ অভিযানে তাঁর অনেক অবদান ছিল।
এই অভিযানটিকে সফল করে তোলার জন্য দিনরাত এক করে পরিশ্রম করেছিলেন মিখাইল ম্যারভ। বার্ধক্যও তাঁর উৎসাহে রাশ টানতে পারেনি। অভিযান ব্যর্থ হওয়ার খবর পেয়ে তাই ভেঙে পড়েন বৃদ্ধ।
তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হলে বৃদ্ধকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। আপাতত সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন।
হাসপাতাল থেকে সংবাদমাধ্যমকে রুশ বিজ্ঞানী বলেছেন, ‘‘এই অভিযান আমার জীবনের একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল। আমার পক্ষে এটা মেনে নেওয়া খুবই কঠিন। অভিযান সফল হল না। আমার হয়তো সেই সাফল্য দেখার সুযোগ আর মিলবে না।’’
রাশিয়ার এই বিজ্ঞানী এর আগে সোভিয়েত ইউনিয়নের একাধিক মহাকাশ গবেষণা এবং অভিযানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দীর্ঘ দিন ধরেই চাঁদ নিয়ে কাজ করে চলেছেন তিনি।
কেন অভিযান ব্যর্থ হল, নেপথ্যে কারও গাফিলতি দায়ী কি না, তা খতিয়ে দেখে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে, আশাবাদী ম্যারভ।
প্রায় পাঁচ দশক পর নতুন করে চাঁদে মহাকাশযান পাঠানোর জন্য কোমর বেঁধেছিল রাশিয়া। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তা ছাড়াই এ বার সব বন্দোবস্ত করা হয়েছিল।
সোভিয়েত আমলে মহাকাশ গবেষণায় তাদের যে সাফল্য, তা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছিল মস্কো। গত ১১ অগস্ট তাদের তৈরি লুনা-২৫ চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি দেয়। কিন্তু ২০ অগস্ট, চাঁদের মাটিতে অবতরণের এক দিন আগে অভিযান ব্যর্থ হয়।
রুশ ল্যান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বিজ্ঞানীদের। পরে জানা যায়, ল্যান্ডারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চাঁদের মাটিতে আছড়ে পড়েছে এবং ভেঙে গিয়েছে। এই সংবাদের পরেই রুশ বিজ্ঞানী অসুস্থ হয়ে পড়েন।
রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমসের তরফে জানানো হয়, শনিবার চাঁদে নামার আগে শেষতম কক্ষপথে পৌঁছনোর কথা ছিল লুনা-২৫-এর। কিন্তু সেই কক্ষপথ বদলের প্রক্রিয়া চলাকালীন ‘জরুরি পরিস্থিতি’র মুখোমুখি হয় ল্যান্ডারটি।
যে কক্ষপথে ল্যান্ডারটিকে স্থাপন করতে চেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা, তার পরিমাপে কিছুটা বিচ্যুতি ঘটেছিল। ফলে নির্ধারিত কক্ষপথের চেয়ে সেটি কিছুটা এগিয়ে যায়। তাতেই ঘটে বিপত্তি। রসকসমসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ৯০ বছরের ম্যারভও।
অন্য দিকে, চাঁদে মহাকাশযান পাঠিয়েছে ভারতও। গত ১৪ জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান স্পেস সেন্টারের ‘লঞ্চিং প্যাড’ থেকে সফল উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার তৈরি চন্দ্রযান-৩-এর। ইতিমধ্যে তার ল্যান্ডার মূল মহাকাশযান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
বুধবার, ২৩ অগস্ট চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রমের চাঁদের মাটিতে অবতরণ করার কথা। সব ঠিক থাকলে এই অবতরণের মাধ্যমে ইতিহাস তৈরি করতে চলেছে ভারত। আমেরিকা, রাশিয়া এবং চিনের পর চাঁদে মহাকাশযান পাঠানো চতুর্থ দেশ হিসাবে তার নাম উঠে আসবে।
ভারতের গন্তব্য চাঁদের দক্ষিণ মেরু, যা এখনও অনাবিষ্কৃত। এই অংশে সফল ভাবে ল্যান্ডার নামাতে পারলে ভারতই চাঁদের দক্ষিণ মেরুর অনাবিষ্কৃত অংশ আবিষ্কারের কৃতিত্ব লাভ করবে।
লুনা-২৫-এর উৎক্ষেপণের পর থেকেই চন্দ্রযান-৩-এর সঙ্গে তার প্রতিযোগিতার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। দুই দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা অবশ্য সেই প্রতিযোগিতার কথা স্বীকার করেনি। লুনা ভেঙে পড়ায় ভারতের সামনে এই মুহূর্তে আর কোনও প্রতিযোগী নেই।
ইসরো জানিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের মাটি ছোঁবে বিক্রম। রোভার প্রজ্ঞানকে পেটের ভিতর নিয়ে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পাখির পালকের মতো নামবে (সফ্ট ল্যান্ডিং) ল্যান্ডারটি। রাশিয়া পারেনি। ভারত কি পারবে? আশায় বুক বেঁধেছে গোটা দেশ।