‘বাঁশের কূটনীতি’ পুরনো বন্ধুর, তবু বিপদে তাকেই পাশে চান নিঃসঙ্গ রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন

উত্তর কোরিয়া সফর শেষ করার পরই দু’দিনের সফরে ভিয়েতনামে যান রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। কমিউনিস্ট শাসিত এই দেশে গিয়ে সে দেশের প্রেসিডেন্ট টো লামের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২৪ ১০:৩১
Share:
০১ ২০

সম্প্রতি উত্তর কোরিয়া এবং ভিয়েতনাম সফরে গিয়েছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তাঁর এই সফরকে বহুবিধ কারণে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

০২ ২০

সম্প্রতি ইউক্রেনে শান্তি ফেরানো নিয়ে সুইৎজ়ারল্যান্ডে বৈঠকে বসেছিল প্রায় ৮০টি দেশ। যদিও এই বৈঠকে আমন্ত্রণ পায়নি পুতিনের রাশিয়া।

Advertisement
০৩ ২০

ওই বৈঠকের পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও একাধিক বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ভারত-সহ কিছু দেশ বাদে বৈঠকে উপস্থিত বাকি দেশগুলি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করে।

০৪ ২০

মূলত আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলির এই বৈঠককে কটাক্ষ করে মস্কোর তরফে দাবি করা হয়, স্রেফ ‘সময় নষ্ট’ করা হচ্ছে। তবে মুখে এ কথা বললেও রাশিয়া যে সুইৎজ়ারল্যান্ডের এই বৈঠকের পর স্বস্তিতে নেই, বেশ কয়েকটি ঘটনায় তার ইঙ্গিত মিলেছে।

০৫ ২০

ঘটনাচক্রে, এই বৈঠকের পরেই উত্তর কোরিয়া এবং ভিয়েতনাম সফরে যান পুতিন। মনে করা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ক্রমশ নিঃসঙ্গ এবং কোণঠাসা হয়েই এশিয়ায় নতুন সঙ্গী খোঁজায় উদ্যোগী হয়ে উঠেছেন পুতিন।

০৬ ২০

দু’দিনের উত্তর কোরিয়া সফরে মঙ্গলবার পিয়ংইয়ং বিমানবন্দরে পৌঁছন পুতিন। সে দেশের স্বৈরশাসক কিম জং উনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত সার্বিক অংশীদারি চুক্তি সই করেন তিনি।

০৭ ২০

উত্তর কোরিয়া সফর শেষ করার পরই দু’দিনের সফরে ভিয়েতনামে যান রুশ প্রেসিডেন্ট। কমিউনিস্ট শাসিত এই দেশে গিয়ে সে দেশের প্রেসিডেন্ট টো লামের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

০৮ ২০

রাশিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থার তরফে জানানো হয়, পুতিন ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট লামকে জানিয়েছেন যে, রাশিয়া ভিয়েতনামের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে চায়।

০৯ ২০

তবে পুতিনকে স্বাগত জানাতে হ্যানয় বিমানবন্দরে দেখা যায়নি ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট কিংবা শীর্ষস্থানীয় কোনও আধিকারিককে। সচরাচর কোনও রাষ্ট্রপ্রধান অন্য দেশে গেলে সে দেশের প্রেসিডেন্ট বা শীর্ষস্থানীয় কেউ তাঁকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে যান।

১০ ২০

পুতিনের ভিয়েতনাম সফরের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায়নি। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, ভিয়েতনাম সফরে গিয়ে সে দেশের সঙ্গে মস্কোর পুরনো সম্পর্কের দিকটি উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন পুতিন।

১১ ২০

তবে সে কাজে তিনি কতটা সফল হয়েছেন, তা নিয়ে একাধিক মত রয়েছে। কারণ, অতীতের বিবাদ দূরে সরিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অনেকটাই কাছে এসেছে আমেরিকা এবং ভিয়েতনাম।

১২ ২০

পুরনো সুসম্পর্কের কথা মাথায় রেখেও রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে সরাসরি মস্কোর পক্ষ নেয়নি ভিয়েতনাম। বরং এ ক্ষেত্রে ভারসাম্যের নীতি নিয়েছে তারা।

১৩ ২০

এক দিকে ভিয়েতনাম যেমন ইউক্রেনে ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছে, তেমনই রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে আনা অন্তত চারটি প্রস্তাবে ভোটদান করা থেকে বিরত থেকেছে।

১৪ ২০

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ভিয়েতনামের এই ভারসাম্যের কূটনীতি অবলম্বন করার অন্যতম কারণ রাশিয়ার অস্ত্রের উপর তাদের নির্ভরশীলতা। আবার গত কয়েক বছরে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ভিয়েতনাম এবং আমেরিকার মধ্যে বোঝাপড়া বৃদ্ধি পেয়েছে।

১৫ ২০

আমেরিকা এবং ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভিয়েতনামকে অর্থ এবং অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। পশ্চিমি বিশ্বের চোখরাঙানিকে অগ্রাহ্য করে হো-চি-মিনের নেতৃত্বাধীন ভিয়েতনামকে প্রথম কূটনৈতিক স্বীকৃতিও দেয় সোভিয়েত দেশ।

১৬ ২০

তবে বর্তমানে পরিবেশ-পরিস্থিতি বদলেছে। সাবেক সোভিয়েত নেই, আর রাশিয়াও এখন খাতায়কলমে সমাজতান্ত্রিক দেশ নয়। এই পরিস্থিতিতে পুরনো সম্পর্ক জোড়া লাগানোয় উদ্যোগী রাশিয়া।

১৭ ২০

আমেরিকা অবশ্য ভিয়েতনামে পুতিনের এই সফরকে ভাল চোখে দেখছে না। তাদের বক্তব্য, কোনও দেশেরই ‘যুদ্ধাপরাধী’ পুতিনকে তাঁর বক্তব্য প্রচারের সুযোগ করে দেওয়া উচিত নয়।

১৮ ২০

অন্য দিকে, দক্ষিণ চিন সাগরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ভিয়েতনামের সঙ্গে সংঘাত রয়েছে চিনের। এমন বহুমুখী কূটনৈতিক সম্পর্ক সত্ত্বেও গত বছর ভিয়েতনামে হাজির ছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

১৯ ২০

আমেরিকা এবং চিনের মধ্যে ‘শীতল’ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ভিয়েতনামে এক মঞ্চে দেখা গিয়েছিল বাইডেন এবং পুতিনকে। অনেকেই মনে করেন, এই সব সম্ভব হয়েছে ভিয়েতনামের ‘বাঁশের কূটনীতি’র কারণে।

২০ ২০

ভিয়েতনামে প্রচুর বাঁশ উৎপন্ন হয়। তাই কূটনৈতিক সম্পর্ক নির্মাণে কমিউনিস্ট এই দেশটি 'বাঁশের মতোই নমনীয়' অবস্থান নেয় বলে কূটনৈতিক মহলে জনশ্রুতি রয়েছে। তাই মনে করা হচ্ছে, পুতিন ভিয়েতনামকে নিজের দিকে ঝোঁকাতে চাইলেও ভিয়েতনাম ভারসাম্যের অবস্থান থেকে সরবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement