সস্তা চিনা টায়ার নিজেদের ট্রাক এবং সাঁজোয়া গাড়িতে লাগিয়ে দুর্নীতি করছেন রাশিয়ার সরকারি আধিকারিকরা। এমনই অভিযোগ উঠেছে।
সামরিক অভিযানের উদ্দেশে যাওয়া রাশিয়ার একাধিক সাঁজোয়া গাড়ি সম্প্রতি ইউক্রেনের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কাদায় আটকে যায়।
চিন থেকে রফতানি করা টায়ার সাঁজোয়া ট্রাকে ব্যবহারের ফলেই এই ঘটনা ঘটেছে। এমনই দাবি করছে পশ্চিমী দেশগুলি।
পশ্চিমী দেশগুলির দাবি, নিম্নমানের টায়ারের কারণেই এই ট্রাকগুলি ইউক্রেনের কাদায় আটকে যায়। পাশাপাশি আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে গতি কমে যায় পুতিনের বাহিনীর।
নেটো-র সদস্য দেশগুলি নিজেদের সামরিক যানে মিশেলিন এক্সজেডএল টায়ার ব্যবহার করে। তবে চিন নিজেদের ব্যবসা বাড়ানোর জন্য প্রায়শই বিভিন্ন পশ্চিমী দেশের নামীদামি সংস্থার নকল করে নিম্নমানের টায়ার তৈরি করে বলে অভিযোগ।
সস্তায় পাওয়া যায় বলে অনেক সংস্থা বিভিন্ন গাড়িতে সেই টায়ার কিনে লাগায়।
একটি গোয়েন্দা সূত্র নিউজিল্যান্ড টাইমসকে জানিয়েছে, রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর কর্তারা খুবই দুর্নীতিগ্রস্ত। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা খাতে প্রতি বছর প্রায় ৫ লক্ষ ৭৪ হাজার ২৭৫ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ রয়েছে। তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতির কারণে এই টাকার অনেকটাই বিভিন্ন কর্মকর্তাদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা হয় বলেও এই সূত্র জানিয়েছে।
এর ফলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে সস্তা চিনা টায়ার কিনে সেগুলি দামি সাঁজোয়া গাড়িতে ব্যবহার করে। আর এই কারণেই বারবার এই গাড়িগুলি ক্ষতির মুখে পড়ে।
টায়ার বিশেষজ্ঞ এবং ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর অধ্যাপক কার্ল মুথের মতে, চিনের ওয়াইএস-২০ টায়ারগুলি নিম্নমানের। এবং এই টায়ারগুলিই তারা বাইরের দেশগুলিতে রফতানি করে।
সূত্রের খবর, ৫০টি মিশেলিন এক্সজেডএল টায়ারের দাম প্রায় ২৭ লক্ষ ৬৯ হাজার টাকা। অন্য দিকে, এই টায়ারের ৫০টি চিনা সংস্করণের দাম মাত্র ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা।
খারাপ রাস্তায় চলাচল করলে এই টায়ারগুলি কিছু দিনেই অকেজো হয়ে পরে। সরাসরি সূর্যের আলোতে টায়ারগুলি রেখে দিলেও এই চিনা টায়ারগুলি নষ্ট হতে পারে।
সম্প্রতি একটি ছবিতে দেখা গিয়েছে যে, রাশিয়ার একটি সেনা গাড়ি এস-১ এসএএম-এর টায়ার ফেটে যাওয়ার পর গাড়িটি কাদায় আটকে গিয়েছে।
টায়ার ফেটে যাওয়ার কারণেই রাশিয়ার এই সেনা গাড়িগুলি রাস্তার উপর বাধ্য হয়ে থামিয়ে দেওয়া হয় বলেও মনে করা হচ্ছে। না হলে তাদের ইউক্রেনের ড্রোন হামলা বা সামরিক বাহিনীর মুখোমুখি হতে হত।
আমেরিকার সেনা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্তা ট্রেন্ট টেলেনকোও জানিয়েছেন, এই ঘটনার পিছনে গভীর দুর্নীতি রয়েছে।
কিভের অনুমান, ইউক্রেনের বাহিনী এখনও পর্যন্ত মোট ২২ হাজার ৪০০ রুশ সেনাকে হত্যা করেছে। টায়ার খারাপ হওয়ার ফলে আটকে থাকা সেনাও নিহত হন বলে মনে করা হচ্ছে।