ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণে কি এ বার নতুন করে তোড়জোড় শুরু করেছে রাশিয়া? সরকারি ভাবে তেমন বিবৃতি প্রকাশ না করলেও সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের দাবি, ইউক্রেনের মাটিতে নামানো হয়েছে রাশিয়ার নতুন অস্ত্র।
রাশিয়ার অস্ত্রভান্ডারে নবতম তুরুপের তাস হতে পারে টি-১৪ আর্মাটা ট্যাঙ্ক! রয়টার্সের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনের মাটিতে এর ব্যবহার শুরু করেছে ভ্লাদিমির পুতিনের সেনাবাহিনী। যদিও মঙ্গলবার ওই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত ওই ট্যাঙ্কের সাহায্যে কোনও লক্ষ্যভেদে মন দেয়নি তারা।
এক সূত্রকে উদ্ধৃত করে রাশিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা আরআইএ বা রিয়া নভোস্তি-র দাবি, ‘‘(ইউক্রেনের বিরুদ্ধে) সরাসরি হামলায় টি-১৪ আর্মাটা ট্যাঙ্ককে এখনও কাজে লাগানো হয়নি।’’
পুতিনের তূণের এই অস্ত্র যে রুশ সেনাবাহিনীকে অতিরিক্ত ভরসা দেওয়ার জন্যই ইউক্রেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তেমনই দাবি করেছে আরআইএ। এই সাঁজোয়া গাড়িটি চালানোর জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে সমন্বয় সাধনে ইউক্রেনের মাটিতে রুশ সেনাদের অনুশীলনও হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থাটি।
রয়টার্স জানিয়েছে, টি-১৪ ট্যাঙ্কের ভিতরে বসেই একে চালনা করা যায়। সে জন্য এই সাঁজোয়া গাড়ির উপরে কোনও সেনার দাঁড়িয়ে থাকার প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ শত্রুপক্ষের উপর আঘাত হানতে এই ট্যাঙ্কটির চালনাকারী এর ভিতরে একটি সশস্ত্র ‘ক্যাপসুলে’ বসে থাকেন। সেখান থেকেই ট্যাঙ্কটিকে নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি।
আরআইএ-র রিপোর্ট অনুযায়ী, জাতীয় সড়কের মতো মসৃণ জায়গায় এক-একটি ট্যাঙ্কের সর্বোচ্চ গতি প্রতি ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। যুদ্ধের এবড়োখেবড়ো ময়দানে এই গতির হেরফের হতে পারে।
ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের দাবি, এ ধরনের এক-একটি ট্যাঙ্ক তৈরি করতে ১১ বছর সময় লেগেছে। এত সময় লাগার কারণও নাকি রয়েছে। তাঁদের আরও দাবি, ‘‘প্রযুক্তিগত ত্রুটি ছাড়াও গোটা পরিকল্পনায় নানা কারণে দেরি হয়েছে।’’
রয়টার্স জানিয়েছে, ২০১৪ সালে আর্মাটা ট্যাঙ্কের নকশা তৈরি করেছিল ইউরালভ্যাগনজ়াভোড নামে একটি রুশ সংস্থা। পরের বছর সেই নকশা প্রকাশ্যে আসে। এর পর ২০২০ সালে ওই সংস্থাকেই ২,৩০০টি এ ধরনের ট্যাঙ্ক তৈরির বরাত দিয়েছিল ক্রেমলিন।
যদিও রুশ সংবাদ সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স ২০২১ সালের ডিসেম্বরে জানিয়েছিল, এই ট্যাঙ্ক তৈরি করেছেন রুশ বহুজাতির রোস্টেক। সে সময় প্রায় ৪০টি ট্যাঙ্কের উৎপাদন শুরু করেছিল তারা। ২০২৩ সালে সেগুলি ডেলিভারির লক্ষ্য ছিল তাদের।
তবে রুশ সংবাদমাধ্যমের দাবি, ইউরালভ্যাগনজ়াভোডের সঙ্গে ট্যাঙ্ক তৈরির চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করে তা ২০২৫ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ৫৫ টনের এক-একটি ট্যাঙ্কের দৈর্ঘ্য ৩৫ ফুট। অন্য দিকে, উচ্চতা এবং চওড়ায় এগুলি ১১ ফুট করে। ইউরালভ্যাগনজ়াভোডের দাবি, ট্যাঙ্কটি ৫ থেকে ১২ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তু ভেদ করতে সক্ষম।
১২ স্পিডের অটোমেটিক গিয়ারবক্সযুক্ত এই ট্যাঙ্কগুলির কর্মক্ষমতার পরিসীমা নাকি ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এতে রয়েছে দেড় হাজার অশ্বক্ষমতাযুক্ত ১২এইচ৩৬০ ডিজ়েল ডাবল চার্জার ইঞ্জিন।
রয়টার্স জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ব্রিটিশ গোয়েন্দারা দাবি করেছিলেন, এই ট্যাঙ্কগুলি ত্রুটিপূর্ণ। এমনকি, ইউক্রেনে যুদ্ধরত রুশ সেনারা গোড়ায় এই ট্যাঙ্কগুলি নিতে ইতস্তত করছিলেন। ট্যাঙ্কগুলি নাকি ‘খারাপ অবস্থায়’ ছিল।
যুদ্ধের ময়দানে ব্যবহারিক কাজের চেয়ে একে মূলত রুশ সেনাবাহিনীর প্রচারের কাজে ব্যবহারের জন্যই তা নাকি ইউক্রেনে পাঠানোয় রাজি হয়েছিল তারা।
সংবাদমাধ্যমের দাবি, ২০১৫ সালে এক-একটি টি-১৪ আর্মাটা ট্যাঙ্কের জন্য খরচ হয়েছিল ৩৭ লক্ষ ডলার থেকে ৪৬ লক্ষ ডলার। ২০২২ সালে সে খরচ বেড়ে ৫০-৭১ লক্ষ ডলার হয়।
এই ট্যাঙ্কের ‘প্রাইমারি গান’-এ নাকি ৪২ রাউন্ডের গোলা ভরা যায়। যার মধ্যে ৩২ রাউন্ড অটোলোডার। অন্য দিকে, এই সাঁজোয়া গাড়িতে একই অক্ষের মেশিনগানে ২,০০০ রাউন্ডের গোলা রাখার ক্ষমতা রয়েছে।