R-37M Missile Deal

বায়ুসেনার তূণে ‘লড়াকু জেটের খুনি’? খেলা ঘোরানো অস্ত্র নিয়ে দিল্লিকে সাধাসাধি রাশিয়ার

পঞ্চম প্রজন্মের লড়াকু জেটের পর এ বার অত্যাধুনিক দূরপাল্লার এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র। অ্যারো ইন্ডিয়া শো-র মাঝেই ভারতকে মেগা অফার দিল রাশিয়া।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:২৮
Share:
০১ ২১
Russia offers advanced R 37M missile to India with local production license

এ বার ভারতের মাটিতেই তৈরি হবে যুদ্ধবিমানে ব্যবহৃত দুনিয়ার অন্যতম শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র? অ্যারো ইন্ডিয়া শো শুরু হওয়ার মুখে এ বার ‘মেগা অফার’ দিল ‘বন্ধু’ রাশিয়া। মস্কোর প্রস্তাবে রাজি হবে নয়াদিল্লি? না কি রয়েছে অন্য কোনও পরিকল্পনা? এই নিয়ে ইতিমধ্যেই তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা।

০২ ২১
Russia offers advanced R 37M missile to India with local production license

চলতি বছরের ১০ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেঙ্গালুরুতে চলবে অ্যারো ইন্ডিয়া শো। সেখানে ভারতীয় বায়ুসেনার জন্য একাধিক হাতিয়ার এবং প্রযুক্তি নিয়ে হাজির হয়েছে রাশিয়া। পশ্চিমি সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, শো শুরু হওয়ার মুখে ‘আর-৩৭এম’ ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতিরক্ষা চুক্তির ব্যাপারে নয়াদিল্লির কাছে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ক্রেমলিন।

Advertisement
০৩ ২১
Russia offers advanced R 37M missile to India with local production license

‘আর-৩৭এম’ প্রকৃতপক্ষে একটি দূরপাল্লার অত্যাধুনিক এয়ার-টু-এয়ার গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র। মাঝ আকাশে ‘ডগ ফাইট’-এর সময়ে শত্রুর যুদ্ধবিমানকে ওড়াতে এর জুড়ি মেলা ভার। ইউক্রেন যুদ্ধে রীতিমতো দাপট দেখিয়েছে ‘আর-৩৭এম’। এর সাহায্যেই কিভের একের পর এক লড়াকু জেট এবং অ্যাটাক হেলিকপ্টারগুলিকে ধ্বংস করেছে রুশ বায়ু-বীররা।

০৪ ২১

১৯৮০-র দশকে ‘আর-৩৭এম’ ক্ষেপণাস্ত্রটির নকশা তৈরি করেন মস্কোর প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। মারণাস্ত্রটির নির্মাণকারী সংস্থার নাম ‘ভিম্পেল এমকেবি’। ১৯৮৫ সালে এর উৎপাদন শুরু করে তারা। কোম্পানির তরফে ক্ষেপণাস্ত্রটির রফতানির ভ্যারিয়েন্টের নাম রাখা হয়েছে ‘আরভিভি-বিডি’।

০৫ ২১

রুশ এয়ার-টু-এয়ার ‘আর-৩৭এম’ ক্ষেপণাস্ত্রটির ওজন ৫১০ কেজি। প্রায় সাড় ৪ মিটার লম্বা এই হাতিয়ারে ভরা থাকে ৬০ কেজি বিস্ফোরক। ক্ষেপণাস্ত্রটির পাল্লা প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। দুনিয়ার আর কোনও এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের এই দূরত্ব অতিক্রম করে আক্রমণ শানানোর ক্ষমতা নেই বলে দাবি করে থাকে মস্কো।

০৬ ২১

পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়ার পর ম্যাক ৬ (শব্দের ছ’গুণ বেশি) গতিতে ছুটতে পারে রুশ এয়ার-টু-এয়ার ‘আর-৩৭এম’। অর্থাৎ ঘণ্টায় ৭,৪০০ কিলোমিটার বেগে উড়ে গিয়ে নিখুঁত নিশানায় শত্রুর যুদ্ধবিমান এবং অ্যাটাক হেলিকপ্টার ধ্বংস করার ক্ষমতা রয়েছে মস্কোর মারণাস্ত্রের।

০৭ ২১

তবে ‘আর-৩৭এম’ ক্ষেপণাস্ত্রের রফতানি ভ্যারিয়েন্ট ‘আরভিভি-বিডি’ কিন্তু এতটা শক্তিশালী নয়। এর পাল্লা ২০০ কিলোমিটার এবং গতিবেগ ঘণ্টায় ২,৫০০ কিলোমিটার। দু’টি হাতিয়ারের মধ্যে কোনটির চুক্তি নয়াদিল্লির সঙ্গে সেরে ফেলতে মস্কো আগ্রহী, তা অবশ্য জানা যায়নি।

০৮ ২১

রাশিয়ার তৈরি ‘এসইউ-৩০এমকেআই’ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ভারতীয় বায়ুসেনা। এই লড়াকু জেটগুলিকে ‘আর-৭৭’ ক্ষেপণাস্ত্রে সাজিয়েছে নয়াদিল্লি। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি, মস্কোর প্রস্তাব মেনে ‘আর-৩৭এম’ হাতিয়ারটি হাতে পেলে অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে এ দেশের আকাশ-যোদ্ধাদের শক্তি। ক্রেমলিনের ওই ক্ষেপণাস্ত্রটিকে ‘গেম চেঞ্জার’ বলেছেন তাঁরা।

০৯ ২১

সূত্রের খবর, ‘আর-৩৭এম’ ক্ষেপণাস্ত্রটির প্রযুক্তি ‘বন্ধু’ ভারতকে হস্তান্তর করতে চায় রাশিয়া। শুধু তা-ই নয়, এ দেশের মাটিতে হাতিয়ারটির ব্যাপক উৎপাদনেও কোনও আপত্তি নেই ক্রেমলিনের। যদিও সরকারি ভাবে এই নিয়ে নয়াদিল্লি বা মস্কোর তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

১০ ২১

রাশিয়ার এ-হেন প্রস্তাব গ্রহণের পক্ষে সওয়াল করেছেন প্রতিরক্ষা গবেষকদের একাংশ। এ ব্যাপারে ‘ব্রহ্মস’ সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের উদাহরণ দিয়েছেন তাঁরা। মস্কোর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এই হাতিয়ারটি তৈরি করেছে নয়াদিল্লি। বর্তমানে ফিলিপিন্সে চলছে এর রফতানি। আর এ ভাবেই অস্ত্র ব্যবসার বাজারে পা জমানোর চেষ্টা করছে ভারত।

১১ ২১

তবে এর উল্টো যুক্তিও রয়েছে। বিশ্লেষকদের অপর অংশের দাবি, রাশিয়ার সঙ্গে এই চুক্তিতে যাওয়ার আগে ক্ষেপণাস্ত্রটির ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে। কারণ, ‘আরভিভি-বিডি’র পাল্লা এবং গতিবেগ অনেকটাই কম। ওই প্রযুক্তি হাতে পেলে সে ভাবে লাভবান হবে না ভারতীয় বায়ুসেনা।

১২ ২১

এ দেশের বায়ুবীরদের অস্ত্রাগারে রয়েছে প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিওর তৈরি ‘অস্ত্র’ এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র। বর্তমানে এই হাতিয়ারটির আধুনিকতম ভ্যারিয়েন্টটির (পড়ুন অস্ত্র এমকে-৩) ট্রায়াল চলছে। এর পাল্লা ৩৫০ কিলোমিটার বলে জানা গিয়েছে। ট্রায়াল সফল হলে ‘আরভিভি-বিডি’র চেয়ে বেশি দূরত্বে শত্রুর উপর আঘাত হানার হাতিয়ার পেয়ে যাবে বায়ুসেনা।

১৩ ২১

বিশ্লেষকদের অনুমান, শেষ পর্যন্ত ‘আর-৩৭এম’ নিয়ে মস্কো ও নয়াদিল্লির মধ্যে চুক্তি হলে ভারতের মাটিতে জন্ম হবে নতুন প্রতিরক্ষা সংস্থার। সে ক্ষেত্রে বাড়বে কর্মসংস্থান। আর্থিক দিক থেকেও এতে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কোম্পানিটির নিয়ন্ত্রণ অবশ্য থাকবে দুই দেশের হাতেই।

১৪ ২১

এ বারের অ্যারো ইন্ডিয়া শো-তে পঞ্চম প্রজন্মের লড়াকু জেট ‘এসইউ-৫৭ ফ্যালন’কে পাঠিয়েছে রাশিয়া। ভারতের আকাশে ইতিমধ্যেই কসরত দেখিয়েছে এই যুদ্ধবিমান। সেই ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় রীতিমতো হইচই পড়ে গিয়েছে। এই যুদ্ধবিমানের প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়েও প্রবল আগ্রহী মস্কো।

১৫ ২১

সূত্রের খবর, ‘এসইউ-৫৭’ লড়াকু জেটের প্রযুক্তি ভারতকে হস্তান্তরে রাজি আছে ক্রেমলিন। এই যুদ্ধবিমানের উৎপাদনের লাইসেন্সও নয়াদিল্লিকে দিতে পারে মস্কো। উল্লেখ্য, ‘এসইউ-৫৭’ লড়াকু জেট থেকেও ব্যবহার করা যায় ‘আর-৩৭এম’ ক্ষেপণাস্ত্র।

১৬ ২১

বর্তমানে যুদ্ধবিমানের স্বল্পতায় ভুগছে ভারতীয় বায়ুসেনা। আর তাই খুব দ্রুত ১১৪টি লড়াকু জেট কেনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি। সূত্রের খবর, অ্যারো ইন্ডিয়া শো-এর পর এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্র। এতে রুশ ‘এসইউ-৫৭’কে কড়া টক্কর দিতে পারে আমেরিকার তৈরি ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’ যুদ্ধবিমানটি।

১৭ ২১

প্রসঙ্গত, সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে ‘তেজস’ লড়াকু জেট তৈরি করেছে ভারত। কিন্তু এর ইঞ্জিন বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে নয়াদিল্লিকে। ফলে থমকে রয়েছে ‘তেজস’-এর ব্যাপক উৎপাদন।

১৮ ২১

চিন ও পাকিস্তানের মতো দুই শত্রুভাবাপন্ন প্রতিবেশীকে মোকাবিলার জন্য প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও তৈরি করেছে ‘অ্যাডভান্স মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফ্‌ট’ বা অ্যামকার নকশা। এ বারের অ্যারো ইন্ডিয়া শোতে সেটি প্রদর্শিত হচ্ছে। এই লড়াকু জেট তৈরি করতে ২০২৮ সাল পর্যন্ত সময় লেগে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

১৯ ২১

অ্যারো ইন্ডিয়া শো চলাকালীনই (পড়ুন ১২-১৩ ফেব্রুয়ারি) আমেরিকা সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। সেখানে একাধিক প্রতিরক্ষা চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ ভারতকে অত্যাধুনিক হাতিয়ার বিক্রির ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প।

২০ ২১

অন্য দিকে, এ বছরেই নয়াদিল্লি সফরে আসবেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সূত্রের খবর, যুদ্ধবিমান থেকে শুরু করে একাধিক হাতিয়ার সংক্রান্ত প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে মরিয়া হয়ে রয়েছেন তিনি।

২১ ২১

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, অন্যান্য অস্ত্রচুক্তির আগে যুদ্ধবিমান কেনার ব্যাপারটি নিশ্চিত করবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সে ক্ষেত্রে রুশ ‘এসইউ-৫৭ ফ্যালন’ না কি যুক্তরাষ্ট্রের ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’ – ভারতীয় বায়ুসেনা কোনটিকে বেছে নেয়, সেটাই এখন দেখার।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement