আবার বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। আমেরিকা, চিন, সিঙ্গাপুরের পরে করোনার নতুন উপরূপ থেকে ছাড় পেল না ভারতও। ইতিমধ্যেই গত সাত মাসের মধ্যে কোভিডে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু ঘটেছে গত ২৪ ঘণ্টায়। নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য দফতর।
বৃহস্পতিবার সারা দেশ জুড়ে মোট ছয় জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে খবর, গত ২৪ ঘণ্টায় কেরলে তিন জন, কর্নাটকে দু’জন এবং পঞ্জাবে এক জন মারা গিয়েছেন। এক দিনে মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির নেপথ্যকারণও জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে খবর, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৯৪ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে যে ছয় জন মারা গিয়েছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে তাঁরা সকলেই গুরুতর অসুখে দীর্ঘ কাল ধরে ভুগছিলেন। শুধুমাত্র করোনায় আক্রান্ত হয়ে তাঁরা মারা যাননি বলেই দাবি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
করোনা ভাইরাসের নতুন উপরূপ জেএন.১-এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় হঠাৎ করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি নয়া উপরূপ জেএন.১-কে ‘ভ্যারিয়্যান্ট অফ ইন্টারেস্ট’ হিসাবে ব্যাখ্যা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।
কিন্তু হু-এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি, এই উপরূপের সংক্রমণের ফলে মৃত্যুর আশঙ্কা প্রায় নেই বললেই চলে। তা ছাড়া এই উপরূপটি আগের উপরূপের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর নয় বলেও জানানো হয়েছে। কোভিডের প্রতিষেধক নিলে এর সংক্রমণের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করা যাবে।
তবে করোনার সংক্রমণ নতুন করে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কোভিড পরীক্ষা করার জন্য নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। দিল্লি, উত্তরাখণ্ড এবং মহারাষ্ট্র প্রশাসন ইতিমধ্যেই ‘জিনোম সিকোয়েন্সিং’-এর জন্য হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছে।
বুধবার মহারাষ্ট্রে করোনায় প্রথম আক্রান্ত ধরা পড়ে। বৃহস্পতিবার মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বৈঠকে বসেছিলেন। শুক্রবার দুপুর ৩টেয় মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই বৈঠকে ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানা গিয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক মুখপাত্র করোনার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, ‘‘করোনার প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার সময় যে ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়েছিল, এখন আর সেই ভয় নেই। তখন বিমানবন্দরে কোভিড পরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বিমানে যাতায়াত নিয়েও সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তার কোনও প্রয়োজন হবে না। এ বার করোনায় কেউ আক্রান্ত হলেও তার উপসর্গ সামান্যই।’’
এর আগে করোনা ভাইরাসের আরও একটি উপরূপের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। যার নাম বিএ.২.৮৬। আমেরিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধ কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়, জেএন.১ এবং বিএ.২.৮৬-এর মধ্যে ফারাক খুবই সামান্য। চিনে অবশ্য জেএন.১ প্রথম পাওয়া যায়নি।
করোনার এই উপরূপটি প্রথম পাওয়া গিয়েছিল আমেরিকায়। গত সেপ্টেম্বরে তার খোঁজ মেলে। ডিসেম্বরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমেরিকায় যে ক’জন কোভিড রোগী এই মুহূর্তে আছেন, তাঁদের ১৫-২৯ শতাংশের দেহে রয়েছে জেএন.১ উপরূপ। চিন, আমেরিকা, সিঙ্গাপুর-সহ অন্যান্য দেশেও করোনার নতুন উপরূপের দেখা মিলেছে।
দেশেও আচমকাই গতি পেয়েছে করোনা সংক্রমণ। গোটা দেশে গত দু’সপ্তাহে বেড়েছে মৃতের সংখ্যা। দু’সপ্তাহে মৃতের সংখ্যা মোট ১৬।
বৃহস্পতিবারের রিপোর্ট অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫৮ জন। তাঁদের মধ্যে ৩০০ জনই কেরলের বাসিন্দা।
দেশে এখন সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা ২,৬৬৯। বুধবার দেশে কোভিডে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছিলেন ৬১৪ জন। মে মাস থেকে দেশে এক দিনে এত জন সংক্রমিত হননি।
করোনা ভাইরাসের নতুন উপরূপ জেএন.১-এর কারণেই বৃদ্ধি পাচ্ছে সংক্রমণ। তবে হু এও জানিয়েছে, নতুন এই উপরূপ যে খুব মারাত্মক, এখনও তার সপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ মেলেনি।