তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলে উঠে আসেনি নতুন কোনও মুখ। আরও এক বার ক্ষমতায় এসেছেন রিসেপ তাইপ এরদোগান। এই নিয়ে টানা তিন দশক তুরস্কের প্রেসিডেন্টের আসনে বসলেন তিনি।
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এরদোগানের এই পুনর্নির্বাচন যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। নির্বাচনের ফলের দিকে তাকিয়েছিলেন বিশ্বের তাবড় রাজনীতিবিদেরা। এরদোগানের হাত থেকে তুরস্কের শাসনভার অন্য কেউ পাবেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা চলছিল।
কিন্তু সমস্ত জল্পনার অবসান হয়েছে রবিবার। নির্বাচনে জয়লাভ করে ফের ক্ষমতায় এসেছেন এরদোগান। ২০০৩ সাল থেকে টানা ৩০ বছর প্রেসিডেন্ট হলেন তিনি। এখন প্রশ্ন, এতে ভারতের কোনও লাভ হল কি?
তুরস্কের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খুব একটা ভাল নয়। সাম্প্রতিক অতীতে একাধিক বার রাষ্ট্রপুঞ্জের অধিবেশনে এরদোগানের মুখে ভারতের সমালোচনা শোনা গিয়েছে।
ভারত, বিশেষত কাশ্মীর ইস্যুতে বার বার অযাচিত ভাবে মুখ খুলতে দেখা গিয়েছে এরদোগানকে। পাক অধিকৃত কাশ্মীর সম্পর্কে ভারতের অবস্থানের সমালোচনা করেছেন তিনি।
২০২২ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জে এরদোগান সরাসরি জানান, ৭৫ বছরেও ভারত এবং পাকিস্তান কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। এটি দুর্ভাগ্যজনক। এত প্রকট ভাবে সমালোচনা এরদোগানের মুখে আগে শোনা যায়নি।
৬৯ বছর বয়সি তুর্কি প্রেসিডেন্ট ভারত প্রসঙ্গে মুখ খুলে অতীতে একাধিক বিতর্কে জড়িয়েছেন। তুরস্কের সামরিক বাহিনী ‘সাদাত’কে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে মোতায়েন করার কথাও বলেছেন তিনি।
এই ‘সাদাত’-এর সঙ্গে পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের ঘনিষ্ঠ যোগ আছে বলে মনে করা হয়। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে এই বাহিনী মোতায়েন করা হলে ভারতের জন্য তা একেবারেই সুখকর হবে না।
পাকিস্তানে চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভেও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এরদোগান। পাকিস্তানে বিনিয়োগ করে চিনের যে লোকসান হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে তুরস্কের হস্তক্ষেপ বেজিংয়ের জন্যও সুখবর। এতে ভারতের উপর আলাদা করে চাপ সৃষ্টি হতে পারে।
রাশিয়া থেকে ভারত যে তেল আমদানি করে, তাতেও নাক গলিয়েছে তুরস্ক। রাশিয়ার রফতানিকৃত ওই তেল ভারতে প্রবেশের আগে তা আটকে দেওয়ার কথা বলেছিলেন এই এরদোগান।
তুরস্ক থেকে উন্নত প্রযুক্তির বায়রাকটার ড্রোন কিনতে চেয়েছিল ভারত। কিন্তু ভারতে ড্রোনের জোগান দিতে সরাসরি ‘না’ করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। এই একই ড্রোন তুরস্ক থেকে ইউক্রেনে পাঠানো হয়েছিল। যা রুশ বাহিনীকে ঘায়েল করতে কাজে লেগেছিল।
পাকিস্তানের সঙ্গে মিলে বরাবরই ভারত-বিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত এরদোগানের তুরস্ক, এমনটাই মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। তাদের এই সমঝোতায় চিনও জড়িত থাকতে পারে।
২০২২ সালের নভেম্বরে তুরস্ক সফরে যান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। সেখানে এরদোগানের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর আলোচনা হয়। এরদোগান তাঁকে আশ্বাস দেন, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করে তুলতে তুরস্ক সবরকম সাহায্য করবে।
এরদোগানের ধর্মীয় নীতিও বিতর্কিত। ভারতের ক্ষেত্রে তা-ও চিন্তার কারণ হতে পারে। দেশের অভ্যন্তরে মসজিদ এবং অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিপুল টাকা ঢালেন এরদোগান।
পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, কাতারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ইসলামিক দুনিয়ায় নেতৃত্ব সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির থেকে ছিনিয়ে নিতে চান এরদোগান। নিজে স্বপ্ন দেখেন অটোমান সাম্রাজ্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠার।
তুরস্কের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বেশ নড়বড়ে। ফেব্রুয়ারি মাসে বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পর দেশটি আরও বেশি ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে। খাদ্য সঙ্কট সেখানে তীব্র হয়েছে আরও। এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া প্রেসিডেন্ট হিসাবে এরদোগানের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
পারস্পরিক সম্পর্ক মসৃণ না হলেও তুরস্কের দুর্দিনে পাশে দাঁড়িয়েছিল ভারত। ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলার পর সেখানে চালু করা হয়েছিল ‘অপারেশন দোস্ত’। ভারত থেকে তুরস্কে গিয়েছিল উদ্ধারকারী দল এবং ত্রাণসামগ্রী।
অবশ্য নতুন করে ক্ষমতায় আসার পর এরদোগান ভারতের সঙ্গে ‘শত্রুতা’ চালিয়ে যাবেন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারত-বিরোধী কূটনৈতিক চাল চালতে পারেন তিনি। দিল্লির চিন্তা তাতে আরও বাড়বে।