এক সময়ে বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবের ছায়াসঙ্গী ছিলেন। তার পর তৈরি হয়েছিল দূরত্ব। এককালের ঘনিষ্ঠ লোকসভা ভোটে লড়ে হারিয়েছিলেন লালুকেই। এ বার সেই রঞ্জনপ্রসাদ যাদব আবার যোগ দিলেন লালুর দল রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)-তে।
গত বৃহস্পতিবার আবার আরজেডিতে যোগ দেন রঞ্জন। আরজেডির রাজ্যসভার সাংসদ মনোজকুমার ঝায়ের উপস্থিতিতে। তার পর তিনি জানান, এই যোগদান আসলে ‘ঘরে ফেরা’।
এর পর লালুর সঙ্গে দেখা করেন রঞ্জন। বলেন, ‘‘সেই সত্তরের দশকে আমরা দু’জন মিলে একসঙ্গে সামাজিক ন্যায়ের জন্য লড়াই শুরু করি। এখনও তা-ই করছি। পাশাপাশি, সংবিধান রক্ষার লড়াইও চালিয়ে যাচ্ছি।’’
আরজেডিতে যোগ দিয়েই রঞ্জনের দাবি, ওই আসন থেকে এ বার লালুর কন্যা মিসাই জিতবেন। এই পাটলিপুত্র লোকসভা আসনেই তিনি একদা হারিয়েছিলেন লালুকে। জনতা দল ইউনাইটেডের টিকিটে। ১০ বছর আগে ওই আসনেই মিসার মুখোমুখি হয়েছিলেন রঞ্জন।
লালু এবং রঞ্জনের বন্ধুত্ব সেই ষাটের দশক থেকে। সংযুক্ত সমাজবাদী পার্টির ছাত্র শাখা সমাজবাদী যুবযান সভায় যোগ দেন লালু। সে সময় পটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়োলজির শিক্ষক ছিলেন রঞ্জন।
সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগে রঞ্জন রাজনীতি নিয়ে লালুকে পরামর্শ দিতেন। পরে রঞ্জন জানিয়েছিলেন, নিজের নালা রোডের বাড়িতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তিনি লালুর সঙ্গে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতেন সেই ষাট-সত্তরের দশকে।
১৯৯০ সালের মার্চে প্রথম বার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন লালু। নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম গিয়েছিলেন রঞ্জনের বাড়িতে। লালু জানিয়েছিলেন, শুধু বন্ধু নন, রঞ্জন আসলে তাঁর বড় দাদা।
১৯৯০ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত রঞ্জন ছিলেন আরজেডির রাজ্যসভার সাংসদ। লালু যখন প্রথম বার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন, তখন বিহারের শিক্ষাক্ষেত্রে দারুণ প্রভাব ছিল রঞ্জনের। শিক্ষা দফতরে তাঁর কথাই ছিল শেষ কথা।
১৯৯৬ সালে পশুখাদ্য মামলায় জেলে গিয়েছিলেন লালু। তখন বিহার সরকারের অন্দরে একাংশ রঞ্জনকে ‘প্রক্সি মুখ্যমন্ত্রী’ বলতেন। এর পর লালু নিজের স্ত্রী রাবড়ী দেবীকেই মুখ্যমন্ত্রী পদে বসান। তার পরেই দুই বন্ধুর মধ্যে বৃদ্ধি পায় দূরত্ব।
২০০৪ সালে রামবিলাস পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টিতে যোগ দেন রঞ্জন। ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে বিহারে নীতীশ কুমারের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে। তখন জেডিইউতে যোগ দেন রঞ্জন।
এর পর ২০০৯ সালে পাটলিপুত্র লোকসভা কেন্দ্রে লালুর বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হন রঞ্জন। এর আগে লালুকে লোকসভা ভোটে হারিয়েছিলেন মাত্র এক জনই, শরদ যাদব। সে দিক থেকে রঞ্জন দ্বিতীয়।
পাঁচ বছর পর সেই লোকসভা কেন্দ্রেই লড়াই করে তৃতীয় হয়েছিলেন রঞ্জন। সে বার জয়ী হয়েছিলেন রামকৃপাল যাদব। আরজেডি ছেড়ে ২০১৪ সালে বিজেপির টিকিটে লড়েছিলেন তিনি। ওই ভোটে পাটলিপুত্র আসনে দ্বিতীয় হয়েছিলেন লালু-কন্যা মিসা ভারতী যাদব।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আবার পাটলিপুত্র আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন মিসা। সে বারও তিনি রামকৃপালের কাছে হেরে যান। তাতে যদিও লালুর কন্যা দমেননি। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে ওই আসনেই আবার প্রার্থী মিসা ।
রঞ্জনের দাবি, এ বার ওই আসনে মিসাই জয়ী হবেন। ২০১৪ সালে পাটলিপুত্র আসনে হারার পরেই জেডিইউতে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন রঞ্জন। এ বার যোগ দিলেন আরজেডিতে।
যদিও আরজেডিতে নতুন কোনও দায়িত্ব পাওয়ার আশা তাঁর নেই বলেই মনে করছে আরজেডির একাংশ। দলের তাঁর থেকে কিছু পাওয়ার নেই। তবে একাংশ মনে করছেন, এতে নৈতিক জয় হল লালুরই।
আরজেডির এক নেতা বলেন, ‘‘এর থেকে বোঝা যাচ্ছে, নীতীশ ক্রমেই জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন। সেখানে লালু এখনও রাজ্যের রাজনীতিতে বড় ভূমিকা পালন করে চলেছেন। রঞ্জন যাদবের দলে ফেরা আসলে বুঝিয়ে দিল, লালু এবং তেজস্বীর নেতৃত্বে ঠিক পথেই এগোচ্ছে আরজেডি।’’