ভবিষ্যৎ সঞ্চয়ের জন্য বাজারে বিনিয়োগের প্রচুর বিকল্প রয়েছে। কম ঝুঁকি, করছাড় ও স্থিতিশীল ফেরত— এই তিনটি গুণের কারণে পিপিএফ বা পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড অন্যান্য বিনিয়োগের বিকল্প হিসাবে বেশ জনপ্রিয়। বর্তমানে, পিপিএফে বার্ষিক ৭.১ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যায়।
মিউচুয়াল ফান্ড বা স্টকগুলির মতো বাজার-সংযুক্ত ঝুঁকি এড়িয়ে নিশ্চিত রিটার্নের জন্য অনেক বিনিয়োগকারী এতে ভরসা রাখছেন।
নিজেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য বিনিয়োগ করা আবশ্যক। আর নিরাপদে বিনিয়োগ করে ভাল রিটার্ন পেতে হলে বিনিয়োগ করতে পারেন পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড বা পিপিএফে।
নির্দিষ্ট লক্ষ্যপূরণের জন্য অবশ্যই একটি আর্থিক পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন। তবে এই লক্ষ্য বয়স এবং সময়ের সঙ্গে পরিবর্তনশীল।
আর্থিক বিশেষজ্ঞদের মতে, অবসর পরিকল্পনা তহবিলের জন্য পিপিএফ আদর্শ। এটি কেন্দ্রীয় সরকার সমর্থিত প্রকল্প। ফলে ঝুঁকির পরিমাণ নেই বললেই চলে। আমানত থাকে সম্পূর্ণ নিরাপদ, সেই সঙ্গে মেলে ভাল রিটার্নও।
বর্তমানে মাত্র ৫০০ টাকা দিয়ে পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। কেউ যদি এক বছরে ৫০০ টাকা জমা করেন তা হলেই প্রকল্প চালু থাকবে। সর্বোচ্চ বিনিয়োগের পরিমাণ বছরে দেড় লাখ টাকা।
গ্রাহক চাইলে নিজের নামে একাধিক পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। সেপ্টেম্বরে নয়া এক নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, একাধিক পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খুলতে চাইলে প্রাথমিক অ্যাকাউন্টটিতে সুদের প্রযোজ্য হার জমা পড়বে, যত ক্ষণ না জমা আমানত প্রাথমিক অ্যাকাউন্টটের প্রযোজ্য বার্ষিক সীমা অতিক্রম করে।
দ্বিতীয় অ্যাকাউন্টের টাকা প্রাথমিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হবে। এ ছাড়া প্রাথমিক ও দ্বিতীয় অ্যাকাউন্ট ছাড়া অন্য কোনও অ্যাকাউন্টে কোনও সুদ দেওয়া হবে না। দ্বিতীয় অ্যাকাউন্টের জমা হওয়া আমানত প্রথম অ্যাকাউন্টের সঙ্গে মিশে যাবে।
পিপিএফ তহবিলে সবচেয়ে সুবিধাজনক বিষয়টি হল, এতে বিনিয়োগ আয়কর মুক্ত। আয়কর আইনের ৮০সি ধারার আওতায় সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত ছাড় মেলে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল, প্রকল্পে অর্জিত সুদ এবং মেয়াদপূর্তিতে প্রাপ্ত অর্থ সম্পূর্ণ করমুক্ত।
কী ভাবে স়ঞ্চয় করলে পিপিএফে ভাল রিটার্ন মিলতে পারে? পিপিএফ তহবিলে কত টাকা বিনিয়োগ করলে ভবিষ্যতে মোটা আমানত ফেরত পাওয়া যাবে? রইল তারই হদিস।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, যদি কেউ প্রতি মাসে পিপিএফ তহবিলে দুই হাজার টাকা করে বিনিয়োগ করতে থাকেন, বছরের শেষে বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৪ হাজার টাকা।
আর ১৫ বছরে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ হবে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এর উপর ৭.১ শতাংশ হারে সুদ মিলবে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। যার ফলে বিনিয়োগকারী ১৫ বছর পর মেয়াদ পূর্ণ হলে হাতে পাবেন মোট ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
বার্ষিক বিনিয়োগ ৩৬ হাজার টাকা হলে ১৫ বছরে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ হবে ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। অর্জিত সুদের পরিমাণ হবে ৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। ১৫ বছর পরে সুদ সমেত ফেরত আসবে ৯ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।
বছরে পিপিএফে ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে কত টাকা জমা হতে পারে? এই পরিমাণ বিনিয়োগের ফলে ১৫ বছরে ১৩.৬৫ লাখ টাকা জমাতে পারবেন।
একটি পিপিএফ অ্যাকাউন্টে প্রতি বছর সর্বোচ্চ ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে ১৫ বছরে ৪০.৬৮ লাখ টাকার স্থায়ী আমানত তৈরি হতে পারে।
এমনকি কোটিপতি হওয়াও সম্ভব এই প্রকল্পের মাধ্যমে। কেউ যদি পিপিএফে বার্ষিক এক লাখ টাকা জমা করেন, তা হলে ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে এই প্রকল্পটি বাড়াতে হবে। ১৫ বছরের পরিবর্তে ৩০ বছরের জন্য বিনিয়োগ চালিয়ে যেতে হবে।
৩০ বছরে এক লাখ টাকা করে মোট ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ হবে। ৭.১ শতাংশ হারে ধরে হিসাব করলে এতে সুদ হিসাবে ৭৩ লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে। এই ভাবে, ৩০ বছর মেয়াদপূর্তির সময়ে সেই পরিমাণ দাঁড়াবে এক কোটি তিন লাখ টাকায়।
তবে পিপিএফের মেয়াদ বাড়াতে হলে মেয়াদপূর্তির আগে একটি আবেদন জানাতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে।