হাতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা। রবিবারই ‘বিগ বস’-এর ঘর থেকে বেরোবেন ১৬তম মরসুমের বিজেতা। কার মুখে দেখা যাবে শেষ হাসি? এ নিয়ে জল্পনার দৌড়ে প্রথম সারিতে রয়েছেন প্রিয়ঙ্কা চহার চৌধরী।
লাখো অনুরাগীর আশা, সলমন খান সঞ্চালিত ওই রিয়্যালিটি শোয়ে বাজিমাত করবেন প্রিয়ঙ্কাই। অথচ ৮ বছর আগেও এমনটা ভাবা দুরাশা ছিল।
রাজস্থানের জয়পুরের অখ্যাত মেয়েটিকে বেশ লড়াই করে নিজের জমি তৈরি করতে হয়েছে। বলিউডের পর হলিউডে গিয়ে নাম করা আর এক প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে তাঁর নামের মিল থাকলেও খ্যাতির নিরিখে তাঁদের দু’জনের কোনও তুলনাই চলে না। তবে সেই প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার মতোই ধীরে হলেও শিরোনাম কুড়োতে শুরু করেছেন জয়পুরের মেয়েটি।
প্রিয়ঙ্কা নামে পরিচিতি পেলেও জয়পুরের ২৬ বছরের মেয়েটির আসল নাম অন্য। মা-বাবা নাম রেখেছিলেন পরী। তবে গ্ল্যামারের ঝাঁ-চকচকে দুনিয়ায় পা রাখার কয়েক বছর পর সে নাম পাল্টে ফেলেন তিনি।
জয়পুরের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় থেকেই মিউজ়িক ভিডিয়োয় মুখ দেখাতে শুরু করেছিলেন প্রিয়ঙ্কা। তখন তাঁর বয়স মোটে ১৬। সে সময় পরী নামেই ওই ভিডিয়োগুলিতে কাজ করতেন তিনি।
পড়াশোনার ফাঁকে মডেলিংও করতেন প্রিয়ঙ্কা। তবে সে সবই ছিল জয়পুরের মতো শহরের গণ্ডিতে। স্কুল-কলেজের পড়াশোনার বাইরে নাচেও কম উৎসাহ ছিল না তাঁর।
মডেলিং করার সময় সিনেমায় অভিনয়েরও সুযোগ এসে যায়। তবে সে সব বড় ব্যানারের বলিউডি ছবি নয়। বরং স্বল্প বাজেটের সে সব ছবির প্রযোজকেরা দর্শক টানতে যৌনতাকে হাতিয়ার করে ময়দানে নামতেন।
কেরিয়ারের গোড়ায় বেশ কয়েকটি ‘দুষ্টু’ সিনেমার পাশাপাশি ওয়েব সিরিজ়েও মুখ দেখিয়েছেন প্রিয়ঙ্কা। তখনও পরী নামেই তাঁকে পর্দায় দেখা গিয়েছিল।
কম বয়সেই প্রিয়ঙ্কার হাতে এসেছিল ‘পেন্ডিং লভ’ বা ‘লতিফ টু লাদেন’-এর মতো ‘মশলাদার চটুল’ ছবি। ২০১৮ সালে ওই ছবিগুলিতে মুখ দেখালেও তা প্রিয়ঙ্কার কেরিয়ারের মোড় ঘোরাতে পারেনি।
‘পেন্ডিং লভ’ ছবিতে রাখী সবন্ত এবং শোয়েব নিকাশ শাহের সঙ্গে ছিলেন ২২ বছরের প্রিয়ঙ্কা। তবে যৌন আবেদন ছড়ালেও তাঁর লাভের ঘর ফাঁকাই থেকেছে।
২০১৮ সালে আরও একটি স্বল্প বাজেটের ছবিতে ডাক পেয়েছিলেন তিনি। ‘লতিফ টু লাদেন’ নামের সে ছবিতেও অখ্যাত অভিনেতাদের ভিড়ে ছিলেন প্রিয়ঙ্কা। তবে সে ছবিতে কিছুটা প্রশংসা পেলেও কেরিয়ারে বিশেষ ফায়দা হয়নি তাঁর।
পরের বছর ‘ক্যান্ডি টুইস্ট’ নামে আরও একটি ছবিতে দেখা গিয়েছিল প্রিয়ঙ্কাকে। চিত্রনাট্যের খাতিরে বেশ খোলামেলা পোশাকেই পর্দায় এসেছিলেন তিনি। পর্দা জুড়ে ভরপুর যৌনতা সত্ত্বেও প্রিয়ঙ্কাকে খ্যাতির আলোয় নিয়ে যেতে পারেনি সে ছবি।
ছোটপর্দায় নয়া অবতারে পা রেখেছিলেন প্রিয়ঙ্কা। ২০১৯ সালে কালার্স টিভিতে ‘গঠবন্ধন’ নামে একটি সিরিজ়ে পরীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কারণ সে সময় থেকেই পর্দায় তাঁর নামবদল ঘটে। প্রিয়ঙ্কা নামেই টেলিভিশনের দর্শকদের সামনে এসেছিলেন তিনি।
কেন নিজের নামবদল করলেন প্রিয়ঙ্কা? ইন্ডাস্ট্রিতে জোর জল্পনা, সংখ্যাতত্ত্ববিদের পরামর্শেই এমনটা করেছেন। যাতে কেরিয়ারে জোয়ার আসে।
২২৪ পর্বের দীর্ঘ যাত্রার পর ধীরে ধীরে টিভির দর্শকদের মধ্যে জায়গা পেতে শুরু করেছিলেন প্রিয়ঙ্কা। অনেকের মতে, এই সিরিজ় থেকেই তাঁর কেরিয়ারে জোয়ার এসেছিল।
শ্রুতি শর্মা এবং আবরার কাজিদের পাশে নজর কেড়েছিলেন প্রিয়ঙ্কা। সেই সঙ্গে তাঁকে ঘিরে দর্শকদের প্রত্যাশাও বাড়তে শুরু করেছিল।
‘গঠবন্ধন’-এর পর একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে একতা কপূরের ওয়েব সিরিজ়ে কাজের সুযোগ এসেছিল প্রিয়ঙ্কার। তবে ‘ইয়ে হ্যায় চাহতেঁ’ নামের সে সিরিজ় মুখ থুবড়ে পড়েছিল। মোটে এক মরসুমের পরেই টিভির পর্দা থেকে সেটি তা বিদায় নেয়।
অনেকের দাবি, ‘গঠবন্ধন’ নয়, প্রিয়ঙ্কার কেরিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে ‘উড়রিয়া’। অঙ্কিত গুপ্ত, ঈশা মালবীয় সোনাক্ষী বাত্রার সঙ্গে দাপটে কাজ করেছেন প্রিয়ঙ্কা। তেজো সাঁধুর চরিত্রে তাঁকে মনে ধরেছে অগণিত দর্শকেরা। এখনও পর্যন্ত ছোটপর্দায় প্রায় ছ’শো পর্ব কাটিয়ে ফেলেছে সিরিজ়টি।
গত বছরের অক্টোবর থেকে বোধ হয় কপাল ফিরতে শুরু করেছে প্রিয়ঙ্কার। ওই মাসের প্রথম দিন থেকে বিগ্ বসের ঘরে ঠাঁই নিয়েছেন প্রিয়ঙ্কা। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন শালিন ভানোত, শিব ঠাকরে, দলজিৎ কউরের মতো প্রতিযোগীরা।
আজকাল জোর জল্পনা, সকলকে পিছনে ফেলে ‘বিগ্ বস’-এর ঘর থেকে বিজয়ী হয়েই বেরোবেন প্রিয়ঙ্কা। আর তেমনটা হলে বলিউডে তাঁর দর যে বহু গুণ বেড়ে যাবে, এমন আশাই করছেন অনুরাগীরা।