ঘূর্ণিঝড় মোকা বঙ্গোপসাগরে ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করছে। ফলে তা স্থলভাগে যখন আছড়ে পড়বে, এই ঘূর্ণিঝড়ের ধ্বংসলীলা নিয়ে নানা রকম আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
মৌসম ভবন জানিয়েছে, এই মুহূর্তে মধ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে মোকা। সেখানেই ‘গোকুলে বাড়িছে’ সে। গত ৬ ঘণ্টায় ঘূর্ণিঝড় বঙ্গোপসাগরের ওই এলাকাতেই ধীরে ধীরে উত্তর দিকে এগিয়েছে।
উত্তরে অগ্রসরের সময় ঘূর্ণিঝড়ের গতি ছিল ঘণ্টায় ১৩ কিলোমিটার। আরও কিছু ক্ষণ উত্তর ও উত্তর পশ্চিম দিকে এগোবে মোকা। তার পর সাগরেও উল্টো দিকে বাঁক নেবে।
এই মুহূর্তে ঘূর্ণিঝড় মোকার অবস্থান পোর্ট ব্লেয়ার বন্দর থেকে ৫৩০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। এ ছাড়া, বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে মোকার দূরত্ব দক্ষিণ পশ্চিমে ৯৫০ কিলোমিটার। মায়ানমারের সিতওয়ে থেকে ৮৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে রয়েছে মোকা।
মোকার গতিবিধির দিকে সর্বক্ষণ নজর রেখেছে মৌসম ভবন। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের কর্তারাও নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি নিয়ে নানা বুলেটিন প্রকাশ করছেন।
মৌসম ভবন এবং হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, মোকা এই মুহূর্তে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসাবে উত্তরে এগোচ্ছে। মাঝসমুদ্রে বাঁক নিয়ে সে তার অভিমুখ পরিবর্তন করবে।
উত্তর পূর্ব দিকে ঘুরে যাবে মোকা। তার পর ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ এবং মায়ানমারের উপকূলের দিকে। আগামী রবিবার দুপুরে মোকা স্থলভাগে আছড়ে পড়তে পারে বলে জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভোরবেলা দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে মোকা জন্ম নিয়েছে। তার পর থেকে প্রায় ৭২ ঘণ্টা জলেই থাকার কথা ঘূর্ণিঝড়ের। সাগর থেকে সে শক্তিসঞ্চয় করছে। সর্বশক্তি নিয়ে স্থলভাগে আছড়ে পড়বে মোকা।
আবহবিদেরা জানিয়েছেন, যে কোনও ঘূর্ণিঝড়ই যত বেশি সময় ধরে জলভাগের উপরে অবস্থান করে, তত তার শক্তি এবং ধ্বংসক্ষমতা বেশি হয়। সমুদ্র থেকেই যাবতীয় শক্তি সঞ্চয় করে সে। মোকার ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে।
৭২ ঘণ্টা জলে থাকার ফলে মোকার শক্তিবৃদ্ধি এবং প্রভাব নিয়ে নানা আশঙ্কা জন্ম নিয়েছে। কতটা বিধ্বংসী চেহারা নেবে এই ঘূর্ণিঝড়, মোকার তাণ্ডবে কী কী হতে পারে, সে সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। .
তবে শনিবার ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি কিছুটা ক্ষয় হতে পারে বলে জানিয়েছে মৌসম ভবন। তা যদি না হত, তবে আরও বিধ্বংসী হতে পারত মোকা।
মৌসম ভবনের এখনও পর্যন্ত যা পূর্বাভাস, তাতে বলা হচ্ছে, রবিবার দুপুরে স্থলভাগে আছড়ে পড়ার সময় ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার। দমকা হাওয়ার বেগ পৌঁছতে পারে ১৭৫ কিলোমিটারেও।
মোকার প্রভাবে শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, ত্রিপুরা, মিজোরামে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ভারী বৃষ্টি হতে পারে নাগাল্যান্ড, মণিপুর এবং দক্ষিণ অসমেও।
ঘূর্ণিঝড় সমুদ্রকে উত্তাল রাখবে। সমুদ্রের উপর হাওয়ার বেগ কোথাও কোথাও হতে পারে ১৪৫ থেকে ১৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টাও। এর ফলে উপকূল এলাকায় উঁচু ঢেউ দেখা দিতে পারে।
বাংলার উপকূলে অবশ্য মোকার তেমন প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা দেখছেন না আবহবিদেরা। তবে মৎস্যজীবীদের গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যাঁরা গিয়েছেন, তাঁদেরও বৃহস্পতিবারের মধ্যেই স্থলভাগে ফিরে আসার কথা।
মোকার প্রভাব না পড়লেও সতর্ক পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসন। দিঘা, মন্দারমণি-সহ উপকূলীয় এলাকায় শুক্রবার সকাল থেকে সচেতনতার প্রচার শুরু করা হয়েছে। ইতিমধ্যে দিঘায় আটটি দল এবং ২০০ জন উদ্ধারকারী পাঠিয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ)। তৈরি রয়েছে উপকূলরক্ষীবাহিনীও। প্রস্তুতি নিয়েছে লালবাজার। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।
মোকার প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে মিজোরাম, ত্রিপুরা এবং দক্ষিণ মণিপুরে। প্রবল বর্ষণের ফলে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ছাড়া, বড় গাছ উপড়ে পড়া, চাষের জমিতে ক্ষয়ক্ষতি এবং বজ্রপাতে বিপদ হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন আবহবিদেরা। সেই অনুযায়ী আগে থেকে সব রকম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়েছে প্রশাসনকে।