দেশে বড়সড় হামলার ছক ভেস্তে দিল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ), মুম্বই এবং ইনদওর পুলিশ। হামলার আগেই সন্দেহভাজন জঙ্গি সরফরাজ মেমনকে ইনদওর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি এনআইএ একটি বেনামি ইমেল পায়। ইমেল প্রেরক নিজেকে তালিবান বলে ঘোষণা করেন। শুধু তাই-ই নয়, মুম্বইয়ে হামলা চালানোর হুমকিও দিয়েছিলেন। এর পরই মুম্বই পুলিশকে ইমেল করে সতর্কবার্তা পাঠায় এনআইএ।
এনআইএ-র সেই ইমেলে বলা হয়েছিল, মুম্বইয়ে এক সন্দেহভাজন জঙ্গি ঘুরে বেড়াচ্ছে। দেশে বড়সড় হামলার ছক কষছে। আধার কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট-সহ সরফরাজের তথ্য পাঠিয়ে মুম্বই পুলিশকে সতর্ক করে এনআইএ। তদন্তে নেমে মুম্বই পুলিশ জানতে পারে সরফরাজ ইনদওরে রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ইনদওর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা।
এর পরই তল্লাশি চালিয়ে ইনদওর থেকে গ্রেফতার করা হয় সরফরাজকে। মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র খোদ সরফরাজের গ্রেফতারির কথা ঘোষণা করেছেন। ইনদওরের চন্দননগর থানা এলাকার গ্রিন পার্ক কলোনি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে সরফরাজকে।
কে এই সরফরাজ? পুলিশ সূত্রে খবর, মুম্বইয়ে জন্ম সরফরাজের। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন তিনি। সরফরাজের বাবা একটি বেকারিতে কাজ করতেন। সরফরাজ ইনদওরের খজরানায় একটি ওষুধের দোকান চালাতেন। বেশ কয়েকটি দেশের ভাষা জানেন তিনি।
পুলিশ সূত্রে খবর, সরফরাজ স্প্যানিশ, ইংরাজি এবং চিনা ভাষা জানেন। ১২ বছর হংকংয়ে ছিলেন। বেশ কয়েক বার চিনেও গিয়েছিলেন। সরফরাজের এক ভাই কুয়েতে এবং অন্য জন ভোপালে থাকেন।
পুলিশের কাছে সরফরাজ দাবি করেছেন, তাঁর ওষুধের দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বোনের মৃত্যুর পর মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। তার পরই হংকংয়ে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে ১২ বছর ছিলেন।
পুলিশ জানিয়েছে, সরফরাজের পাসপোর্টে ১৫ বার হংকং এবং চিন যাওয়ার প্রমাণ মিলেছে। ২০০৭ সালে ইনদওরের খজরানায় থাকতেন। এর পর সেই বাড়ি বিক্রি করে গ্রিন পার্ক কলোনিতে চলে আসেন।
জেরায় পুলিশ জানতে পেরেছে, ওষুধের দোকান ছাড়াও সরফরাজের মোবাইলের একটি দোকানও আছে। ব্যবসার সূত্রে কখনও কলকাতা, কখনও মুম্বইয়ে তাঁকে আসতে হত বলে একটি সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে। মায়ের মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন সরফরাজের বাবা। এই ঘটনায় বিরক্ত ছিলেন সরফরাজ এবং তাঁর দুই ভাই।
এনআইএ সূত্রে খবর, মেনল্যান্ড চায়না এবং পাকিস্তানে গিয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন সরফরাজ। আইইডি কী ভাবে বানাতে হয়, কী ভাবে বিস্ফোরক তৈরি করতে হয়, অস্ত্র প্রশিক্ষণের পাশাপাশি এই প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন তিনি।
পুলিশ সূত্রে খবর, হংকংয়ে থাকাকালীন এক চিনা মহিলাকে বিয়ে করেন তিনি। কিন্তু তাঁর সঙ্গে সমস্যার পর ভারতে ফিরে আসেন। এখানেও চারটি বিয়ে করেছিলেন। সরফরাজের সব স্ত্রীকেই জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
পুলিশের দাবি, তালিবানের সঙ্গে যোগ রয়েছে সরফরাজের। তালিবানের কাছ থেকে হামলার প্রশিক্ষণ নিয়ে ভারতে এসে জঙ্গি কার্যকলাপ শুরু করেন। দেশের একাধিক রাজ্যে হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল তাঁর।